“তারপর অনেকগুলো আঁকিবুঁকি, কাছে নিয়ে মিলানোর চেষ্টা করল সুহৃদ, বুঝতে পারলো ভালবাসি লেখা। পরের পৃষ্ঠায় ও ঠিক এমন ভাবে আঁকিবুঁকি। একের পর এক পৃষ্টা উল্টাতে লাগল আর লেখাগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো, সুহৃদের মনে হল অক্ষর গুলোর উপর জলের ফোটা ফোটা,পরক্ষণে টের পেল ওর চোখ থেকে টুপটুপ জলের ফোটা গড়াচ্ছে।ও কান্না মুছলো না, ডাইরির মাঝে বিষাদগ্রস্ত হয়ে ডুবে যেত লাগল জলের ফোয়ারা মেখে, অনুপমার অনুভূতির শব্দঁগাথায়।”
সকাল সকাল
কুরিয়ার সার্ভিস অফিস থেকে ফোন এলো, ঘুমে চোখ মেলে তাকাতে পারছে সুহৃদ! অনেকটা
বিরক্তি নিয়ে ফোনটা ধরলো।ওপাশ থেকে শুনতে
পেল আপনার একটা পার্সেল এসেছে, একটু কষ্ট করে নিয়ে যাবেন।সুহৃদ ভাবতে লাগলো কে পাঠালো পার্সেল আবার, পরিচিত কেউ পাঠালে তো ফোন দিয়ে
বলত। অনেকটা অবাক হলো আবার খুব আগ্রহ হলো বিষয়টা
জানার জন্যে।
বিকেলের রোদ পড়ে
এলো, সুহৃদ হাঁটছে কুরিয়ার অফিসের দিকে, ছোট্ট একটা
পার্সেল,
হাতে নিতেই মনে হল একটা
বই। বিরক্তিভাব নিয়ে মনে মনে বলল একটা বইয়ের জন্যে
এতদূর হেটে আসাটাই বৃথা গেল তাও কে পাঠিয়েছে তার ইয়ত্তা নাই।
অনুপমার বান্ধবী
নিলা, সেদিন বিয়ের অনুষ্ঠানের পর ওর রুমে গিয়ে ডাইরি টা পেয়েছিল, অনুপমা শ্বশুর
বাড়ি থেকেই নরওয়ে চলে যাবে, ডাইরিটা যাকে নিয়ে লিখেছিল অনুপমা সেই মানুষটিকে নিলা খুব
ভালভাবেই চিনে,সুহৃদের ঠিকানায় নিলা ই ডাইরিটা পাঠিয়েছে।
র্যাপিং পেপারটা
এক হিঁচকে টানে ছিড়ে ফেলল অনুপম, না এটা বই ছিল না একটি ডাইরি। পৃষ্ঠা ওল্টাতেই বড় বড় অক্ষরে দেখতে পেল লেখা 'Beloved Diary '। তারপর ছোট অক্ষরে এলোমেলো ভাবে লেখা
'' নিয়ন আলোয় ডাইরির ভাজে তোমায় চিঠি লিখছি ডাকবাক্স
বিহীন মনের ঠিকানায়, সবটুকু অনুভূতি দিয়ে লেখা শব্দ ছুঁয়ে দেখো বাতাসে, বেনামী খড়কুটো
ভেবে ছিঁড়ে দিও তখন। আমার কাকতাড়ুয়ার
অপেক্ষার দিনে এই চিঠি, আমি আর তোমাকে ঘিরে থাকা অনুভূতিগুলো পাহারা দিয়ে আগলে রাখে বুকের ভেতর শূন্যতাদের!
লেখাগুলো কেমন
যেন বিঁধে যাচ্ছিল ওর বুকের মাঝখানটায়, অথচ সুহৃদ জানে ও বেশ শক্তপোক্ত মানুষ। ও দ্রুততার সাথে পৃষ্ঠা গুলো উল্টাচ্ছিল কিন্তু লেখাগুলো
গভীর রেখাপাতে মুড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছিল। অনুপমার সাথে যোগাযোগ নাই তাও বেশ কয়েকবছর হলো, ঠিক মনেও নাই ওর কথা, তবে মাঝেমাঝে
মনে পড়ত অনুর সাথে এমন টা না করলেও তো হত! এইটুকুই, এর বেশি আর কিছু করেনি সুহৃদ!
দ্বিতীয় পৃষ্ঠা উল্টালো,
শুধু একটা তারিখ লেখা আর লেখা-
'কেমন আছো প্রিয়?'
তারপর অনেকগুলো আঁকিবুঁকি, কাছে নিয়ে মিলানোর চেষ্টা করল সুহৃদ, বুঝতে পারলো ভালবাসি লেখা। পরের পৃষ্ঠায় ও ঠিক এমন ভাবে আঁকিবুঁকি। একের পর এক পৃষ্টা উল্টাতে লাগল আর লেখাগুলো চোখের
সামনে ভেসে উঠতে লাগলো, সুহৃদের মনে হল অক্ষর গুলোর উপর জলের ফোটা ফোটা,পরক্ষণে
টের পেল ওর চোখ থেকে টুপটুপ জলের ফোটা গড়াচ্ছে।ও কান্না মুছলো না, ডাইরির মাঝে বিষাদগ্রস্ত হয়ে ডুবে যেত লাগল জলের ফোয়ারা মেখে, অনুপমার অনুভূতির শব্দঁগাথায়।
অভিযোগ, অভিমান, ঘৃণা, ভালবাসা সব ধরনের অনুভূতিই লেখা ছিল, ওর উদ্দেশ্যই বলা একেকটি শব্দ শেলসমের মত বিঁধতে
লাগল:
"প্রিয়!
ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে,বৃষ্টির ছন্দে নিঃশ্বাসের উঠানামায় তোমার নামের আওয়াজ
ধ্বনিত হচ্ছে মনের গভীরে! তোমাকে সারাদিন মনে নিয়ে হাটি, কাজে মন নাই, ঘুমিয়ে শান্তি নাই, সবখানে তুমি! আমি জানিনা কেন এত এত এত ভালবাসি তোমাকে! যখনি তোমার দুয়ারে ভালবাসা কাঙাল রুপে হাজির হই; অবহেলার সুনামি বইয়ে তাড়িয়ে দাও। কোথাও যাব বল? যাওয়ার জায়গা নাই, আমি ভেঙ্গে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাই, টুকরো অংশ কুড়িয়ে আবার যাই, আবার ভেঙ্গে দেও। ভেঙ্গে ভেঙ্গে আমি গুড়ো হয়ে গেছি সেই কবে, তোমার দুয়ারে পরে থাকি, তুমি ফিরিয়ে দেও। আমি আর তোমার দুয়ারে যাব না, যখনি বলি মনের কথা খুব করে শাসিয়ে দেও, আমার অভিমান অভিযোগ সব যেন আমারই, তুমি হয়ত কাউকে ভালবাস, আমি বুঝতে পারি। আমি তাই চলে যাব অনেক দূরে, দূরে থেকেও ভালবাসা যায়! কই তুমি দেখতে পাচ্ছ? পাবেনা, আমি অনুভব করছি আমি
কত ভালবাসি!এটাই আমার প্রাপ্তি, আমি লিখছি তোমাকে নিয়ে, এখানে কথা ফুরায় না আমার, আর তুমি ধমক দিয়েও ছুড়ে ফেলোনা আমায়, আমার নিত্যদিনের ডাইরি তুমি! ভালবাসার রংতুলি, যেমন খুশি রাঙ্গাবো, কেউ জানবে না, কেউ দেখবেনা, শুধু মনের ভিতরের তুমি আর তোমার ভালবাসার পাগলি আমি
ছাড়া!
কি করছ এখন তুমি? টেলিপ্যাথি দিয়ে খুঁজে দেখতে পাচ্ছি, তুমি বসে আছ আনমনে, কি যেন ভাবছ! কি ভাবছ? আমার কথা কখনো মনে
পড়ে? আমাকে কখনো অনুভব কর তুমি? জানিনা কিচ্ছু জানিনা, আমি শুধু তোমাতেই মগ্ন থাকি, তুমি ভালবাস কিনা উত্তর খুঁজিনি, তবে বুঝেছি তুমি আমাকে কখনওই চাওনি, খুজনি, আমার ব্যথায় নিলাভ হওনি। আমি কেবল ভেঙ্গে চুড়ে আমাকেই বর্ণনা করেছি। আমি এখন আড়ালে চলে এলাম, এবার একটু খুঁজবে কি? আমি ভাল আছি, আমার মন খারাপ নিয়ে
ভাল থাকি,
আমি একদিন চলে যাব ধরা ছোঁয়ার
বাইরে,
এত নিকটে ছিলাম বুঝোনি, তাই হারিয়ে গেলাম অন্য মঞ্জিলে! কথা বলতে
ইচ্ছে করছে, থাক আজ! পাগলের প্রলাপ কে শুনবে আর।।। সাবধানে থেকো, নিজের যত্ন নিও! ( ২৭/১০/২০১৬)
৩০/১০/২০১৬
৩/১১/১৬
তারিখগুলো মিলিয়ে
দেখল সুহৃদ ঠিক তিনবছর আগের লেখা, ভীষণ রকম অবহেলা তোলা ছিল অনুর জন্যে। যা কিছু বলত, কেবল বলা ই ছিল! একেক করে মনে পড়ে যাচ্ছে।মেয়েটার পাগলামি গুলো ভীষণ পীড়া দিয়েছিল তখন, সম্পর্কটা
ভেঙ্গে দিয়েছিল সুহৃদ ই।কিন্তু তখনো তো
অনেক কিছু বলত; কেবল হুম হ্যা বলেই এড়িয়ে যেত!
"তোমাকে খুব মনে পড়ছে, মন খুলে কতদিন কথা বলিনা। কি এক গোপন ব্যথা বয়ে বেড়াচ্ছি, এর নাম জানা নেই! এর শেষ কোথায় জানা নেই। আমি হেরেছি নিজের
কাছে, নিজের ব্যক্তিত্ব এর কাছে, কিন্তু ভালবাসার কাছে আমি বড্ড দূর্বল। এই ব্যথা ঠিক কতদিন বয়ে বেড়াতে হবে জানা নেই। তোমার বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে খুব। আমার কোন কান্নাই যে তোমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। এই নিঃশব্দ কান্না কিভাবে স্পর্শ করত? আমি ভুলতে পারিনা , আমি ছাড়তে পারিনা তাই নিঃশব্দে ভালবেসে যাই। এই ভালবাসার কে কি নাম দিবে জানিনা। আমি একা, এই রাতের ঝিঝিপোকার শব্দের মত একা, এই শব্দ কেউ শুনেনা। আমার দীর্ঘশ্বাস জানে
এই ব্যথার অনল, পুড়ে কেমন দগ্ধ হয়ে
আছে মন। কেন করছি আমি? কিসের জন্যে জানা নাই। এই মায়া থেকে মুক্তি চাই, এই কষ্ট থেকে মুক্তি চাই। আমি বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে চাই!
২৩/১১/১৬
৩/১২/১৬
৫/১২/১৬
১৮/১২/১৬
২০/১২/১৬
দু' একলাইন
কবিতার লাইন, দৈনন্দিন কথা এসব লেখা ছিল অনেক পাতায়।সুহৃদ একটা বিষয় খেয়াল করল লেখার কোথাও ঘৃণা নাই, কেবল অভিমান আর অভিযোগ আর
শূন্যতার ছড়াছড়ি। এভাবেই কি মানুষের
অনুভূতি গুলো হয় অপরজন ছেড়ে গেলে? এই মানুষটি কে সুহৃদ কষ্টের সিঁড়িতে তুলে দিল? খুব
অপরাধী লাগছে।
সুহৃদ ভাবতে লাগল এই অপরাধী লাগা এই অনুশোচনা শব্দে
পরিণত করলে কেমন হত? অনুর অভিমান রা খিলখিলিয়ে হাসতো? অনুর অভিমান ভালবাসার কাছে
এই অনুশোচনা চোখ মেলে তাকাবার সাহস পাবেনা। অনু কি এখনো এভাবে লিখে? কিভাবে লিখবে ডাইরীটা তো এখন সুহৃদের কাছে, বাকী
পাতা গুলো যদি লিখত কেমন হত ওর শব্দগুলো? সুহৃদের এই মুহুর্তে সে অনুভূতিগুলো খুব ছুঁয়ে
দিতে ইচ্ছে করছে, বলতে ইচ্ছে করছে আমি যাইনি কোথাও।
অনু বাকি পৃষ্ঠাগুলো
কেন লিখলোনা? সুহৃদের মনে হল এই পৃষ্ঠাগুলো অনুশোচনায় ভরিয়ে দেয়ার জন্যেই অনু লিখেনি। অনু কি এখনো এমন করে চায়? মানুষ একসময় অনুশোচনা
করে পিছনের আকুতির জন্যে, সেই অনুশোচনা গুলো যদি হয় নিজেকে অপরাধী ভাবা তবে সেটার থেকে
পরম তিক্ত কষ্ট আর নেই। এই অনুশোচনা
সুহৃদের পাওনা ছিল!
অনু জিতে গেছে, সুহৃদ স্পষ্ট দেখতে পেল ওর অভিমানরা হাসছে। সুহৃদ পৃষ্ঠা গুলো উল্টাতে লাগল! এ কেমন শাস্তি! নিজের স্বার্থের জন্যে সেই অনুকে কষ্ট দিল! ডাইরীটা স্পর্শ করতে ওর ভয় করছে এখন, এই বুঝি শেষ পাতায় লেখা ভেসে উঠবে আমি তোমাকে ক্ষমা করিনি! অনু যদি ক্ষমা করে দেয় তবে প্রকৃতি? প্রকৃতি তো কাউকে ছাড় দেয়না! প্রকৃতি এই শোধ তুলে দিল? নিজের ভিতর নিজে পিষ্ট হওয়া? প্রকৃতির শোধ বড়ই সুষ্ঠ.......
বাহ্ খুব সুন্দর লিখছো,এক সময় আমিও এমন ডায়রি লিখতাম🙂
Replyঅসাধারণ গল্প আপু।
Replyধন্যবাদ আপু!
ReplyMarvelous theme
Replyডাইরি লেখা একটি সুন্দর অভ্যাস❤️
Replyধন্যবাদ পাঠক!
ReplyDarun lekha. Aro amon golpi chai. Tobe hot golpo porte valo lage. Arektu hot kore likhben apu
Replyধন্যবাদ!
Replyঠিক বলেছেন মোবাশ্বের ভাই। আধুনিক সব লেখকরাই কিছু প্রেম কিছু সেক্স দিয়েই জনপ্রিয় হন। এ ধরনের লেখা পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। উনি হট বলতে এটা বোঝাচ্ছেন আপু। লেখার মাঝে কিছু সেক্স দিলে পড়তে ভাল লাগে।
Replyআরিফা সানজিদা বেশ ভালো লিখছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
ReplyBeautiful written Arifa Sanzidya
Replyভালবাসা নিবেন! ধন্যবাদ
ReplyThank you so much!
Replyডাইরির মধ্যে কি শুধুই ভালবাসা ছিল? পরের স্টোরী কি? শেষে কি হল?
Replyশুরু এবং শেষটা গল্পের ভিতরেই দেয়া আছে আপু, তবে এখানে অনুভূতি গুলোই বেশি প্রকাশ পেয়েছে। ধন্যবাদ
Replyলেখার প্রেক্ষাপট অনুযায়ী লেখার শব্দশৈলী সাজানো হয়, এখানে অনুভূতিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, আর অনুভূতি গুলোই শেষপর্যন্ত টিকে থাকে, ধন্যবাদ!
Replyপ্রকৃতির শোধ বড়ই সুষ্ঠ.......নাকি সুক্ষ? কেন প্রতিশোধ নেবে প্রকৃতি এটা বুঝিয়ে বললে ভালো হত।
Replyপ্রকৃতির শোধ সূক্ষ্ম এবং সূক্ষ্ম উভয়টাই, আমরা যা কিছু করি তা ফেরত আসেই অন্যরূপে, ভিন্ন উপায়ে। কারো অনুশোচনা হয়ে, কারো কষ্ট হয়ে। এখানে অনুকে দেয়া কষ্ট সুহৃদের কাছে অনুশোচনা হয়ে ফিরে এসেছে। প্রকৃতিই হচ্ছে আমাদের কর্ম। ধন্যবাদ!
Replyঠিকই বলেছেন
Replyভাল হয়েছে গল্পটা।
Replyভালবাসা নিবেন!
Reply