দু- ফোঁটা দুঃখ শব্দের বিসর্গ...................................ইমরান মাহমুদ

কোনো গল্পের ভূমিকাতেই যে উপসংহার টানা যায় তাঁর সাকুল্যে এমনি এক গল্প শোনাচ্ছিলেন বিনয়'দা।
' রজত তোর বিদেশিনীর সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার ছিলো। বলবো?  'যদিও এই কথাগুলো শোনার জন্য তুই একদমই প্রস্তুুত না, তবুও এক্ষুনে বলাটা জরুরি '
- নয় -ছয় না করে কি বলার আছে বল? 
বলে রাখা ভালো, 
চিঠির চালাচালিতে পূর্ববঙ্গের এক মেয়ে ' শ্রেয়ার' সাথে আমার একটু ভাব ছিলো আগে থেকেই, এই ভাবটি যে কখন ঢের গিয়ে ভালোবাসায় পরিনত হবে তা না জানতো বিদেশিনী, না জানতাম আমি। 
কিন্তু পূর্বে থেকে চণ্ডালে যা খোদাই করা থাকে তাই তো হবে; 
তারপর বিনয় বলতে লাগলো, 
_ ' দশমিতে শ্রেয়ার একটা দুঃসম্পর্কের পিসতেতো ভাইয়ের বন্ধুর সাথে হঠাৎ ওর বাবা মা আশীর্বাদের ব্যবস্থা করে৷ আর শ্রেয়া তখন নিরুপায় হয়ে ঔ বিয়েতে মত দিতে বাধ্য হয়। তার পরেরদিন শ্রেয়া আমার হাতে একখানা পত্র ধরিয়ে দিয়ে তৎক্ষনাৎ চলে গেলো। আমার পক্ষ থেকে যে একটা শব্দ করবো সেই সময়টি পর্যন্ত ও দেই নি। আমি খবরটা তোকে জানাতে বিকেলের গাড়ি ধরেই কলকাতা ছেঁড়ে ঢাকা আসি। কিছু বলবি রজত ? ' 
মূহুর্তটায় নীরব থাকবারই কথা। আমিও তাঁর বিপরীত না করে স্বভাবতই নিশ্চুপ থেকে ইশারায় বিনয়কে বললাম, 
-তুই এখন যেতে পারিস;
বিনয় মুখখানা কালো করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
তারপর আমার হাতে থাকা চিঠিটি হতস্তত করে খুলে পড়তেই, অমনি দেখলাম লেখা.... 

"দুঃখিত "
এতটুকুই _

মানুষের জীবনের রং যতোটা গাঢ় হওয়া উচিত ততোটা গাঢ় না, ঈষৎ কালচেও বটে । সম্পর্কের ব্যবধানে আমরা কেউ আকাশের সমান সুবিশাল, প্রশস্ত, আবার কেউ সুউচ্চ। আবার কিছু সম্পর্কের টানাপোড়ন আমাদের কাছে ঘুড়ি আর লাটাইয়ের সদৃশ মনে হয়। যে পারে ইচ্ছে মতো ওড়ায় আর যে পারে না সে আকাশে উঁড়ে। 
সুতোখানি ছিঁড়ে গেলে, কতখানি দূরে গেলে, কতখানি ফেরো? 
দূরে গেলে তবুও হয়, কাছে এলেই তো ভয়, এই বুঝি হারালে।
কথাগুলো ভাবতে- ভাবতে কখন যে চিঠির উপর দু-ফোঁটা জল আলগোছে এসে পড়েছে, বুঝতেই পারি নি। আচ্ছা শ্রেয়া যখন তাঁর শেষ চিঠিতে" দুঃখিত " লেখাটি লিখছিলো তখন কি ওর কাজল চোখের দু- পাশের আধুলিতে একটুও পানি জমে নি? যদি পানি এসেই থাকে তাহলে কখনো কি তাঁর চোখ কচলাতে গিয়ে" দুঃখিত " শব্দের ( ঃ)বিসর্গের উপর দু- ফোঁটা জল সাদা কাগজটিতে পড়ে নি? আচ্ছা সে কি তাঁর ডোরাকাটা সূতি ওড়না দিয়ে চোখের পানি লুকাতে চেয়েছিলো? না চোখের পানি মুখে নিয়ে তা নোনতা কিনা তা যাচাই করছিলো!

আচ্ছা এমনটিও তো হতে পারতো শ্রেয়ার একচোখের জল এসে ঠিক "দুঃখিত " শব্দের একটা ফোঁটার উপর এসে পড়তো! আর বাকি একটা ফোঁটা চোখের জল শুকিয়ে যাবার কারনে বিসর্গের আরেক ফোঁটা অপূর্ণই থেকে যেতো। পরবর্তীতে আমার এক চোখের জল টপটপ করে ঠিক বিসর্গের অপূর্ণ ফোঁটাটির উপর পরতো। 
-এসব কিছু কিন্তু ব্যথারই দান ; এখানে রোমান্টিকতার ছিটে ফোঁটা না থাকলেও দুঃখ ভাগাভাগির একটা আলাদা আনন্দ আছে। এ জন্মে এক "বিনোদিনীকে" ভালোবেসে দুঃখ ভাগাভাগির চেয়ে অধিকতর সুখ আমি আর দ্বিতীয়টি পাই নি।
আরেকদিন হয়তো এই দুরারোগ্য অসুখের কিছুটা পথ্য পেয়েছিলাম। 
ঐটা আমার জীবনে দুঃখ পাইবার দিক দিয়ে দ্বিতীয় আর ব্যথা লুকানোর আনন্দের দিক দিয়ে তৃতীয়। 

আমার এক বই প্রকাশের কাজে কলিকাতায় অনুষ্ঠিত বইমেলাতে যাবার সময় ঘটে। শিয়ালদহ এর ট্রেনে উঠে জানলায় আড়ি পেতে তাকাতেই দেখি এক মেয়ে আমার কামড়ার দিকে আসছে! তার কিছু পরে মেয়েটির পেছন পেছন আরেকটা মধ্য বয়সী পুরুষ স্যাুটকেস বোঝাই মালপত্র নিয়ে এদিকেই আসছে।
- "জায়গা আছে " 
মেয়েটির চাপা স্বর আমার কাছে এক চিরপরিচিত কন্ঠের সুরেলা গলা মনে হলো।
আমার বসার সিটের কাছে তাদের আসতেই দেখি আসলেই, উনিই তো আমারই সেই চির পরিচিত
" শ্রেয়া"
আমি ব্যাপারটি আন্দাজ করে যা বুঝলাম, ট্রেনে উনারা সিট পান নি। 
_ ভদ্রলোককে আমি ডেকে বললাম,
আপনার কোনো সমস্যা না থাকলে আমার পাশে বসতে পারেন ; 
- " ধন্যবাদ" 
তাছাড়া আমার সামনের সিটটাও খালি পড়ে আছে।
একটু পরে দেখলাম ভদ্রলোকের স্ত্রীকে সেখানে বসতে দিলো। 
- যাত্রাপথে ভদ্রলোক আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই আমি আমি আমার পরিচয় দেই। 
_ ও "আপনি সেই লেখক রজত বাবু?
আমি আপনার সব বই পড়েছি, আপনি ভীষণ ভালো লেখেন। এবারের বইমেলায় আমরা কি পাচ্ছি? 
_" চার অধ্যায়" এটি আমার দ্বিতীয় উপন্যাস। 
_ এই বলে আমি আমার আসন ছেড়ে কামড়ার দরজার কাছে এসে বসি। 
পকেট থেকে সিগারেটের খোসাটা বের করে একটা সিগারেট ধরাই। আর আমার চোখ ছিলো ট্রেনের বাহিরের লোকালয়ে, সিগারেটের তামাক পাতা গুলো যখন এক চুমুক দু - চুমুক করে ভেতরে নিতাম মনে হতো এই বুঝি স্বস্তি পেলাম। মুখের সামনে থেকে ধোঁয়া উঁড়ে যখন আমার বিপরীত দিকে যাচ্ছিলো আমি ঔ দিকে এক বার তাকাতেই দেখি শ্রেয়া আমার দিকে এক দৃষ্টিতেই চেয়ে আছে।
কি জানি ভাবছে! সম্পর্কের গোড়া আমাদের কতটা দূর, কতটা সুদূর নিয়ে এসেছে। বাস্তবতা জানি কত কঠিন! সেসময় দু- একবার আমি শ্রেয়ার বিচলিত ভাবনার দিকে তাকাতেই দেখি শ্রেয়ার বাম পাশের সিঁথির চুলগুলো এলো বাতাসে কেমন করে জানি ডাকছে। তার সেই ভাবনার কাছে গেলে মনে হয়, অতো কাছে যেতে নেই। কিছুটা দূরত্বই ভালো।
কেননা কিছু মানুষের জীবনে দু- ফোঁটা দুঃখ শব্দের বিসর্গ আছে।

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট
Anonymous
October 2, 2020 at 7:18 PM

Just wonderful vaiya

Reply
avatar
Anonymous
October 2, 2020 at 8:29 PM

Darun golpo ~srila

Reply
avatar