ঘুম ভেঙ্গে গেলো। জানালা গলে ভোরের নরম আলো আসছে। আমি সারা গায়ে কাঁথা জড়িয়ে শুয়ে আছি আমার পরিচিত বিছানায়। আমার নিজের ঘরে। শোয়ার ভঙ্গিটা একটু অন্যরকম। চিত হয়ে শুয়ে বুকের ওপর দুই হাত ভাজ করে রাখা। আমি সাধারণত এভাবে ঘুমাই না। আমার উপুড় হয়ে ঘুমানোর বদ অভ্যাস আছে। আর ঘুমের মধ্যেই হাত পা নেড়ে বিছানার চাদর এক জায়গায় জড়ো করে ফেলি। কিন্তু গতকাল রাতে যে রায়হান এই বিছানায় ঘুমিয়েছে সে বেশ গোছানো স্বভাবের বোধহয়। পায়ের কাছে দেয়ালে ঝোলানো পুরোনো ঘড়িটার দিকে তাকালাম। চশমা ছাড়া দেখতে কষ্ট হয়। মনে হলো, ভোর ছ’টার একটু বেশি বাজে। গতকাল রাতের কথা আমার পরিষ্কার মনে আছে, আমি বসে ছিলাম আমার শে^তাঙ্গ বন্ধুর পাশে। আমাদের জিপ ছুটছিলো কঙ্গো নদীর অববাহিকায় একটা বনের ভেতর দিয়ে। পেছনে তাড়া করে আসছিলো চারটা ক্ষুধার্থ সিংহী। আমার নাম না জানা আমেরিকান বন্ধু পাগলের মতো জিপের এক্সেলেটর চেপে ধরে স্টিয়ারিং হুইল ঘোরাচ্ছিলো। এবড়ো থেবড়ো জমিতে চলতে গিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছিলো আমাদের জিপ।
জিপের যান্ত্রিক শব্দে আর হেডলাইটের আলোয় ভয় পেয়ে পাশাপাশি দু’টো বড় গাছ থেকে এক ঝাঁক পাখি তীক্ষè শব্দে চ্যাঁচামেচি করতে শুরু করলো। ডানা ঝাপটানোর শব্দ পেলাম। ওপরের দিকে তাকালাম। অন্ধকারে বুঝতে পারলাম না পাখিগুলো দেখতে কেমন। শুধু দেখলাম মাথার ওপরে অন্ধকারের ভেতর আরো গাঢ় অন্ধকারের মতো অসংখ্য অবয়ব গাছদু’টো ঘিরে এলোমেলোভাবে উড়ছে আর ডাকছে। আমি পাখিগুলোর নাম জানি না। হয়তো সেই পৃথিবীর রায়হান বলতে পারতো ওগুলো কী পাখি।
তন্দ্রামতো এসেছিলো। আমার এই এক দোষ, গাড়িতে উঠলেই ঘুম আসে। সে যে গাড়িই হোক না কেন। যে পরিস্থিতিই হোক না কেন। আমার পাশে বসা আমেরিকান যুবক এক্সেলেটর চেপে ধরে দরদর করে ঘামছে আর আমি দুই চোখের পাতায় জড়ো হওয়া রাজ্যের ঘুম তাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। তন্দ্রা যখন পুরোপুরি ছুটে গেলো তখন বিপদ কেটে গিয়েছে। আমি নিজেকে বেশ কয়েকটা মাঝারি আকৃতির তাবুর মাঝে একটা ফাঁকা জায়গায় আবিষ্কার করলাম। আমি তখনো বসে আছি জিপের ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটটায়। জিপের সামনে একটা আগুনের কুÐলী। আগুনে কাঠ ফাটার পট্ পট্ শব্দ হচ্ছে। একজন কৃষ্ণাঙ্গ একটা ধূসর হাফপ্যান্ট আর সাদা গেঞ্জি পরে আগুনের কুÐলীর পাশে পা গুটিয়ে বসে আছে।
আমার সাথে থাকা শে^তাঙ্গ যুবক চাবি ঘুরিয়ে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করলো। আগুনের লাল-কমলা আলো কালো মানুষটার মুখে অদ্ভুত আলো ছায়ার খেলা খেলছে। আগুন থেকে সৃষ্টি হওয়া ধোয়া পাক খেয়ে খেয়ে অনেকটা ওপরে উঠে মিলিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকে দেখে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক উঠে দাঁড়ালো। গলা উঁচিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে বললো, ব্রায়ান, কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?
আমি বুঝলাম, আমার শে^তাঙ্গ বন্ধুটার নাম ব্রায়ান। ব্রায়ান আমার দিকে তাকালো। বললো, আর ইউ ওকে মাই ফ্রেন্ড?
আমি ওপর নিচ মাথা ঝাঁকালাম।
আমাদের কৃষ্ণাঙ্গ বন্ধু জিপের কাছে এগিয়ে এসেছে, কী হলো? কোথায় গিয়েছিলে কাউকে কিছু না বলে?
ব্রায়ান ঠোঁট ওল্টালো, বনের মধ্যে একটু হাওয়া খাবো ঠিক করেছিলাম। বুদ্ধি অবশ্য রায়হানেরই ছিলো। হাওয়া খাওয়ার সাথে সাথে কয়েকটা সিংহীর তাড়াও খেলাম। একটার সাথে আরেকটা ফ্রি।
কৃষ্ণাঙ্গ যুবক বললো, এটা একদমই ঠিক করলে না। সবাইকে ঘুমে রেখে কাউকে না জানিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলে, তোমাদের জিপের শব্দ শুনেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো। তাবু থেকে বের হয়ে দেখি তোমরা নেই। তোমাদের তাবুদু’টো ফাঁকা। তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। ক্রিস্টোফার জানলে খুব ঝামেলা হয়ে যেতো। ভাগ্য ভালো, সে ডিনারের পর থেকে মড়ার মতো ঘুমাচ্ছে।
আমি জিপ থেকে নামলাম। বললাম, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আমি কোথায় থাকবো ?
কৃষ্ণাঙ্গ যুবক আর ব্রায়ান আমার কথা শুনে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো। কৃষ্ণাঙ্গ যুবক বললো, তুমি ঠিক আছো রায়হান?
আমার কিছু মনে পড়ছে না।
ব্রায়ান কুবোর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো, বেচারা মনে হয় ভয় পেয়েছে। জিপেই দেখলাম কেমন অচেতন একটা ভাব তার মধ্যে। কুবো, তোমার তাবুতে কি কফি আছে ?
কৃষ্ণাঙ্গ যুবক মাথা দোলালো, হ্যাঁ। আছে অল্প একটু।
তুমি তাহলে একটু কফি বানিয়ে দিতে পারবে রায়হানকে ? বেচারাকে কেমন উদভ্রান্ত লাগছে দেখতে। কিছু একটা ঠিক নেই ওর মধ্যে।
আমি বললাম, কফি লাগবে না। আমি ভয় টয় পাই নি। আমার মাথাটায় যন্ত্রনা করছে। কুবো, আমাকে একটু আমার তাবুতে দিয়ে এসো না ধরে ?
এই পর্যায়ে এমন একটু অভিনয় করতে হবে। আমি যদি বলি, আমি অন্যভূবনের মানুষ... নেহাৎই পাগল ঠাউরাবে আমাকে। তারচেয়ে বরং অসুস্থ হওয়ার ভান ধরা ভালো।
কুবো নামের কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের কাঁধে ভর দিয়ে আমি মাঝামাঝি একটা তাবুতে ঢুকলাম। তাবুর ছাদে একটা লণ্ঠন ঝোলানো। প্রায় নিভু নিভু আগুন জ¦লছে। তেলে ডোবানো সলতে উঠিয়ে লণ্ঠনের আলো বাড়িয়ে দিলো কুবো। তাবুর এক কোণায় একটা ছোট ফোল্ডিং চেয়ারের ওপর গাদা মেরে বেশ কিছু বই রাখা। জ্যুলজির কিছু কঠিন কঠিন বই। একটা বড় ব্যাকপ্যাক, একটা পুরোনো রাইফেল আর কিছু খুঁটিনাটি জিনিসপত্র রাখা। তাবুর মাঝামাঝি একটা স্লিপিং ব্যাগ। আমি কুবো নামের মানুষটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্লিপিং ব্যাগের ভেতর ঢুকে গেলাম। কুবো বললো, ওষুধ খাবে? দেবো আমি কিছু এনে?
আমি বললাম, না। তুমি শুধু একটু কষ্ট করে আগুনটা কমিয়ে দিয়ে যাও। তাতেই হবে।
লণ্ঠনের আগুন কমিয়ে দিয়ে কুবো তাবু থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি হামাগুড়ি দিয়ে একটু এগিয়ে এসে তাবুর জিপার টেনে দিলাম। এরপর আবার স্লিপিং ব্যাগে ঢোকামাত্রই রাজ্যের ঘুম আমাকে গ্রাস করে নিলো।
আয় ঘুম আয়। আমার চোখেমুখে আয়। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। আর এই ঘুমের মধ্যে আবার বডি সুইচ হলো। আমি আমার পৃথিবীতে ফিরে এলাম আর অন্য পৃথিবীর রায়হানের সত্ত¡া তার নিজের পৃথিবীতে ফিরে গেলো।
আচ্ছা, আসলেই কি আমার বডি সুইচিং বলে কিছু হয়, নাকি আমি ¯্রফে অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি ? কিন্তু স্বপ্নের স্মৃতি তো এত পরিষ্কারভাবে মস্তিষ্কে গেঁথে থাকে না। হতে পারে সবটাই আমার মস্তিষ্কের অতিরঞ্জিত কল্পনাশক্তি যেটা আমার ভেতর পুষে রাখা ইচ্ছাগুলোকে অবচেতন অবস্থায় আমার কাছে অতি বাস্তব কোন জগতের রূপে প্রকট করে তুলছে। হতে পারে আমার সুপ্ত আকাক্সক্ষাগুলোই আমার মস্তিষ্কের ভেতর প্রতিনিয়ত ভিন্ন ভিন্ন জগৎ তৈরি করে চলেছে।
আমি আড়মোড়া ভেঙ্গে বিছানা ছাড়লাম। আমি এত ভোরে সাধারণত উঠি না। ইউনিভার্সিটিতে নয়টায় ক্লাস থাকে। মোবাইল ফোনে রিপিটিভলি অনেকগুলো অ্যালার্ম দিয়ে রাখবার পরেও ঘুম ভাঙ্গবে আটটার কাছাকাছি সময়ে গিয়ে। ঘুম ভাঙ্গার পর তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হওয়া, খেতে বসে বাবা মায়ের সাথে অহেতুক ঘ্যানঘ্যান করা শুক্র- শনিবার ছাড়া বাকি পাঁচদিনের রুটিনমাফিক কাজ। অনেক দিন তো কিছু না খেয়েই ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে যাই। আজ অনেকদিন পর ভোরের সূর্য দেখলাম আমি।
ডাইনিং টোিবলে বাবা মা বসে চা খাচ্ছিলেন। আমাকে চোখ ডলতে ডলতে নিজের রুম থেকে বেরোতে দেখে তারা এক মুহূর্তের জন্য চা খাওয়া বন্ধ করে আমার দিকে আড়চোখে তাকালেন। আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, কী দেখো এভাবে তোমরা ?
বাবা বললেন, এখন সুস্থ আছিস তুই ?
আমার আবার কখন কী হলো ?
মা তার চায়ের কাপে চুমুক দিলেন, কালকে সন্ধ্যা থেকে যা করলি তুই!
আমি আবার কী করলাম ?
ইউনিভার্সিটি থেকে এসে বিকেলে ঘুম গেলি বুঝলাম। ঘুম থেকে উঠলি মাগরিবের পর। উঠেই তুই কেমন সারা ঘরে লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটাহাঁটি শুরু করলি। আমি জিজ্ঞেস করলাম যে তোর কী হয়েছে। তুই কী বললি, জানিস?
আমার ঘুমঘুম ভাব একদম কেটে গিয়েছে, কী বললাম মা ?
তুই বললি, তুমি এখানে কী করছো ? আমি এখানে কেন ? তোমার মাথায় পাকা চুলের গোছা কোথায়, চুলে কলপ কখন করলে ? আমি প্রথমে ভাবলাম তুই অসময়ে ফাজলামি করছিস। খুব রাগ হলো। তোর বাবা ছিলো বাজারে। রাত আটটার দিকে মানুষটা বাসায় আসার পর তুই কী করেছিস, জানিস ?
আমি শুকনো গলায় বললাম, কী ?
তুই হঠাৎ পাগলের মতো এমন চিৎকার চ্যাঁচামেচি শুরু করলি যে দু’জনই ভয় পেয়ে গেলাম। তুই বারবার অনেকগুলো প্রশ্ন করছিলি; তোমরা এখানে কেন, আমরা কোথায়, আমার ভাই কোথায়, ও ঠিক আছে তো, আমাদের সবার বয়স এত কমে গেল কীভাবে। তুই বল, এসব কথার কোন মানে হয় ? রাশেদ যে বোর্ডিং স্কুলে পড়ে সেটা তোর অজানা নয়। এমন তো না যে তুই গতকালই এই দুনিয়ায় নতুন এসেছিস। ওকে দেখতে না পেয়ে তোর অস্থিরতা আরো বাড়ছিলো। আমরা কত বুঝালাম, তুই কোন কথাই শুনলি না।
এতগুলো কথা একসাথে বলে মা হাঁপিয়ে উঠেছেন। আমি বড় বড় চোখে বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
বাবা বললেন, আমরা ভাবছিলাম তোকে আজ সকালটা পর্যন্ত দেখার পর কোন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যাবো। এখন তুই ঠিক আছিস তো ?
আমি মাথা নিচু করে বললাম, জি বাবা।
দেখ কোন সমস্যা হলে বল। তোর কি কোন কাজের চাপ যাচ্ছে খুব ?
না বাবা। আমি ঠিক আছি। জানি না কেন এমন করলাম কাল।
অসুস্থ মনে হলে আজকের দিনটা থাকুক। রেস্ট নে। একটু সময় দে নিজেকে। ক্লাসে যাওয়ার দরকার নাই।
না বাবা। আমি ঠিক আছি। আমি কি আর কিছু বলছিলাম ?
বাবা উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। খুব অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলছিলি তুই। তুই নাকি আফ্রিকাতে ছিলি। সম্ভবত কঙ্গো বা এমন কোন দেশের কথা বললি। তুই নাকি ফিল্ড জ্যুলজিস্ট। এমন সব উদ্ভট কথা।
এক মুহূর্তের জন্য আমার মনে হলো, আমি আর দাঁড়াতে পারছি না। এখনই ধপ করে মেঝেতে পড়ে যাবো। আমি বললাম, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। মা, একটু চা বানিয়ে দাও না কড়া লিকার দিয়ে। মাথার ভেতরটায় কেমন চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। মাথাটা কেমন ভারী ভারী লাগছে।
আজ ইউনিভার্সিটি যাওয়ার জন্য কোন তাড়াহুড়ো করতে হলো না। বাবা মা’র সাথে অহেতুক চ্যাঁচামেচিও হলো না। আমি এমনিতেই ডিপার্টমেন্টের তেমন একটা ভালো ছাত্র না। ক্লাসের পেছনের সারিতে বসে যে ছাত্রগুলো হা করে বোর্ডে প্রফেসরদের আঁকিবুকি দেখে আার কিছুক্ষণ পর পর বেশ শব্দ কওে ঢোঁক গেলে, আমি সেই দলের। সেদিন আমি ক্লাসরুমের সামনে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে ঢোঁক গিললাম না। ক্লাসের ডানপাশের জানালা দিয়ে পাহাড় দেখা যায়। সবুজ পাহাড়। আর সাথে একফালি আকাশ। আমি নিষ্পলক আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ফলাফল হলো, সেদিনের চারটা ক্লাসের মধ্যে দু’টো ক্লাসেই আমাকে স্যার ক্লাসরুম থেকে বের করে দিলেন আর বাকি দু’টো ক্লাসে আমি অর্ধেক সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
দুপুরে ক্ষিধে পেলো না। খাওয়ার রুচি হলো না। ফ্যাকাল্টির সামনে জসিম ভাইয়ের দোকানে বসে একটা বনরুটি আর এক কাপ চা খেয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিলাম।
আমার সাথে এমনটা কখনো হয় নি। প্রতিবার আমি এসব নিজের অবচেতন মনের কল্পনা আর অতি বাস্তব কোন স্বপ্ন বলে উড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যায় আমার সাথে যা যা ঘটেছে তা কি নিছকই স্বপ্ন ? আমি জানি না। আমি কি মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছি ? ভয়াবহ কোন মানসিক রোগ কি আমার ভেতর বাসা বাঁধেেছ ? এই একটা সন্ধ্যা, একটা রাত আমার মনের ভেতর অনেকগুলো প্রশ্ন ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। সেই প্রশ্নগুলো আমার মাথার ভেতর থেকে থেকে খচখচ করেই যাচ্ছে।
সন্ধ্যায় একটা টিউশনি ছিলো, আমি গেলাম না। নিজের রুমে ঝিম মেরে বসে রইলাম। আমার একটা ডায়রি আছে। বহুদিন হয় কিছু লিখি না। আজ ভাবলাম, কিছু লিখে রাখা দরকার। মাথার ভেতর ঘুরপাক খেতে থাকা এলোমেলো প্রশ্নগুলোকে গোছানো দরকার।
ডেস্ক ঘেটে ডায়রিটা বের করলাম। অনেকদিন ডেস্কের ভেতর থেকে ডায়রির মলাটের ওপর ধুলোর পুরু আস্তরণ পড়বার কথা। কিন্তু সেই ধুলোর আস্তরণ নেই। মনে হচ্ছে, ডায়রিটা অতি সম্প্রতি খোলা হয়েছিলো। কেউ মলাটের ওপর জমে থাকা ধুলোর আস্তরণ পরিষ্কার করেছে। কিন্তু, আমাদের বাসায় আমার জিনিসপত্রে আমি ছাড়া কেউ হাত দেয় না। আমি ডায়রির পাতা ওল্টালাম। ডায়রির একটা পাতা ভাজ করা। কিছু একটা নতুন লেখা হয়েছে। পরিষ্কার গোটা গোটা হাতের লেখা। আমি পড়লাম :
দিন তারিখ : অজ্ঞাত
স্থান : চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
আমি রায়হান। রায়হান উদ্দীন শিকদার। একজন ফিল্ড জ্যুলজিস্ট হিসেবে কাজ করছি। আজ বিকেলেও আমি ছিলাম কঙ্গোর একটা জঙ্গলে। আফ্রিকান ফ্রেশওয়াটার ম্যানাটি নিয়ে গবেষণার জন্য আমেরিকান একটা টিমের সাথে এসেছি। কিন্তু আমি এখন আছি বাংলাদেশে। চট্টগ্রামে। অথচ আমি দেশ ছেড়ে গবেষণার জন্য বিদেশে পা দিয়েছি বেশ ক’বছর হলো। এমনটা হওয়ার কথা না। এটা কোন লজিকেই পড়ে না। এখানে কীভাবে এলাম, কখন এলাম তাও জানি না। একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখানে আমার আর আমার পরিবারের সবার বয়স বেশ ক’বছর কমে গেছে। আমি বুঝতে পারছি না আমার সাথে কী ঘটছে। সারাদিনের কাজ শেষে বিকেলে তাবুর ভেতর শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙ্গার পর দেখি, আমি বদলে গেছি। আমার চারপাশের সবকিছু বদলে গেছে। আমার ভেতরটা বড় অস্থির হয়ে আছে। গুছিয়ে কিছু লিখতে পারছি না। সবকিছু কেমন অচেনা লাগছে। আমি খুব ভয় পাচ্ছি।
আচ্ছা, আমি কি স্বপ্ন দেখছি ? আমার সাথে এসব কী হচ্ছে ? আমি কে ?
ডায়রির লেখা এখানেই শেষ। আমি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে ডায়রিটা আমার ডেস্কে ঢুকিয়ে রাখলাম।
আমি কে ?
(চলবে)
কিছু বুঝলাম না ভাইয়া
Replyআসসালামু আলাইকুম, এটার প্রথম অংশটা পড়লে দেখবেন গল্পের নায়কের নাম আমার নামে দিয়েছিলাম। কিন্তু যখন থেকে এটা ধারাবাহিকভাবে লেখার চিন্তা শুরু হয় তখন মূল চরিত্রের নাম বদলে দিয়েছি। একারণে দুঃখিত। আসলে এটা ছোট একটা অংশবিশেষ। আর সামনে আরো অনেকগুলো পর্ব দেওয়া হবে। এটা একটা উপন্যাসের মতো। আশা করি, আগামী পর্বগুলোতে আপনাদের কনফিউশন দূর করতে সক্ষম হবো।
Replyলেখাটা অল্টার্নেট ইউনিভার্স বা সমান্তরাল মহাবিশ্ব আর টাইম ট্রাভেল নিয়ে লেখা।
ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম
ReplyPorer porbo koi bro?
Reply