শূন্যতা........................মনিরুল ইসলাম জোয়ারদার (ঈদ সংখ্যা ২০২০)


ই তরী শুনছো চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেতনও একদম খারাপ না তাহলে আমাদের বিয়ে কেউ আটকাতে পারবে না কি বলো! তানভির অবাক বিশ্ময়ে তরীর দিকে চেয়ে আছে বুঝতে পারছে না চাকরির কথাটা শুনেও তরী কিভাবে নির্বিকার থাকছে আবার ডাকলো এই তরী কি হলো শুনছো না?
তরী ঘাড় কাত করে তানভিরের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বললো স্যালারী কত?
শুরুতেই পঁচিশ পরে আরো বাড়বে।
না চলবে না এমনিতেই প্রমিনেন্ট কোম্পানি না তার উপর স্যালারী এত কম চলবে কিভাবে বিয়ে হবে না।
কথা শুনে তানভির খানিকক্ষণ চুপ থেকে বললো তাহলে!
তানভিরের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তরী বলে তাহলে আমাকেও চাকরি করতে হবে।
কিন্তু তোমার তো সবে মাত্র অনার্সের রেজাল্ট বের হলো কবে চাকরি পাবে আর কবে হবে বিয়ে।
এইতো হয়ে যাবে বলে হাসলো তরী। এই আমি উঠছি বলেই তরী বিদায় নিয়ে চলে গেল।
তানভির ভাবছে এপ্রিলের পাঁচ তারিখে জয়েনিং ডেট আগে জয়েন করে নিই পরের মাসেই বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলবো তরী তখন না করতে পারবে না।
তানভির মাস্টার্স আর তরী অনার্স কমপ্লিট করেছে। একে অপরকে পাগলের মত ভালবাসে বিয়েটাও সেরে ফেলবে এমন সময় করোনার জন্য সরকার লক ডাউন করে দিল সমগ্র দেশ, তানভির ফোন দিয়ে তরীকে ডেকে আনলো ক্যাম্পাসে কতদিন দেখা হবেনা তাই তরীও চলে এলো। তুমিতো গ্রামে চলে যাচ্ছো তাইনা তানভিরের জিজ্ঞাসা।
হ্যা, হল বন্ধ করে দিয়েছে কাল সকালেই যাচ্ছি। এমন সময় ঘটনাটা ঘটলো যে সব ভজঘট হয়ে গেল। আরে কয়েকটা দিনইতো এরপর সব ঠিক হয়ে যাবে।ক্যাম্পাস নীরব হয়ে গেছে দু'চার জন ছেলে মেয়ে আছে তাও কাল থেকে কেউ থাকবে না পরুশু থেকে সরকার সব বন্ধ করে দিবে।
হলের সামনে কাঠ বাদাম গাছের নিচে ওরা দাড়িয়ে,কেমন ভয় ভয় লাগছে তরীর।ঠিকাছে তানু চলি গোছগাছ করতে হবে আর তুমিও যাও রাস্তাঘাট ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেছে বলেই তরী বিদায় নিতেই তানভির তরীর হাতটা ধরে মুচকি হাসি দিয়ে বললো এই একটা আবদার রাখবে?
কি বলো? তোমাকে একটা কিস দিবো কতদিন পর দেখা হবেতো তাই।
এ্যাই ফাজলাম বাদ দাও বিয়ের আগে এগুলো আমার পছন্দ নয়।
আরে পাগলী আমিতো কখনোই এরকম আবদার করিনি আজ কেন যেন ইচ্ছে করছে।
শোন পাগলা বিয়ের পর সব হবে বিয়ের আগে কিছুই নয় জানোনা বিয়ের আগে খুল্লাম প্রেম করলে বিয়ের পর হবে শুধুই ঝগড়া বলেই তানভিরের ডান হাতটা তরীর দুই হাতের মাঝে নিয়ে একটু চাপ দিয়ে ফিরে গেল,হলে যাবার সময় বললো ফোনে কথা হবে জান।
তানভির ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো তরীর গমন পথের দিকে।
লক ডাউনের পর তানভির ব্যস্ত হয়ে গেল অসহায় মানুষদের সাহায্যের জন্য। ওদের একটা সংগঠন আছে ওরা অসহায় ছাত্র ছাত্রীদের আর্থিকভাবে সহায়তা করে। এই দুঃসময়ে অনেক ছাত্র ছাত্রী গ্রামে যেতে পারেনি তারা কেউ কেউ টিউশনি করে চলতো এখন সেটাও বন্ধ বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা পাঠানোর মত অবস্থাও নেই মুলতঃ তাদেরকে সহায়তা দিচ্ছে এই সংগঠন। এরা মুলত নিজস্ব এলাকার ধনীক শ্রেণীর লোকদের থেকে চাঁদা তুলে একাজ করছে এই সংগঠনের নেতৃস্থানীয় তানভির যার কারণে সে গ্রামে যেতে পারেনি।করোনা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে সরকারও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে কিন্তু দারিদ্র্যতা ও খাদ্যাভাব মানুষকে বড় অসহায় করে তোলে ফলে বাজারে ভিড় লেগেই আছে করোনার সংক্রমণ বেড়েই যাচ্ছে। তানভিরদের টিম নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।একদিন তানভির নিজেই করোনায় আক্রান্ত হলো সে একটা ম্যাচ বাড়িতে ভাড়া থাকে সেখানেই একরুমে একা আইসোলেশন ঘরবন্দী হলো।একটু জ্বরজ্বর হলেই টেস্ট করাতেই পজেটিভ ধরা পড়ে আর এভাবেই একা একা ঘরে থাকে সে কাউকে জানতে দেয় না এমনকি তরীকেও জানায় না। ফোনে তরীর সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলে শুধু তার টিমের বন্ধুরা জানে তাদেরকেও নিষেধ করে দিয়েছে কাউকে কিছু না বলতে।
হঠাৎ একদিন সে ভীষণ অসুস্থ হয়ে গেলে বন্ধুরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় সেখানেই ক'দিন প্রচন্ড শ্বাস কষ্টে ভুগে মারা যায়।ডাক্তাররা আন্তরিক চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচাতে পারে না। ক'দিন ধরে তরী ফোন করে তানভিরকে পায় না মনে মনে রেগে যায়,না ফোন আর করবো না সিদ্ধান্ত নিয়েও আবার ফোন করে কিন্তু কোন উত্তর পায় না।কয়েকদিন পর তানভিরের ফোন থেকে কল এলে তরী অভিমানে কল ধরে না এভাবে অনবরত ফোন এলে একসময় ধরেই কেন ফোন করেছো আমাকেতো ভুলেই গেছো কি দরকার ফোন করার ইত্যাদি। ওপাস থেকে একটু পর কান্নার শব্দে তরী বলে ন্যাকামি করো কেন ফিসফিস করে ওপাস থেকে একটা পুরুষ কণ্ঠ বলে তরী আমি আনান
সম্বিত ফিরে পায় তরী, আনান ভাই তানভির কোথায় আপনি কেন তানভিরের ফোনে?আপনি কাঁদছেন কেন কি হয়েছে তানভিরের? নানা প্রশ্নে জর্জরিত করে তোলে আনানকে।
আনান হাউ হাউ করে কেঁদে উঠে অস্ফুট কণ্ঠে আনান বলে তরী তানভির আর নেই, ওপাস থেকে ধপ করে একটা শব্দ শুনতে পেল আনান এরপর হ্যালো হ্যালো করে অনেকবার চেষ্টা করেও তরীর কথা শুনতে পায় না আনান। এই লকডাউনে এমন কতযে ঘটনা কতরকমের ঘটনা ঘটেছে তার হিসেব কেউ কি রাখবে।কত প্রেম মরে গেছে কত বিয়ে ভেঙে গেছে কত জীবন চলে গেছে কেইবা তা মনে রাখে।।

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট
July 22, 2020 at 2:48 PM

আহা নায়কটা ফিনিশ?

Reply
avatar
Anonymous
July 28, 2020 at 5:54 PM

মনে বড়ো কষ্ট পাইলাম নায়ক মারা গেল আর নায়িকা কি হলো সেটা জানা গেলনা। করোনা মানুষের বহু কিছু ধ্বংশ করেছে এমনক প্রেমও

শাহিন ১১ উত্তর মোহাম্মদপুর, আদাবর কোয়ার্টার ঢাকা

Reply
avatar