হৃদি..............................নাজমুল জুবায়ের

- আব্বু মানুষ মরে গেলে কি হয়? 
- আকাশের তারা হয়ে যায়। 
- আব্বু আকাশের ঐ তারাটা সব চেয়ে উজ্জ্বল কেন? 
- ঐ টা সবচেয়ে ভালো মানুষের তারা মা-মণি। 
- আচ্ছা আব্বু ঐ তারাটার নাম কি? 
- হৃদি । 
- উনি কি খুব ভালো ছিলেন ,তাই না আব্বু? 
- হ্যা মামণি। 
- আচ্ছা আব্বু আমার নাম হৃদি রাখলে কেন? 
- তুমি আমার রাজকন্যা তাই। 
- আচ্ছা আব্বু রাজকন্যার গল্পটা বল। 
- এক দেশে এক রাজকন্যা ছিল।রাজকন্যার নাম ছিল হৃদি।রাজ্যের অনেক আদরের রাজকন্যা ছিল হৃদি, সবাই অনেক ভালবাসত।আর রাজকন্যাও ছিল অনেক ভাল। একদিন এক রাক্ষস এসে রাজকন্যাকে তুলে নিয়ে যায়।তারপর রাজকন্যাকে মেরে ফেলে,আর তখন থেকে আকাশের সবচেয়ে বড় তারা হয়ে যায় হৃদি। 
- আমাকেও যদি রাক্ষস তুলে নিয়ে মেরে ফেলে? 
আবির সাহেব বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন উনার ৫ বছরের মেয়ে হৃদিকে তারপর আস্তে আস্তে বলেন 
- না রে মামণি। আমি একটা হৃদিকে হারিয়ে ফেলেছি আরেকটা হৃদিকে হারাতে দেব না। 
একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির মাঝারি মানের একটা পোস্টে চাকরি করে আবির। স্ত্রী অবন্তী আর ৫ বছরের মেয়ে হৃদিকে নিয়ে তার সংসার। অফিস থেকে ফিরে রাতের খাবার খেয়ে আকাশের দিকে উদাস হয়ে চেয়ে থাকা ওর নিয়মিত কাজ। দূর থেকে দেখলে যে কেউ মনে করবে ও যেন আকাশের দিকে চেয়ে কারো অপেক্ষা করেছে। 
মা-বাবা যখন মারা যান তখন সে কলেজে পড়ে। ছোট বোন ছাড়া আর আপন বলতে কেউ ছিল না পৃথিবীতে।সপ্ন ছিল বুয়েটে পড়বে কিন্তু সংসার আর হৃদিকে দেখাশুনা করতে গিয়ে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয় নি।বোনকে নিয়ে সব সপ্ন ছিল, বোনও নিরাশ করে নি।নিজে পড়তে পারে নি বলে যে আক্ষেপ ছিল হৃদি বুয়েটে সুযোগ পেয়ে সেই আক্ষেপ গুছিয়ে দিয়েছে।সব ঠিকমত চলছিল হৃদি ভর্তি হওয়ার ৬ মাস পর থেকে কেমন যেন বদলে গেল।ঠিকমত বাসায় যোগাযোগ করত না,বাসায় গেলে কেমন যেন ছটফট করত। আবির বোনের এমন আচরণে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল।খুজ নিয়ে জানতে পারল বড়লোক বাবার বখে যাওয়া ছেলে পলাশের সাথে প্রেম করছে হৃদি। সব শুনে আবির সিদ্ধান্ত নেয় হৃদির পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়ার।পরের সপ্তাহে হৃদি বাসায় আসার পর আবির ওর পড়া বন্ধ করে দেয়ার কথা বলে সেই সাথে বলে দেয় হৃদি যেন বাসার বাইরে না যায় । হৃদির অনেক কান্নার পরও আবির তার সিদ্ধান্ত বদল করে না। একদিন সবার অজান্তে হৃদি পলাশের হাত ধরে বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। এরপরের ৬ মাস ছিল হৃদির জন্যে অনেক কষ্টের। একদিকে মা-বাবার আদর দেয়া ভাই আর অন্যদিকে তার ভালবাসা।সে চেয়েছিল পলাশকে অন্ধকার জগত থেকে ফিরিয়ে এনে তার ভাইয়ের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবে।পলাশের উন্নতি দেখে নিশ্চয় তার ভাই তাকে ফিরিয়ে দিবে না। ৬ মাস পর পলাশকে ঠিকই আলোর রাস্তায় ফিরিয়ে এনেছিল,পলাশ নিজ যোগ্যতায় ভাল একটা চাকরী পায়। হৃদি মনে করে এখনই তার ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার উপযুক্ত সময়।কিন্তু ওর ভাগ্যটাই খারাপ। দুইবার ভাইয়ের বাসায় যায় কিন্তু গেটের বাইরে থেকে ফিরে আসতে হয় হৃদিকে।অনেক কান্নাকাটির পরও কেউ গেট খুলে নি।এরপরের সপ্তাহে চট্টগ্রাম বেড়াতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রান হারায় হৃদি ও পলাশ। বোনের লাশ পর্যন্ত দেখতে যায় নি অভিমানী আবির। একসময় নিজের দাম্ভিকতার জন্যে নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হয় আবিরের।বোনের স্মৃতি মনে রাখার জন্যে নিজের মেয়ের নাম রাখে হৃদি। এরপর থেকে প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পর আকাশের দিকে থাকিয়ে থাকে আবির শুনতে পায়, দূর আকাশ থেকে কে যেন খুব করুন সুরে বলছে " প্লিজ, ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দে,ভাইয়া আমি তোকে অনেক ভালবাসি" 
আজও আবিরের চোখ বেয়ে পড়ছে পৃথিবী হারানোর সেই অশ্রু


শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট
Prayanti Barua
October 1, 2020 at 8:14 PM

kanna ese gelo golpo pore, mon kharap kora golpo

Reply
avatar
October 2, 2020 at 6:34 AM

Thanks For Reading.And its my Pleasure that i able to make some emotions here

Reply
avatar