রোমাঞ্চের হাতছানি (প্যাংগং লেক)..................সেমন্তী ঘোষ (কোলকাতা)

রোমাঞ্চকর,রোমহর্ষক...প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যে আচ্ছাদিত পৃথিবীর স্বর্গ।এক অপার্থিব মায়াজালে ঘেরা রং-বেরঙের বরফাবৃত পাহাড় আর শীতল মরুভূমির মায়াতান।প্রকৃতির নিরাভরণ রূপে অনুপম ঐশ্বর্যে অতুলনীয় মোহময়তা।কখনো তা মহাদেবের মতো ধ্যানগম্ভীর কখনো বা পার্বতীর মতো লাস্যময়ী। বৈপরীত্যের মধ্যে ঐক্যের মহনীয়তা,রূপের বিচিত্রতায় বৈচিত্র্যময়তা -স্বপ্নবিভোর প্যাংগং লেক।মায়াবী নেশায় চোখ ধাঁধানো নীলের বিচিত্র রং আর কিছু বালুকারাশি। খন্ড খন্ড নীল মেঘের আনাগোনা,রুক্ষতার মধ্যে অপরূপ সৌন্দর্য আর নিঃসঙ্গতার মিলনে নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ হৃদয়.....

"...পাষাণের স্নেহধারা তুষারের বিন্দু
ডাকে তোরে চিতরোল উতরোল সিন্ধু..."

একদিকে নীলাভ প্রকৃতি অন্যদিকে তুষারে ঢাকা গিরিশৃঙ্গ।সমগ্র রাস্তাজুড়ে কর্মরত বি.আর.ও। লে থেকে প্রায় 154 কিলোমিটার দূরত্ব।যেতে লেগে যায় সাড়ে 5 থেকে 6 ঘন্টা।বরফে আচ্ছাদিত রাস্তা অতিক্রম করে প্রথমে পড়ে বাংলা পাস চাংলা পাস।পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম গাড়ি চলার পাস। উচ্চতা
আনুমানিক 17668 ফুট।উচ্চতাজনিত কারণে অক্সিজেনের সমস্যা হয়,তাই বরফ দেখে বেশি উন্মাদনার প্রকাশ না করাই ভালো।রুক্ষ পাহাড়ের ঢাল আর পাহাড়ের চূড়া সবটাই এখানে বরফে মোড়া।রয়েছে সেনাবাহিনীর ক্যাফেটেরিয়া আর মেডিকেল চেকআপ ইউনিট। সেখান থেকে আবারও এগিয়ে চলা,পথে পড়বে তাং সে ;প্যাংগং এর পথে শেষ হেলথ সেন্টার এটি। 
অল্প কিছু গাছপালা থাকায় এখানে শ্বাসকষ্টের সমস্যা কম। যদি কেউ সেরূপ সমস্যায় পড়েন তারা এখানে থেকে পরের দিন এখান থেকেই প্যাংগং দেখে আসতে পারেন। তাং সে কে পিছনে ফেলে বেশ কিছুদূর অগ্রসর হলেই দেখা মিলবে ম্যারমেটের। ইঁদুরের থেকে আকৃতিতে বড় এবং খরগোশের তুলনায় ছোট ভারী সুন্দর দেখতে এক ভীতু প্রাণী। ক্যামেরাবন্দি করার আগেই গাড়ির আওয়াজে ঢুকে পড়ল গর্তের মধ্যে। অবশেষে পৌঁছানো স্বপ্নের প্যাংগং-এ। টেন্টে কর্মরতদের সাদর অভ্যর্থনা। সাজানো গোছানো সুন্দর টেন্ট। প্রবল শীতল বাতাস এখানে অক্সিজেন প্রায় নেই বললেই চলে। অক্সিজেন
সিলিন্ডার সঙ্গে রাখা শ্রেয়। লেকের একদম সামনেই টেন্ট। (যদিও এখন জায়গা পরিবর্তিত হয়েছে )অপূর্ব নীল আবরণের টলটলে জল।
 পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতম লবণাক্ত জলের হ্রদ। মহীখাত তথ্য অনুযায়ী বর্তমান হিমালয় যেখানে সেখানে ছিল টেথিস সাগর একটি অগভীর সমুদ্র। প্রচণ্ড চাপে সাগরের বুকে পলি জমে হিমালয় পর্বত উত্থিত হয় । চিরকালের জন্য হারিয়ে যায় টেথিস সাগর। কিন্তু হিমালয় তার প্রাকৃতিক স্বভাব ভুলতে পারে না সে কারণেই হয়তো জলের স্বাদ নোনতা।স্বচ্ছ নীল
লেকের গায়েও নুন জমে থাকতে দেখা যায়।এই লেকের 35 শতাংশ ভারতে রয়েছে আর বাকি 65 শতাংশ তিব্বতে চীনাদের অধীনস্থ। বলিউডের বিখ্যাত সিনেমা থ্রি ইডিয়টস'-এর শেষভাগের শুটিং এখানেই হয়েছিল। লেকের জলে বেশ কিছু শিগূল পাখির আনাগোনা এক অন্যরকম মাত্রা বহন করে আনে।জায়গায় চোখে পড়ে আর্মি টহল। 
ধারাবাহিক রুক্ষতার মধ্যে নীলের মহিমা আচ্ছাদিত এই লেক সত্যিই অনন্য। তাই বাঁধা পথের বাঁধন ছেড়ে এক টুকরো স্বপ্ন খুঁজে নিতে 'বসন্তের বিনিদ্র রাত্রি' দূর আকাশের দুরন্ত সীমায় 'অভিসারে চলে _ভিজে শীতল পাহাড়ি হাওয়া কে সঙ্গী করে,মন ক্যামেরার সাথে হাতের ক্যামেরায় বন্দি হয় প্রকৃতির সংরাগের সেসব সুখকর স্মৃতি----

চিত্র ও তথ্য :পৃথ্বীশ।

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট
October 17, 2020 at 5:41 PM

পড়ে মনে হল চলে গেছি, এত প্রানবন্ত লেখা। আরও লিখুন আমাদের জন্য।

Reply
avatar
October 17, 2020 at 6:08 PM

Nischoi chesta korbo...sathe thakun..sahitye thakun..

Reply
avatar
October 19, 2020 at 10:24 PM

Khub sundor r Vlo lagche👌👌😊...

Reply
avatar
Anonymous
October 22, 2020 at 12:22 AM

উফ মোহিত হয়ে গেলাম কাশ্মীরী সৌন্দর্যে। লিখুন

Reply
avatar
প্রবীর দাস, মহূয়া স্টোর, বেহালা, কোলকাতা
October 26, 2020 at 9:09 AM

জানি যে ঠান্ডায় অক্সিজেন বেড়ে যায়। আর গরমে কমে। এখানে উল্টো?

Reply
avatar
October 26, 2020 at 3:01 PM

High altitude e oxygen problem sab jayga tei hoy..

Reply
avatar