‘শালা একটা কুত্তার বাচ্চা!’
‘আরে কাকে বলছিস?’
‘তোকে না।’
‘আমাকে না তো বুঝলাম কিন্তু কাউকে না কাউকে তো বলছিস।’
‘হ্যাঁ বলছি একজনকে। আমার পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে এখন দিতে চায়না। বলে এগুলো নাকি এখন দিতে পারবে না।’
‘তা তুই কি বলেছিস?’
লাড্ডু জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। ঝমঝম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সবাই রাস্তা ছেড়ে পালাচ্ছে যেদিকে পারছে। একটু ঝড়ো হাওয়াও আছে সাথে। সামনের গাছগুলো দুলছে। সামনের মোটা ইলেকট্রিক তারের ওপর কয়েকটা কাক বসেছিল। বৃষ্টি নামতেই উড়ে পালালো। ‘আমি কিছু বলিনি। একটা কুত্তার বাচ্চাকে কি বলবো আমি?’
‘তোর উচিত ছিল তাকে সামনে থেকে এই গালিটা দেয়া যাতে সে নিজেকে ঘৃনা করতে শেখে।’ বললো চপল। ‘তুই গিয়ে কথাটা তাকে বলবি।’
‘ঠিক আছে, দেখা যাক।’ লাড্ডু আরামদায়ক সোফাটার ওপর বসলো। ‘এক কাপ চা আনতে বল তোর কাজের মেয়েটাকে। যে বৃষ্টি শুরু হলো যাবো কিকরে তাই ভাবছি।’
চপল কাজের মেয়েটাকে ডেকে দু’কাপ চা দিতে বললো। তারপর আপনমনে নিজের কাজ করতে লাগলো টেবিলে। দশ মিনিট পর কাজের মেয়েটা দু’কাপ চা রেখে গেল টেবিলে।
লাড্ডু নিজের চায়ে চুমুক দিল। হঠাৎ রাস্তার ট্রান্সফর্মারটা বিকট শব্দে আর্তনাদ করে উঠলো। একই সাথে রুমটা অন্ধকার হয়ে গেল। কারেন্ট চলে গেছে।
‘এই যা, এই অন্ধকারে কাজ করি কিভাবে?’ চপল উঠে পড়লো টেবিলটা থেকে। ‘আচ্ছা তুই বস, আমি গোসলটা সেরে আসি।’
লাড্ডু মাথা নাড়লো। চায়ের কাপটা শূন্য করে নামিয়ে রাখলো টেবিলে। খোলা জানালা দিয়েঠান্ডা বাতাস আসছে হু হু করে। ও আরামে চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দিয়ে বসলো। এই গরমে যে এসি ছাড়া এমন ঠান্ডা বাতাস পাওয়া গেছে সেই তো অনেক। উফ, গরমে প্রানটা একেবারে গলার কাছে উঠে এসেছিল। পকেটে হাত দিতে সিগারেটের প্যাকেটটা হাতে ঠেকলো। খুশি মনে প্যাকেটটা বের করে দেখলো একটাও সিগারেট নেই তার ভেতর। মনে মনে একই রকম একটা গালি ঝেড়ে লাড্ডু প্যাকেটটা জানালা দিয়ে ছুঁড়ে দিল বাইরে। তারপর মাথার পেছনে হাত রেখে চোখ বন্ধ করলো। কিন্তু পেটটা টনটন করছে। সেই সকালে বাথরুম সেরে ঘর ছেড়ে বেরিয়েছিল, এখন পর্যন্ত বাথরুম সারা হয়নি। প্রশ্রাব জমে পেটটা একেবারে ফুলে উঠেছে। অস্থির লাগছে ভীষন। চপলের রাথরুমটায় যাওয়া যেত! মনে পড়লো চপল বাথরুমে গোসল করছে। ওদের বাড়িতে একটাই বাথরুম। যে করে হোক চেপে বসে থাকতে হবে।
কি আর করবে, উপায় নেই। লাড্ডু প্রশ্রাব চেপে সোফায় হেলান দিয়ে বসে থাকে বাইরের দিকে তাকিয়ে। গতরাতে ভালো ঘুম হয়নি। এখন চোখ বেশ ভার ভার বোধ হচ্ছে। বাড়ি গিয়ে আচ্ছা করে ঘুম দিতে হবে দুপুরের খাবার খাওয়ার পর। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে। খোলা জানালা দিয়ে দুরের গাছগুলোর হেলে পড়া দেখতে ভীষন ভালো লাগছে।
বৃষ্টি থেমে যাবার পর আধাঘন্টা পেরিয়ে গেছে। চপল এখনও বেরুচ্ছে না বাথরুম থেকে। লাড্ডুও চেঁচিয়ে ডাকতে পারছেনা। ভেতরের ঘরে ওর মা, ওর দুটো বোন আছে। চপলের ছোট বোনটার প্রতি আবার লাড্ডুর একটু দুর্বলতা আছে। তাই এখানে জোরে কথা বলা বা কোন উদ্ভট আচরন করা যাবেনা। এদিকে পেট ফেটে যাচ্ছে।
‘দুর! উঠে পড়লো লাড্ডু। এখানে প্রশ্রাব করার দরকার কি? বাড়ি যাবার পথে সেরে নেয়া যাবে। চপল এসে দেখবে সে নেই। তাতে কোন সমস্যাও নেই। দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করার সিস্টেম আছে। সেই সিস্টেম মেনে দরজাটা বন্ধ করে লাড্ডু সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে। ভেজা পিচঢালা রাস্তাটা চকচক করছে একেবারে। কি সুন্দরভাবে প্রকৃতি সব পরিস্কার করে দিয়ে গেছে!
লাড্ডু বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলো। কিন্তু প্রতি পদে তার পেটটা মুচড়ে উঠছে। মনে হচ্ছে পেটের ভেতর থেকে প্রশ্রাবগুলো ফেটেই বেরিয়ে আসতে চাইছে। আল্লাই জানেন কিভাবে মেয়েমানুষগুলো দশ মাস দশ দিন বাচ্চা পেটের ভেতর চেপে রাখে।
চারপাশে তাকাতে লাগলো লাড্ডু। কোথায় যাওয়া যায়। আশেপাশে কোন পাবলিক টয়লেট নেই যে সে সেখানে গিয়ে প্রাকৃতিক কাজটা সারবে। শেষ পর্যন্ত পেয়ে গেল সে জায়গাটা। একটা ডাস্টবিনের ঠিক পেছনে চমৎকার একটা দেয়াল। একেবারে নতুন রঙ করা হয়েছে দেয়ালে। সম্ভবত কোন রাজনৈতিক পার্টি তাদের কলাম লিখবে এখানে। একেবারে ফাস্টক্লাস প্রশ্রাব করার জায়গা, মনে হয় খোদা মিলিয়ে দিয়েছে তাকে। একটা শান্তির দম ছেড়ে সেদিকে এগিয়ে গেল লাড্ডু। প্যান্টের চেইনটা খুললো। তারপর আস্তে ধীরে ছাড়তে লাগলো নতুন রঙ করা দেয়ালের ওপর। আহ কি শান্তি! পৃথিবীতে এর চেয়ে শান্তির কিছু আছে নাকি কে জানে। একই সাথে একটা ডিজাইন আঁকাও হয়ে যাবে দেয়ালটার ওপর। লাড্ডু একটা মুখ আঁকতে চাইলো সেখানে।
আচমকা পাশ থেকে কেউ ঘেউ করে উঠলো। লাড্ডু পাশে তাকিয়ে চমকে উঠলো একেবারে। একটা হলুদ রঙের ঘেয়ো কুকুর এক ঠ্যাং তুলে তার ঠিক পাশে দাঁড়িয়েই প্রশ্রাব করছে একই দেয়ালের ওপর। লাড্ডু আরও অবাক হলো যখন দেখলো কুকুরটা তার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে।
কোনমতে প্রশ্রাব শেষ না করেই তার যন্ত্রটা চেইনের ভেতর ঢোকালো লাড্ডু। সরতে যাবে কুকুরটা তার পথরোধ করে দাঁড়ালো। তারপর মানুষের গলায় বললো,‘প্রশ্রাব যে করলা, চাইয়া দেহ তোমার প্রশ্রাব গড়াইয়া রাস্তায় চইলা আসছে। এহান দিয়া মানুষ চলবো না? তাকায় দেহ আমি কেমনে করসি। আমারে তো কুত্তা বইলা গালি দাও। তুমি আর আমি তো একই জাগায় হিসি করলাম। তাইলে তুমিও আমার লাহান কুত্তার বাচ্চা।’
আঁৎকে উঠে ঢোক গিলল লাড্ডু। তাই দেখে কুকুরটা আরো জোরে হাসলো,‘হুনো মিয়া, তোমরা হইলা গিয়া মানুষের বাচ্চা। রাস্তায় মুতবা কেন? তোমাগো কত সুন্দর টয়লেট আসে, বাথরুম আসে হেইহানে এইসব কাম করবা। এইটা হইলো আমার মুতনের জাগা। ঠিক আছে তুমি আমার জাগায় তোমার কাম করসো ভালা কথা। দুই ট্যাকা দ্যাও।’
লাড্ডু ঢোক গিলে বললো,‘টাকা দিয়ে তুমি কি করবে?’
‘ওই মিয়া ট্যাকা দিয়া কি করে তোমারে শিখাই দ্যাওন লাগবো? তুমি আমার জাগায় মুতবা আর ট্যাকা দিবানা হেইডা কেমুন কথা?’ কুকুরটা আরো জোরো জোরে বললো।
লাড্ডু পকেট হাঁতড়ে দেখে তার কাছে কোন টাকাই নেই। তাই দেখে কুকুরটা যেন মজা পায় আরো। বলে,‘হুনো মিয়া, তুমি আজ থেইকা আর কোন মানুষরে কুত্তার বাচ্চা বইলা গালি দিবানা, ঠিকআসে?’
লাড্ডু ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ে। ‘তুমি দেহ,’ কুকুরটা আবার বলে,‘আমরা না খাইয়া থাহি। তোমরা কতো মজার মজার জিনিষ খাও। আর আমরা সারাদিন খালি পেটে ঘুরি। তোমরা দিলে খাই নাইলে খালি পেটে রাইতে ঘুমাইতে হয়। তুমি চিন্তা করসো কুকুরই হইলো একমাত্র প্রানী যে মানুষের উপরে পুরাপুরি নির্ভরশীল। অন্য সব প্রানীই নিজের খাবার নিজে খুঁইজা নিতে পারে, কিন্তু মানুষ না দিলে কুকুর নিজে কোন খাবার খাইতে পারেনা। মানুষের উচ্ছিষ্টের উপরে কুকুররা বাঁইচা থাকে। তোমরা ‘কতো বড়ো বড়ো কথা কও, অথচ দেহ তোমরা কি কখনও চিন্তা করসো তোমরা যহন লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলতাসো, কোটি টাকার গাড়ি চড়তাসো, মদ খাইতাসো, শত কোটি টাকা দিয়া পঞ্চাশ তলা বাড়ি বানাইতাসো তহন একটা কুকুর তোমার সামনের রাস্তায় না খাইয়া শুইয়া আসে?’
লাড্ডু মাথা নাড়ে। না, সেও কখনও এমন করে চিন্তা করেনি।
‘তোমাগো রাজনীতিবিদরা চিল্লায় গলা ফাটাইয়া ফেলায়।’ কুকুরটা দাঁতে দাঁত চিপে বললো,‘হ্যারা তোমাগোরে মিথ্যা সান্তনা দিয়া দ্যাশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে। হ্যারা যেমনে ট্যাকা চিবায় তেমনে আমরা হাড্ডিও চিবাইতে পারিনা। আর তোমরা মানুষরে কও কুত্তার বাচ্চা। আরে তোমগো তো কওন উচিৎ রাজনীতিবিদের বাচ্চা। গালি দিবা ঘুষখোরের বাচ্চা, মিথ্যাবাদীর বাচ্চা, মানুষের বাচ্চা, চোরের বাচ্চা, ডাকাতের বাচ্চা। তা না কইরা তোমরা গালি দাও আমাগোর জাতিকে নিয়া। এইটা কি ঠিক?’
লাড্ডু মাথা নাড়ে এপাশ ওপাশ। একদম ঠিক নয়।
দেহ, বিলাইরে তোমরা অনেক উপরে তুইলা রাখসো। কিন্তু বিলাই কি করে? তোমগো খাবার চুরি কইরা খায়। বিলাই তোমগোরে অভিশাপ দেয় য্যান তোমরা অন্ধ হইয়া যাও আর হ্যায় তোমগো খাওন চুরি কইরা খাইতে পারে। হ্যার পরও তোমরা মানুষরে বিলাইয়ের বাচ্চা বইলা কঠিন গালি দাওনা। তোমগো কঠিন গালি হইলো কুত্তার বাচ্চা, ক্যান উত্তর দাও?’
লেজ নাড়তে ইচ্ছে হলো লাড্ডুর। অন্তত সে যদি লেজ নাড়তে পারতো তবে এই কুত্তাটা তাকে কামড় না দিয়ে ছেড়ে দিতে পারতো। এখন তো এমনভাবে দাঁত খিচোচ্ছে যে ভাব কামড় দিয়ে বসবে পাছায়।
‘পারবানা, কোন উত্তর দিতেই পারবানা। কারন তোমরা মানুষরা খুব স্বার্থপর বুঝলা? কুকুরকে তোমরা কও কুত্তা। আরে কুত্তা তো হিন্দী উর্দু শব্দ। তোমরা দেশ স্বাধীন করসো বাংলার কথা ‘বলবা বইলা, অহন হিন্দী উর্দু কও ক্যান। কইবা কুকুরের বাচ্চা। যখন তোমরা কুত্তা কও তখন আয়নার মইদ্যে তাকাইয়া দেহ তোমার মুখটা কেমুন দেহায়। দেখবা মুখটা বাঁইকা গুলিস্থানের পাবলিক টয়লেটের লাহান লাগতাসে।’
লাড্ডু অনেক কষ্টে বলে,‘জ্বি স্যার।’
কুকুরটার মুখটা আনন্দের হাসিতে ভরে যায়। লেজ নাড়তে থাকে সে সুখে। বলে,‘এতোদিন পর একটা সুন্দর শব্দ শুনলাম। এইবার আমার মুখ দিয়ে শুদ্ধ কথা বেরুবে। লাড্ডু বাবাজি, আমার কাছে গতকালের একটা গরুর শুকনো হাড্ডি আছে, খাবে?’
লাড্ডুর গলা দিয়ে বমি উঠে আসে প্রায়। কোন মতে মাথা নাড়ে সে।
‘ওহ তোমরা তো আবার কুকুরের মুখের জিনিষ খাওনা।’ শুদ্ধ ভাষায় বলে কুকুরটা।‘ঠিকআছে, যাও বাকি প্রশ্রাবটা সেরে নাও। আমি জানি আমাকে দেখে তোমার প্রশ্রাব আবার ভেতরে ঢুকে গেছে। এবার শান্তিমতো বাকি কাজ সারো তো।’
লাড্ডু এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তার আগের স্থানে ফিরে যায়। তারপর প্যান্টের চেইন খুলে আরামে ছাড়তে থাকে দেয়ালের ওপর। ওদিকে কুকুরটা সুখের হাসি হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে। আবার বৃষ্টি শুরু হলো নাকি? মুখের ওপর পানি পড়ছে কিসের?
আচমকা কানের কাছে আজানের শব্দ শুনে সচেতন হলো লাড্ডু। আরেনা, আজান নয়, কেউ চিৎকার করছে ক্রমাগত,‘ভাইয়া, ও ভাইয়া, একি করছে দেখে যাও!’
লাড্ডু যেন অচেতন থেকে সচেতন হলো। তার মুখের ওপর পানি ঢালছে কে? ঘুমঘুম আবেশে চোখ খুললো লাড্ডু। পায়ের দিক থেকে পিচকারী দিয়ে পানি এসে ওর চোখ মুখ ভিজিয়ে দিচ্ছে, সেই সাথে ভিজছে চপলের সোফা, দরকারী কাগজপত্র, ল্যাপটপ, মোবাইল, টেবিল। এক নিমিষে পুরোপুরি ঘুম থেকে জেগে উঠলো লাড্ডু গরম পানির ফোয়ারায়। তার প্যান্টের চেইন খোলা। সেখান দিয়ে পিচকারীর মতো পানি বেরিয়ে এসে সোজা ওর মুখ ভেজাচ্ছে। আর ওর সামনে মুখে হাত চাপা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চপলের দু’দুটো বোন। তাদের চোখে লজ্জা আর মহা বিশ্ময়।
বৃষ্টি আর ভেজা বাতাসে কখন যে ও ঘুমিয়ে পড়েছিল আর স্বপ্নে দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্রাব করছিল। আসলে তখন সে চপলের সোফায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চেপে রাখা প্রশ্রাব আরাম করে ছাড়ছিল।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
হাসতে হাসতে আমার পেটে ব্যথা হয়ে গেছে ভাই আপনার গল্প পড়ে। প্রথম থেকে কিছুই বোঝা যায়নি কি হচ্ছে। অসাধারন একটা গল্প। অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন একটা গল্পর জন্য।
Replyসায়মা
৫২২ ওয়ারী, প্রান্তনিবাস
ঢাকা
এটা দারুণ হাসির।
Replyধন্যবাদ Srila, তোমার মুল্যবান কমেন্টের জন্য। আরও মজার আপডেট পেতে ওয়েবসাইটটাকে ফলো দিয়ে রেখ।
Replyঅন্ক ধন্যবাদ সায়মা
Replyহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা
Reply