ফাগুনের আগুন শিখা.................সেমন্তী ঘোষ

দোল পলাশের পদাবলী, আবির রাঙা কেশ
অভিসারে মাদল সুরে ফাগুনেরই রেশ---

আগুনের সুরে পলাশের ডাকে মন চলে অভিসারে। প্রকৃতিতে লাগে মধুর বসন্তের সাজ সাজ রব। দখিনা বাতাসের সাথে ডানা মেলে ইচ্ছেরা পাড়ি দেয় স্বপ্ন সুখের সন্ধানে।গগনচুম্বী অট্টালিকার দৃষ্টিনন্দন থেকে তাই দিন কয়েকের ছুটি নিয়ে প্রতিবছরই ফেব্রুয়ারি মার্চ মাস করে আমরা পৌঁছে যাই বড়ন্তি তে।একদিকে যেমন অরণ্যের অসীম রহস্যময়তা তার শান্ত শ্যামল সৌন্দর্য নিয়ে বিরাজমান ,অন্যদিকে তেমনি প্রশস্ত উপত্যকার মাঝে পাহাড়ে ঘেরা দৃষ্টিনন্দন লেক হৃদয়ের আঙিনায় নব নতুনের বার্তা বহন করে আনে। 
বাংলা ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৫৬ সালের পহেলা নভেম্বর পূর্বতন বিহার রাজ্যের মানভূম জেলার সদর মহকুমা পুরুলিয়া জেলা নামে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত হয়।সেই পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর মহাকুমার সন্তুরি থানার অন্তর্গত একটি ছোট্ট আদিবাসী গ্রাম বড়ন্তি। এখনও বেশ কিছু জায়গায় মানভূম লেখা টি চোখে পড়ে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রাতেও রয়েছে মানভূমের ছাপ।
পলাশের বর্ণ মিছিলে যোগদানের জন্য যাতায়াতের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো হাওড়া থেকে ট্রেনে আসানসোল । আসানসোল থেকে গাড়িতে আনুমানিক ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে বড়ন্তি।চারিদিকে সবুজের সমারোহ উন্মুক্ত প্রকৃতির মাঝে বড়ন্তি আর মুরাডি পাহাড় দ্বারা আবৃত বড়ন্তি তে পৌঁছাতে আসানসোল থেকে লাগে প্রায় ঘন্টা দেড়েক। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ১৬০০ ফুট উচ্চতায় বড়ন্তি পাহাড় ঘেরা রাঙ্গামাটি রাস্তায় চারপাশে রয়েছে ছোট-বড় বেশকিছু থাকার হোটেল।
রূপে রসে বৈচিত্রের লীলা চাঞ্চল্য নিয়ে বহু বিচিত্র সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র এই গ্রামটি।একদিকে শ্যামল গহন বনাঞ্চল অন্যদিকে আদিবাসী মানুষগুলির শিল্পকর্মে রঙিন জীবনের ছোঁয়া_

পাহাড়তলীতে ভূমিপুত্রদের মাটির বাড়ি
আলপনা আঁকা দেওয়াল সারি সারি...

যতবারই বড়ন্তি যাই গ্রাম্য পথের উদাসী হাওয়ায় যেন নিজেকে নতুন করে চিনতে পারি।ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে পলাশরাঙ্গা ফাগুনের মায়ায় চেনা- অচেনা পাখির সুরেলা ডাক কানে ভেসে আসে।মাঝে মাঝে ফ্রেমবন্দি হয় বুলবুলি ,ফ্রিঞ্চ,কোকিল কোয়েল,বি ইটার,ফিঙে ,টিয়া ,দোয়েলের দল।শাল, পলাশ, শিমূল, পিয়াল, মহুয়ার জঙ্গলের মাঝে মাঝে চোখে পড়ে আলপনা আঁকা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মাটির বাড়ি।তবুও এত সৌন্দর্য এত আনন্দের মাঝেও গ্রামীণ মানুষগুলোর কষ্টের জীবন মনকে অস্থির করে তোলে।যদিও তাদের হাসিমাখা সরলতা মন ভরিয়ে দেয় ।তাদের রূক্ষ বৈচিত্রহীন জীবনে বসন্তের আগমনে ফাগের রং এর সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় পলাশের পদাবলী। 
তারা জানে নিজেদের সংস্কৃতিকে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হয় তাই ইট কাঠ কংক্রিট এর জীবন থেকে দূরে আজও বড়ন্তি আপন মহিমায় সেজে রঙিন তানে রূপালী জল ছবি আঁকে। অরন্যের অগ্নিশিখার মাঝে লেকের জলে পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি আর সিঁদুর রাঙ্গা অস্তগামী সূর্যের মায়াবী আভায় রচিত হয় স্বপ্নের কথকতা। বড়ন্তির সান্ধ্যকালীন রূপেও বিমোহিত হতে হয়।নিঝুম নিশ্চুপ আঁধার, হিম পড়া মায়াবী সন্ধ্যা।কখনো বা হোটেলের ব্যালকনি থেকে দেখা পূর্ণিমার আছড়ে পড়া জোছনার মোহময়ী বৈভব। দূর থেকে ভেসে আসা ধামসা মাদলের ড্রিম ড্রিম বোল।মাঝে মাঝে কিছু অচেনা-অজানা প্রতিধ্বনি। সারাদিনের স্বপ্নবিভোর বিষন্নতায় রঙিন একগোছা পলাশের ঝাঁজালো গন্ধে অদ্ভুত প্রশান্তি।রাত্রি অতিবাহিত স্মৃতির মননে।প্রভাতের স্বর্ণালী আলোয় নব দিগন্তের নবরূপে সুনির্মল নীলাকাশে ফিরে ফিরে আসার অনন্তের আহ্বান:
মায়াবিনি প্রকৃতির অনন্ত ডাক
পলাশের ফাগে ;আগুনের রাগ।

চিত্র সৌজন্যে :পৃথ্বীশ ভদ্র

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট
মনি
October 20, 2020 at 6:38 PM

প্রকৃতির মাঝে একটু প্রেম, একটু রোমান্টিক কথা, কিছু চুমু, বিনোদন হলে আরও ভাল হত।

Reply
avatar
October 20, 2020 at 8:38 PM

Why you write only on tours and travels? Why not stories? It would be better too

Reply
avatar
October 20, 2020 at 9:40 PM This comment has been removed by the author.
avatar
মিতা রায়, অনুপডাঙা, বরিশাল
October 20, 2020 at 10:42 PM

বাহ ছবিগুলো দেখে আমি মুগ্ধ। যিনি তুলেছেন তার হাত আছে বলা যায়। লেখাও সুন্দর।

Reply
avatar
October 20, 2020 at 11:56 PM

ধন্যবাদ দিদি।যিনি তুলেছেন তিনি সত্যিই খুব ভালো ছবি তোলেন।ওনার ছবির বিষয়বস্তুই আমার লেখার প্রেরণা।

Reply
avatar
October 21, 2020 at 12:03 AM

I love Travel.It is associated with my work. But I also write Short stories, Detective stories,poetry & Bengali literature.....

Reply
avatar
সৌরভ ব্যানার্জি, ধোপমন্ডল পুকুর, খিদিরপুর, কোলকাতা
October 21, 2020 at 12:08 AM

একঘেয়ে লাগছে কেবল পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে যে লিখছো। দক্ষিনে কত সুন্দর সুন্দর জায়গা আচে ভুলেছ তা? ওগুলো নিয়ে লেখ

Reply
avatar
October 21, 2020 at 12:17 AM

সম্ভবত আপনার দৃষ্টি বিভ্রম।এই পেজে এটি আমার পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে প্রথম লেখা।

Reply
avatar
সৌরভ ব্যানার্জি, ধোপমন্ডল পুকুর, খিদিরপুর, কোলকাতা
October 21, 2020 at 1:09 AM

তোমার বাকি লেখাগুলো দেখে মনে হল তুমি বঙ্গ নিয়ে লিখছ। যা হোক পড়েই বলবো। তবে বাংলাদেশের জায়গাগলো ভাল বলে শুনেছি।

Reply
avatar
October 21, 2020 at 8:45 AM

Thank you....sab kichu nea i likhechi dada...next south er lekha abbosoi dichhi..sathe thakun rupali patar ar amader lekhar..

Reply
avatar