স্মৃতি সতত সুখের.............................শ্রীলা পান্ডা (কোলকাতা)

ছর কুড়ি পর রোহিত এবার ঘুরতে এলো পাহাড়ে। ছোটো থেকেই ওর খুব ঘোরার নেশা।আসলে নেশাটা ছিল ওর বাবার। বাবার ছিল খুব বড়ো পাবলিশিং হাউস, আয় মন্দ ছিলনা তাই সুযোগ পেলেই বাবা আর ও বেরিয়ে পরত। হ্যাঁ, রোহিত আর ওর বাবা।রোহিত এর মা ওর ৫বছর বয়সেই হটাৎ একদিন রাতে বুকের ব্যথায় ছট্ফট্ করতে করতে মারা যান।ডক্টর এসে বলেন হার্ট অ্যাটাক। যাই হোক,যে কথা বলছিলাম,এবার এত বছর পরে রোহিতের ঘুরতে আসতে ইচ্ছে করলো তাও আবার পাহাড়ে।
অনেক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবিটা তুলবে বলে। কিন্তু আজকে এত মেঘ মনে হচ্ছেনা সেটা সম্ভব হবে। মন টা খারাপই হয়ে গেলো।হটাৎ পিছনে শুনলো কিছু কথাবার্তা। একজন কিছু নিয়ে জেদ করছে আর একজন তাকে ধমকাচ্ছে।পিছনে ফিরতে দেখে একটি ১২-১৩বছরের মেয়ে ও তার মা। মেয়েটি সাতসকালে ঘুম ভেঙে আসতে চাইছিলনা কিন্তু মায়ের কাছে সে আপত্তি খাটেনি। এখন কুয়াশা আর মেঘের জন্যে যে কিছু দেখা হবেনা সেটা বুঝে মেয়ে মাকে কথা শুনাচ্ছে। হাসি পেয়ে গেলো রোহিতের।হেসেও ফেললো। কিন্তু তারপরই নিজের ভুলটা বুঝতে পারলো। মেয়েটা কটমট করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আর সেই দৃষ্টিতেই প্রথম বার রোহিত নিজের একটা হার্ট বিট মিস করলো। মেয়েটির মা কিন্তু খুব সাবলীলভাবেই বলে উঠলেন " দেখো না,আমি কি করে বুঝবো যে এরকম ওয়েদার হবে,এখন এনার ঘুম নষ্ট হবার জন্যে আমাকে মেজাজ দেখাচ্ছে।এর হচ্ছে খালি ঘুম।" হটাৎ পাশ থেকে মেয়েটি রেগে উঠলো "আহ্! মা কি হচ্ছে কি।" মা ধমক খেয়ে তাড়াতাড়ি চুপ করে গেলেন ঠিকই কিন্তু মুচকি মুচকি হাসতে থাকলেন। মেয়েটি রেগে উঠে হোটেলে চলে গেলো। মা ও অগত্যা উঠে পড়লেন আর সাথেসাথেই রোহিত ও। রাস্তায় যেতে যেতে মোটামুটি সব খবরই নেওয়া হয়ে গেলো। উনারা কালকেই ফিরে যাবেন কলকাতায়। ভদ্রমহিলাও রোহিতকে তার ব্যাপারে সব জিজ্ঞেস করে যাচ্ছিলেন। হোটেলের কাছে এসে রোহিতকে তাদের রুমে আসতেও বললেন ,কিন্তু হটাৎ করে চোখের সামনে সেই কটমট দৃষ্টি ভেসে উঠতেই ও তাড়াতাড়ি সে প্রস্তাব খারিজ করে পরে আসবে কথা দিয়ে চলে এলো নিজের হোটেলে।
বোধহয় পাহাড়ের এই জায়গাটাই এই স্মৃতি গুলো মনে করিয়ে দিলো আজ।পুরো কুড়িটা বছর পিছনে চলে গেছিলো সে। আজও এসেছিল কাঞ্চনজঙ্ঘার সামনে ।আজ খুব ইচ্ছে করছিলো পিছনে ফিরে যদি সেদিন এর মতন মা ও মেয়েকে দেখা যায়,কিন্তু তা তো হবার নয়।মাঝে কুড়িটা বছর কেটে গেছে। না রোহিতের আর দেখা হয়নি তার সঙ্গে।সে সেদিন বিকেলে গেছিলো ওদের হোটেলে কিন্তু গিয়ে রিসেপশনে শোনে ওরা ঘুরতে বেরিয়েছে কখন ফিরবে জানা নেই। আবার পরের দিন ও সকালে গেছিলো । তখনও তার কপাল খারাপ,গিয়ে শোনে ওরা চলে গেছেন। কলকাতার ঠিকানা নেওয়া হয়নি, তাছাড়া সেভাবে আলাপ পরিচয় ছাড়া কারোর বাড়ি যাওয়াটাও ঠিক শোভা পায়না। তাই আর কিছুই ঘটে উঠতে পারেনি তার সাথে।
রাস্তা দিয়ে এসব ভাবতে ভাবতে আনমনে সে চলছিল।হটাৎ একটা আওয়াজ শুনে দাঁড়িয়ে পড়লো।একটি বাচ্চা মেয়ে রাগ দেখাচ্ছে আর তার মা তাকে খুব চোখ বড়ো বড়ো করে শাসন করার চেষ্টা করছে। ঘটনাটা এতটাই আকস্মিক যে রোহিত নিজের মধ্যেই নিজে কিরকম হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। সেই চোখ,সেই একই দৃষ্টি ,সেই একই কটমট করে তাকানো। আবারও নিজের একটা হার্ট বিট মিস হলো। কিন্তু আজ আর কিছু বললো না। মুচকি হেসে সে সেই সুখস্মৃতি নিয়ে নিজের গন্তব্যে ফিরে চললো।

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট
Anonymous
October 2, 2020 at 9:24 PM

হুম বড় লিখা পড়তে ভাল

Reply
avatar