মায়া..............পবিত্র কুমার দাস (ঈদ সংখ্যা ২০২০)

আমাদের অনেকের বাড়িতেই গৃহপালিত জন্তু আছে ; আর ত়াদের ভালবাসেনা এমন লোক খুব কমই আছে ! তবে ত়াদের মধ্যে আমার মনে হয় কুকুরের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি ! যদিও আমিও তার বাতিক্রম ছিলাম না , কিন্তু ছোটবেলা ক্লাস সিক্সে পড়াকালীন রাস্তায় একটা কুকুর কামড়ে দেওয়ায় পেটে গুনে গুনে ইয়া বড়ো বড়ো (পশুকে দেবার মতো) চৌদ্দটা ইনজেকশন হজম করার পর থেকে সেই ভালোবাসা বর্তমানে ভয়মিশ্রিত দুৰ্বলতা হয়ে যদ্দূব় সম্ভব দূর থেকেই সমীহ করে ভালোবাসায় এসে দাড়িয়েছে !
যাইহোক, পক্ষকাল আগে আমার ছেলে হঠাতই খুব ছোট ছোট দুটি বাচ্চা খরগোস নিয়ে এসে হাজির ! আমরা তো অবাক ! এত্তো ছোট ছোট বাচ্চাগুলো নিয়ে কি করবি জিগ্যেস করতেই বললো,"কেনো,পালবো |
"বললাম, "ঠিক আছে কিন্তু এগুলোতো দুধেব় বাচ্চা, বাঁচবে কি ?"
ছেলে বললো, "হ্যা বাঁচবে, লোকটা বলেছে |" 
বললাম, "দোকানদাব়তো সেকথা বলবেই |" 
অগত্যা, কি আর করা ! ছেলের মুখের দিকে চেয়ে ওর আবদার মেনে নিতেই হলো ! যাইহোক, খরগোস দুটো নিয়ে দিনগুলো মোটামুটি খারাপ কাটছিল না ! বরং যতো দিন যাচ্ছিল ঠিক ততো বেশি ভালো লাগছিল ! ঠিক যেন ঘব়ে বাচ্চা পালার মতোই আনন্দ ! কোন খরগোসটা কি করছে, কোনটা কি খাচ্ছে, ঘুমিয়েছে না জেগে আছে, আনন্দে লাফাচ্ছে না কি মুখ গুমড়ো করে ঘরের এক কোণায় বসে আছে
.....এইসব বাড়তি আলাপ-আলোচনায় আমরাও ধীরে ধীরে মহানন্দে মেতে উঠলাম ! ছেলে কলেজ চলে গেলে আমরা বুড়ো-বুড়ি দুইজন সাধাব়নত যে যার যাব় কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম | আর কোনো কাজ না থাকলে কেউ TV বা কেউ FB নিয়ে থাকতাম | তাই তখন আমাদের দুজনেব় মধ্যে কথাবাৰ্তা বলতে গেলে প্রায় হতোই না | তাছাড়া সুদীর্ঘ একত্ৰিশ বছর বিবাহিত জীবনে প্ৰায় কোনো কথাইতো আর না-বলা রয়ে যায় নি ! কিন্তু বাড়িতে খরগোস দুটি আসার পর থেকেই যেনো তার বাতিক্রম দেখা গেলো | কাব়ন, আমরাও তখন TV/FB থেকে মাঝে মাঝে স্বেচ্ছায় বিরতি নিয়ে খরগোশের দিকে মন দিয়ে ঐসব আলাপ-আলোচনায় মেতে উঠলাম ! খরগোশ দুটি আমাদের দুজনের সম্পর্কের মধ্যে ঠিক যেন একটা বাড়তি সেতুর মতোই কাজ করতে লাগলো ! তা বেশ ভালোই যাচ্ছিল দিনগুলো ! কিন্তু দশদিন পর হটাতই ঘটলো একটা অঘটন ! ছোট খরগোশটা মারা গেল ! আমাদের মন বেশ খারাপ হলো.....আব় সবচেয়ে বেশি মন খারাপ হলো আমার ছেলের ! কারণ ও প্রায়ই খব়গোশ দুটোকে কোলে তুলে নিয়ে মোলায়েম কব়ে গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতো ! কি আর করা ! অবশেষে মেনে নিতেই হলো ব্যাপারটা ! ছেলের মন খারাপ দেখে ভাবলাম, এই দশদিনেই যদি এতো মায়া, এতো ভালবাসা জন্মায় ত়া হলে যাঁরা অনেকদিন ধরে গৃহপালিত জন্তু পালে তাদেব় সেই প্ৰিয় পোষ্য জন্তুটি মারা গেলে হয়তো তাঁব়া ঠিক স্বজন হারানোর মতই কাঁদে ! !

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট
July 25, 2020 at 9:17 AM

আসলেই তাই যখন বাড়ির কোন পশুপাখি মারা যায় তখন খুবই কষ্ট লাগে। আমার কতোগুলো কুকুর মরে গেছে আর প্রতিবারই মনে হয়েছে আমিই বুঝি মরে গেছি। এটা খুবই স্বাভাবিক।

অনিকা,
এলিফ্যান্ট রোড ঢাকা।

Reply
avatar