প্রিয় শ্যালক তৌহিদ বললো দুলাভাই পর্তুগালে আর বেশি দিন নাই ইউরোপের বাইরে হয়তো অন্য কোথাও ট্রান্সফার করে দিবে সুতরাং আমি থাকতে থাকতেই পর্তুগাল বা পারলে ইউরোপের কয়েকটা দেশ ঘুরে যান। ঢাকায় তৌহিদের সাথে দেখা হলেই বলতাম তুমি শালা যেখানে যেখানে পোষ্টিং পাবে আমি সেখানে সেখানেই যাব। তোমার পিছু ছাড়বো না।ফলে তৌহিদের এই অফারটি এড়িয়ে যেতে মন চাইছিল না। বললাম ব্যবস্থা কর তোমার বুবু ভাগনে ভাগনি সহ যাব।
শেষ পর্যন্ত তৌহিদের ইনভাইটেশানে চারজনের পুরো পরিবারের সেনজেন ভিসাটা হয়েই গেল। অবশ্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফ্রান্স এ্যামবেসিতে জমা দিয়েই ভিসা পেয়েছি। তৌহিদ যেহেতু পর্তুগালে অবস্থান করছে সেহেতু ওখানেই যেতে হবে। ভাবলাম সেনজেন ভিসা পেলাম ২৭টা দেশ ঘুরতে পরবো তবে কেন শুধু একটা দেশ ঘুরবো। এবার খোঁজা শুরু হলো কোন দেশে ঘনিষ্ট স্বজন বাস করে। পেয়েও গেলাম ভাস্তেকে। আমার কাজিনের ছেলে ইটালিতে বসবাস করছে স্ত্রী ও মাকে নিয়ে। ভাস্তেকে বললাম বাবা ইটালিতে আসতে চাই কদিনের জন্য তো হোটেল ভাড়াতো অনেক পড়বে তা তোমার বাসায় কি দু একদিন থাকা যাবে? ভাস্তে রেগে গিয়ে বললো কি বলেন কাকা দু এক দিনতো থাকা যাবে না আপনাকে কমপক্ষে দশদিন থাকতে হবে।আমিতো আপ্লুত। বললাম ভিসা পেয়েছি ৩০ দিনের শুধু ইটালিতে দশ দিন থাকলেতো হবে না। ভাস্তে বললো আগে আসেনতো তারপর দেখা যাক।
তৌহিদকে বলতেই সে বললো যেখানেই যান পর্তুগালে ১৫ দিন থাকতে হবে। এবার ভাবলাম তাহলে রওনা দেই প্রথমে ইটালি পরে পর্তুগাল।আমার বন্ধুবর শাহিদুলের ট্রাভেল এজেন্সি সিটিকম ট্রাভেলে যেয়ে টিকেট কিনলাম। শাহিদ ভাই সর্বোচ্চ ডিসকাউন্টে টিকেটের ব্যবস্থা করলো। টিকেট আনতে গেলে শাহিদ ভাইয়ের স্টাফ বললো এখন নিয়ম হয়েছে যে দেশের এ্যাম্বেসি থেকে ভিসা নিবেন সেই দেশ হয়ে অন্যদেশে যেতে পারবেন। শ্যালককে জিজ্ঞেস করতেই সে বললো না এমন কোন নিয়ম নেই। কিন্তু স্টাফ ভদ্রলোক অনড় ।
সেদিন শাহিদ অফিসে ছিল না। তো কি করা প্রায় একই মুল্যে প্যারিস হয়ে যেতে পারছি তাছাড়া আমার মেয়ে আরশীর প্রচন্ড ইচ্ছা প্যারিস দেখা আমারও ইচ্ছে তাই তো কেটে ফেললাম সামান্য কয়েকটা টাকা বেশি দিয়ে। রিটার্ন টিকেট নিলাম ঢাকা- প্যারিস, লিসবন -ঢাকা। এখন খোঁজা শুরু হলো ফ্রান্সে পরিচিত আত্মীয় কে আছে পেয়েও গেলাম আমার ভায়রা আরাফাতের ছোট কাকা মি.আনোয়ার ওখানে বাস করছে টানা দশ বছর। ফেসবুকে তাঁকে খুঁজে এড করে কথা বলা শুরু করলাম।আরাফাত বলেছিল অসাধারন ভাল মানুষ কথা বলে দেখলাম ভালোর সাথে অসাধারন আন্তরিকও। ভিসা পাবার পর থেকেই ফ্রান্সে আনোয়ার কাকা ইটালিতে সজীবের সাথে প্রতিদিনই ম্যাসেঞ্জারে কথা চলছে অবিরত আর তৌহিদের সাথে যখন তখন। যেহেতু প্যারিসে প্রথমেই যাব তাই আনোয়ার কাকাকে হোটেল বুকিং দিতে বললাম। প্যারিসে আনোয়ার কাকা ও কয়েকজন যুবক মিলে এক ফ্লাট ভাড়া করে বসবাস করে।ফলে আমাদের জন্য হোটেল ঠিক করলেন।
তবুও আমি একটু আশন্কায় ছিলাম যদি হোটেল ঠিকমত না মেলে মহা বিপদে পড়ে যাব।আনোয়ার কাকা আমাকে আশ্বস্ত করলেন। আমরা ২০ আগষ্ট টার্কিশ এয়ারে রওনা দিলাম। ঢাকা এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন পার হয়ে বোর্ডিং পাস নিয়ে অপেক্ষা করছি কখন প্লেনে উঠবো। ভোর পাঁচটায় প্লেনে উঠলাম প্লেন উড়লো ঠিক ছটা কুড়িতে। সিটে বসতেই আনান ঘুমিয়ে পড়লো।ছেলাটা গতরাতে একটুও ঘুমায়নি।আমরা কেউই ঘুমাইনি কিন্ত ওতো মাত্র আট বছরের ছেলে।উনিশ তারিখ রাত সাড়ে বারটায় বাসা থেকে বের হয়েছি ভ্রমনের উত্তেজনায় সারাদিন সারারাত ব্যস্ততার মধ্যে কেটে গেছে এখন সবাই গা এলিয়ে দিয়ে সিটে বসলো।সিট বেল্ট বেধে বসতেই প্লেন ছেড়ে দিল। একটু পর আকাশে উড়লো। জানালা দিয়ে দেখলাম নীচের বাড়ি ঘর ছোট ছোট কাগজের বক্সের মত। সামনের সিটের পেছনে আমার সামনে স্ক্রিনে দেখলাম সাত হাজার মিটার উপরে আছি। একটা সো সো আওয়াজ পাচ্ছি কানে। ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়লাম।একটু পর মেয়েলি কন্ঠে ইংরেজীতে কিছু কথা শুনে ঘুম ভাংলো। দেখি এয়ার হোস্টেস খাবার নিয়ে এসেছে।তাড়াতাড়ি সামনে ভাজ করে রাখা ট্রেটা মেললাম এয়ার হোস্টেস খাবারের প্যাকেট রেখে মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল। প্যাকেট খুলে হাইজেনিক খাবার দেখে মনটা ভরে গেল। খাওয়ার পর জুস খেলাম। খানিকটা পর কফি খেয়ে ঘুম। ঘন্টা চারেক পর আবার হালকা নাস্তা ও কফি খেলাম। স্থানীয় সময় চারটায় প্লেন ইস্তান্বুলে ল্যান্ড করলো। ছটা থেকে চারটা মোট দশ ঘন্টা প্লেন উড়েছে মনে হলেও আসলে সাত ঘন্টা উড়েছে। বাংলাদেশের সাথে তুরুস্কের সময়ের পার্থক্য তিন ঘন্টা এবং আটোমেটিকভাবে সময় এ্যাডজাস্ট হয়ে যায় বিশেষ করে মোবাইলে ও প্লেনের ঘড়িতে। ইস্তাম্বুলে চার ঘন্টা ট্রানজিট। ভিতরেই বসে থাকলাম। প্যারিসের প্লেন কত নাম্বার প্যাসেজ ওয়ে থেকে ছাড়বে জেনে নিয়ে লাউঞ্জে বসলাম।
এরপর আমি আর আনান ঘুরে ঘুরে সমস্ত এয়ারপোর্ট দেখলাম তারপর আমরা হ্যান্ড ব্যাগগুলো পাহারা দিলাম আর ডলি আরশী এয়ারপোর্ট ঘুরে দেখলো। বিশাল বড় এয়ারপোর্ট প্লেনের অভাব নেই যাত্রীরও অভাব নেই। এত যাত্রী তবুও হৈচৈ কম। ঠিক চার ঘন্টা পর প্যারিসের পথে বদলি প্লেন ছাড়লো। আবার প্লেনের ভিতর হোস্টেসের দেওয়া খাবার খেয়ে ঘুম।স্থানীয় সময় ছটা ত্রিশ মিনিটে প্যারিস সিডিজি এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলাম।ধীরে ধীরে প্লেন থেকে নেমে এয়ারপোর্টের বাসে উঠে চলে এলাম এক্সিট এরিয়ায়। সবচেয়ে অবাক লাগলো সারা এয়ারপোর্টে ইংরেজি লেখা নেই। ইংরেজি অক্ষরে ফ্রেন্স ল্যাঙ্গুয়েজ।শুধু এ্যারো চিহ্ন দেখে বের হলাম। এ্যারো চিহ্নের পাসে লেখা sorte পরে শুনেছি sorte অর্থ বাহির। ভিজিটর এলাকায় এসে দেখি আনোয়ার কাকা দাড়িয়ে সাথে আরো একজন। দেখে বুকের ভেতর আশ্বাসের চাঁদরটা লম্বা হয়ে গেল। আনোয়ার কাকার সাথে এই প্রথম সরাসরি দেখা এর আগে শুধুমাত্র মোবাইলে কথা ও দেখা হয়েছে।আনোয়ার কাকা জড়িয়ে ধরলো ও পাসের যুবকটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল ও রতন। ওঁদের পাসে দেখি আরো দুজন দাড়িয়ে সামনে এসে পরিচয় দিল সে নির্ঝর অধিকারী ফ্রান্সে বাংলাদেশ দুতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি তৌহিদের কলিগ। আমার স্ত্রীকে চেনে ওঁর সাথে কথা বললো। নির্ঝর অধিকারী মোটর কার নিয়ে এসেছে। নির্ঝরের একটা বড় প্যাকেট ঢাকা থেকে আমরা নিয়ে এসেছি যার মধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসে বাংলা নববর্ষ পালনের সরঞ্জাম ছিল। ওঁর গাড়িতে লাগেস সহ আমি আনোয়ার কাকা বাদে সবাইকে উঠিয়ে দিলাম। আমরা দুজনে মেট্রো রেলে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। মেট্রো রেলের কথা অনেক শুনেছি এবার চড়লাম।সে এক অন্যরকম অনুভুতি।
চলবে.…...।
ভাই এতো দেশ ঘুরে এসে এখন কোথায় আছেন? করোনা লাগেনি তো?
Replyপড়লাম। ধন্যবাদ। আমার দুর্ভাগ্য যে ঘরে বন্দী আর আপনার সৌভাগ্য।
Replyপড়ছি..যেহেতু কোনদিন যেতে পারবোনা তাই দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
Reply