এক রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ইউশা তার বাবার সাথে বসে বসে টিভিতে ডিসকোভারী চ্যানেলে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম দেখছিলো। এটা সম্পূর্ণটাই ছিলো বিভিন্ন প্রাণীদের নিয়ে একটা প্রামাণ্য অনুষ্ঠান। সে অবাক বিস্ময়ে দেখছিলো যে, একেকটা প্রাণী কতো জটিল এবং প্রতিকুল পরিবেশে সংগ্রাম করছে বেঁচে থাকার জন্য।যখন সে বিছানায় ঘুমাতে গেলো, শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছিলো যা দেখলো সে সম্পর্কে। কল্পনায় সে তাকে ঐ প্রাণীদের মাঝে দেখলো। তখন হঠাৎ করেই তার মনে হলো, সে এমন এক জায়গায় রয়েছে যেখানে তার চারপাশে তুষারে ভর্তি। সে উদ্দেশ্যহীনভাবে চারদিকে ঘুরতে লাগলো।একটু পরেই সে সুন্দর, কোমল ও মিষ্টি একটা সম্ভাষণ শুনতে পেলো। ‘স্বাগতম ইউশা। আমাদের ভূবনে তোমাকে স্বাগতম।’তুমি কে? ইউশা জিজ্ঞেস করলো।সে উত্তর দিলো, আমি পেঙ্গুইন।যে প্রাণীটি উত্তর দিলো তাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছিলো এবং মনে হচ্ছিলো যেনো সে আইনজীবিদের গাউনের মতো কালো সুন্দর ডিজাইন করা পোশাক পরিধান করে আছে। ইউশা মনে করার চেষ্টা করলো, আসলে কী ঘটেছিলো। তার পরিষ্কার মনে পড়লো আজ রাতে শোয়ার আগে যখন সে বাবার সাথে বসে টিভিতে ডকুমেন্টারী দেখছিলো সেখানে পেঙ্গুইনদের নিয়ে একটি অংশ ছিলো। হ্যাঁ, হ্যাঁ তুমি ঠিকই বলেছো, ইউশা খুশির সাথে জবাব দিলো। আমি আজ রাতেই টিভিতে তোমাদের লাইফ নিয়ে একটা অনুষ্ঠান দেখলাম। এটা আসলেই খুব একটা ঠান্ডা জায়গা। তোমাদের কী শীত লাগে না?পেঙ্গুইনটি হেসে জবাব দিলো, এটা দক্ষিণ মেরু। এখানে তাপমাত্রা কমতে কমতে এতো নিচে নামে যে তা মাইনাস ১৩০ ডিগ্রী ফারেনহাইট (- ৮৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস) পর্যন্ত পৌঁছায়। এতো কনকনে ঠান্ডা আবহাওয়া অনেক প্রাণীকে মেরে ফেলে অর্থাৎ, অতিরিক্ত ঠান্ডার জন্য অনেক প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না। কিন্তু দেখো, কী অবাক করা ব্যাপার! আমাদের কোনো সমস্যাই হয় না। খুব অবাক হচ্ছো, তাই না?আসলেই তাই। আমি ভাবছি এটা কীভাবে সম্ভব?শোনো, এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র আল্লাহ্ তায়ালা আমাদেরকে বিশেষ কিছু ক্ষমতা দিয়েছেন সে জন্য। আমাদের চামড়ার নিচে চর্বির মোটা ও পুরু একটা স্তর আছে। এই চর্বিই আমাদেরকে অতিরিক্ত ঠান্ডার মধ্যেও সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখে, যেটা অন্য অনেক প্রাণীর নাই। যখন শীত আসে তখন আমরা উপকূল বরাবর আরো দক্ষিণে চলে যাই।ইউশার মনে পড়লো, তার মানে তোমরা তখন মাইগ্রেট করে অন্য জায়গায় চলে যাও? আচ্ছা, তোমাদের আর অন্য কী কী আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে যেটা আমি এখনও জানি না? এই যেমন ধরো, আজকে আমি যে ডকুমেন্টারী দেখলাম সেখানে বললো, তোমাদের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার আগে পর্যন্ত তোমরা ডিমের খুব বেশি । যত্ন নাও। তুমি কী এ ব্যাপারে আমাকে কিছু বলবে?পেঙ্গুইনটি হেসে বললো, অবশ্যই। অন্য কিছু প্রাণীর মতোই পুরুষ প্রজাতির পেঙ্গুইন বেশির ভাগ সময় ডিমে তা দেয়। জানো, তারা স্ত্রী পেঙ্গুইনের চেয়েও বেশি সময় ডিমে তা দেয়। তারা এ কাজটা করে দীর্ঘ ৬৫ দিন ধরে মাইনাস ২২ ডিগ্রী ফারেনহাইট (মাইনাস ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) তাপমাত্রায়। শুধু তা-ই নয়, এ দীর্ঘ সময় তারা এক মুহুর্তের জন্যেও ডিম ছেড়ে যায় না। আর নতুন যে বাচ্চাটা জন্ম নেবে তার জন্য এ সময়ে মা পেঙ্গুইন যায় খাবারের খোঁজে।জন্ম নেয়ার পর প্রথম এক মাস বাচ্চা পেঙ্গুইন তারা বাবা-মায়ের পায়ের ওপর থাকে। যদি তারা তাদেরকে দুই মিনিটের জন্যেও রেখে অন্য কোথাও যায় তাহলে তারা বরফে জমে মারা যাবে।ইউশা ঘাড় নেড়ে বললো, কী সাংঘাতিক! তার মানে এ সময়টা তোমাদেরকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়। কিন্তু এতোটা কীভাবে সম্ভব? যিনি সৃষ্টি করেছেন সেই আল্লাহই সকল প্রাণীকে সে জ্ঞান দিয়ে দিয়েছেন যে, তাকে কীভাবে কী করতে হবে। আমরা শুধু সেটুকুই করি যা আল্লাহ আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন। ইউশা বললো, তুমি ঠিক বলেছো। আমাদের মহান স্রষ্টা তাঁর প্রত্যেকটা সৃষ্টিকে ঠিক ততোটুকুই জ্ঞান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যেটুকু তার জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজন। সে কোথায় থাকবে আর কীভাবে তার খাবারের খোঁজ করবে সবই তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন। তোমাদের জীবনের দিকে তাকালেই এ বিষয়টা খুব ভালো করে বুঝা যায়।পেঙ্গুইনটা এবার ঘুরে দাঁড়ালো। তুমি অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যেও আরো অনেক অদ্ভুত এবং মজার মজার সব উদাহরণ দেখতে পাবে। তারা প্রত্যেকেই কিন্তু আল্লাহর দেয়া এসব জ্ঞানের জন্য তাঁর কাছে শুকরিয়া জানায়।আমি আজ আর দেরি করতে পারছি না। অনেকক্ষণ হয়ে গেলো। এবার আমাকে অবশ্যই যেতে হবে। আমার পরিবারের সদস্যরা সব আমার জন্য অপেক্ষা করছে। হঠাৎ ইউশা সুন্দর একটা মিউজিক শুনতে পেলো। পরক্ষণেই বুঝতে পারলো, এখন সকাল হয়েছে এবং তার টেবিল ঘড়িতে এ্যালার্ম বাজছে। তার মনে হলো, ঘুমের মাঝেই সে খুব সুন্দর একটা ভ্রমণ করে এসেছে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)