কুকু ও সবুজ ব্যাঙ................তুহিন রহমান

সারাদিন অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। কুকু আজ স্কুলে যেতে পারেনি। আর স্কুলে গিয়েই বা কি হবে? দু’দিন পর তো স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে দেড় মাসের জন্যে। তখন খালি খেলা আর আনন্দ। কিন্তু এ কি অবস্থা? গরমকালে কি এমন বৃষ্টি হয় নাকি? উঠোনে যে খেলতে যাবে তার উপায় নেই। উঠোনে ঘাস আছে। সবুজ ঘাস। শুকনো দিনে ঘাসের ওপর বসে থাকে কুকু। কিন্তু আজ আর তা হবেনা। যেতে হবে ছাতা মাথায় দিয়ে।
কুকু মায়ের অনুমতি নিয়ে একটা নীল রঙা ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে উঠোনে। এমন মুষলধারে বৃষ্টি যে মনে হচ্ছে ছাতা ফুটো করে বুঝি গায়ে এসে লাগবে পানির ফোঁটাগুলো। ঠান্ডা বাতাসও বুঝি বিঁধে যাচ্ছে শরীরে। সবুজ ঘাসের ওপর বৃষ্টির ফোঁটাগুলো কি সুন্দর লাগছে! সবুজ ঘাসের লনের আশেপাশে বেশ কিছু ঝোঁপ ঝাড় আছে। সেসব ঝোঁপ ঝাড়গুলো বাতাসে নুয়ে পড়ছে। মনে হচ্ছে যেন বৃষ্টির বেগ বাড়ছে।
কুকু এগিয়ে যায় ঝোঁপ ঝাড়গুলোর দিকে আর তখনই সেগুলোর ভেতর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে আসে একটা সবুজ রঙ্গা ব্যাঙ। কুকু চমকে ওঠে ব্যাঙটাকে দেখে। কিন্তু ব্যাঙটা ভয় পায়না। বরং সে লাফিয়ে লাফিয়ে আসতে থাকে কুকুর দিকে।
কুকু আরেকটু হলেই ভয়ে দৌড় দিতো। কিন্তু ব্যাঙটা হঠাৎ মানুষের ভাষায় কথা বলে উঠলো। বললো,‘কুকু তোমাকে আমি চিনি। তুমি রোজ ঐ জানালার ধারে বসে পড়ো। আর তোমার মা তোমার মুখে তুলে ভাত খাইয়ে দেয়।’
কুকু দাঁড়িয়ে পড়লো। অবাক হয়ে বললো,‘ওমা তুমি কথা বলতে পারো?’
‘পারি পারি। আমি শুধু না, আমার বাচ্চারাও পারে। তুমি কি আমার বাচ্চাদের সাথে কথা বলতে চাও?’ সবুজ ব্যাঙ বললো।
‘তোমার বাচ্চা?’ কুকু অবাক হয়ে বললো,‘ওদের তো আমি দেখতেও পাবোনা। ওরা তো অনেক ছোট।’
‘তা তুমি ঠিকই বলেছো। ওরা এখন ঝোঁপের পেছনে বৃষ্টির ভেতর খেলছে। ওরাও কিন্তু তোমাকে চেনে। তোমাকে দেখলে খুব খুশী হতো ওরা।’ ব্যাঙ বললো।
কুকু অবাক হয়ে বললো.‘আজ থাক অন্যদিন দেখা হবে ওদের সাথে।’
সবুজ ব্যাঙ বললো,‘আমি অনেকদিন থেকে তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি। পরিচিত হতে চাচ্ছি।’
‘নিশ্চয় কোন কারন আছে, তাইনা?’
সবুজ ব্যাঙ কুকুর পায়ের নীল জুতো জোড়ার দিকে তাকালো। একটু হাসি ফুটলো ওর মুখে। বললো,‘কথাটা যে কিভাবে বলি।’
কুকু তাড়াতাড়ি বললো,‘আরে কোন সমস্যা নেই। তুমি নির্ভয়ে বলতে পারো।’
সবুজ ব্যাঙ তার লম্বা জিভ দিয়ে নিজের বাম দিকের চোখটা চেটে নিলো। একটু গম্ভীরভাবে বললো,‘আমাদের তো বাড়ি নেই। ব্যাঙরা বাড়ি বানাতে পারেনা ইঁদুরের মতো, গর্ত করতে পারেনা বেঁজির মতো। ব্যাঙদের অনেক সমস্যা। পানিতে থাকতে পারেনা আবার শুকনোতেও থাকতে পারেনা। এইযে দেখ এখন বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু তোমার মতো একটা ছাতাও আমাদের নেই। আমাদেরও কিন্তু ঠান্ডা লাগে। আমার বাচ্চাদের সেদিন নিউমোনিয়া হয়ে গিয়েছিলো। চুচু গাছের রস খাইয়ে শেষ পর্যন্ত রেহাই পেয়েছে।’
কুকু মাথা নেড়ে বললো,‘অনেক বড়ো সমস্যা দেখছি তাহলে!’
‘সত্যি অনেক বড়ো সমস্যা।’ সবুজ ব্যাঙ বললো,‘তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে।’
‘হ্যাঁ বলে ফেলো।’ কুকু বললো। বৃষ্টিতে দাঁড়াতে তার বেশ সমস্যা হচ্ছে। ছাতাটা বাতাসে নুয়ে পড়ছে বারবার।
‘তোমার পায়ের নীল জুতোটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। তুমি কি আমাকে তোমার একটা জুতো দিতে পারো?’ ব্যাঙ বলেই মাথাটা নিচু করলো।
‘আমার জুতো?’ ঢোক গিলে বললো কুকু। ‘এটা তো তোমার পায়ে লাগবেনা। অনেক বড়ো হবে।’
‘না না, ওটা আমি পরবোনা।’
‘তবে?’
‘আমাদের তো বাড়ি নেই তাই ওটাকে বাড়ি বানিয়ে আমরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো। চমৎকার জুতো, আমার খুব পছন্দ হয়েছে।’ সবুজ ব্যাঙ বললো।
কুকু একটু চিন্তায় পড়ে গেল। এই জুতোজোড়া তার বাবা গত পরশু দিন কিনে এসেছে। যদি জানে এটা একটা ব্যাঙকে  দিয়েছে কুকু তাহলে অনেক রাগ করবে। আবার এই চিন্তা করেও খারাপ লাগছে যে একটা ব্যাঙ তার পরিবার নিয়ে খোলা মাঠে রোদ বৃষ্টিতে দিন পার করছে।
ব্যাঙ বললো,‘এটা বাড়ি হিসাবে পেলে আমার বাচ্চারা খুব খুশি হবে। দেবে কুকু ওটা আমাদের? দুটো দিতে হবেনা। একটা দিলেই হবে।’
কুকু জানে একটা দেয়া আর দুটো দেয়া একই কথা। কেননা একটা দিলেও অন্য পায়েরটা কোন কাজে আসবেনা। তাই ও মাথা নাড়ে।‘ঠিক আছে এই নাও।’ বলে ও পায়ের জুতোটা খুলে বাড়িয়ে দেয় ব্যাঙের দিকে। ব্যাঙের চেহারাটা ভরে যায় আনন্দে। মনে হচ্ছে এতোটা খুশি ও কোনদিন হয়নি। বলে,‘ধন্যবাদ কুকু। একদিন আমি তোমার উপকার করবো।’
কুকু হাসে,বলে,‘আমার উপকার করার দরকার নেই। তুমি খুশি হয়েছো তাতেই আমি খুশি হয়েছি। এবার তুমি আরামে ঘুমোতে পারবে রাতে।’
‘ধন্যবাদ কুকু।’ বলে জুতোটা টানতে টানতে জঙ্গলের দিকে জেতে লাগলো সবুজ ব্যাঙ। কুকু বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো। ওর খুব ভালো লাগছে দৃশ্যটা। একটা ব্যাঙ একটা জুতো বয়ে নিয়ে যাচ্ছে পিঠে করে।


শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট
October 13, 2020 at 6:17 PM

আপনার লেখা অসাধারন। আপনার আরও লেখা পড়লাম, এক কথায় সবার সেরা।

Reply
avatar
October 14, 2020 at 2:15 PM

Besh anyorokom..valo laglo dada

Reply
avatar
October 15, 2020 at 1:05 AM

ধন্যবাদ সেমন্তী পড়ার জন্য।

Reply
avatar
অনুরাধা, মিরপুর ঢাকা
October 21, 2020 at 11:28 PM

বাচ্চাদের খুব ভাল লাগবে গল্পটি। আপনি কি সব ধরনের লেখা লিখতে পারেন তুহিন দা? আবার কি সুন্দর গল্পের সাথে ইলাস্ট্রেশনও দিয়েছেন।

Reply
avatar
তুহিন রহমান
October 26, 2020 at 9:18 AM

জ্বি, সব ধরনের গল্প আমি লিখি। কমেন্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

Reply
avatar