আমাদের গল্প.........................তুহিন রহমান

আমাদের গল্প.........................তুহিন রহমান
রজার ওপর দুম দুম শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। প্রথম বুঝতে পারলাম না কি ঘটছে। পরমুহূর্তে চোখ কচলে উঠে বসলাম। চোখে রোদ এসে লাগছে জানালা গলে। গতরাতে দেরী করে বাড়ি ফেরাতে খেয়েই শুয়ে পড়েছিলাম।

তাসমিদের টিয়া পাখি.....................মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন

তাসমিদের টিয়া পাখি.....................মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন
খুব ছোট্ট বেলা থেকেই তাসমিদের পাখির প্রতি অন্য রকমের এক দুর্বলতা রয়েছে। যখনই সময় পায় বারান্দার গ্রীলে দাঁড়িয়ে পাশের বড় নিম গাছে পাখির লাফালাফি দেখে। অনেক সময় কোনো চড়ুই পাখি ফুরুৎ করে গ্রীল দিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়লে সে খুশিতে টগবগ করতো।

এ মাসের রান্না ................................সাজিয়া শাহরীন বিনতে শাব্বির মৗন

এ মাসের রান্না ................................সাজিয়া শাহরীন বিনতে শাব্বির মৗন
উপকরণঃ এক কেজি গোশত (যে কোন গোশত ব্যবহার করতে পারবেন তবে গরু কিংবা খাসীর ক্ষেত্রে সময়টা একটু বেশি লাগবে), এক কেজি পোলাও’র চাল, গোল মরিচ এক চা চামচ, গোটা ধনে এক চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি পরিমাণ মতো, কাঁচা মরিচ, দারচিনি, এলাচ, কালো ফল (বড় এলাচ), স্টার এনিস, আদা বাটা দেড় চা চামচ, রসুন বাটা দেড় চা চামচ, গোলমরিচ গুড়া হাফ চা চামচ, লবণ স্বাদ মতো, তেল এবং ঘি পরিমাণ মতো। 

আমি এবং আমি....................আ, ন, ম, শাহরিয়ার জাওয়াদ

আমি এবং আমি....................আ, ন, ম, শাহরিয়ার জাওয়াদ
তিন ফুট লম্বা ঘাসের ভেতর ঘাপটি মেরে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। ঘুটঘুটে অন্ধকার। চারদিকে মশা পিনপিন করছে। মূর্তির মতো বসে জঙ্গলের মশার কামড় সহ্য করতে হচ্ছে। হাত নাড়িয়ে চারপাশের মশা তাড়াতে গেলেই ঘাসের বন নড়ে উঠবে। আর ঘাসের বন নড়ে উঠলেই যেকোনো নিশাচর শ্বাপদের চোখে পড়ে যাবো খুব সহজেই।

কুপন..........................রহিমা আক্তার মৌ

কুপন..........................রহিমা আক্তার মৌ
জ আমাদের বন্ধুত্বের দশ বছর পূর্ণ হলো। এই বন্ধুত্বের খবর জানেনা একমাত্র তাহসান। পুরো নাম তাহসান আর কিবরিয়া। ঘরে আমি কিবরিয়া নামে ডাকলেও বাইরে সবার কাছে ও তাহসান নামেই পরিচিত। দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে পিকনিকের আয়োজন করা হয় আমার বসবাসের পাশেই।

নুরী........................শাহানা ফেরদৌসী

নুরী........................শাহানা ফেরদৌসী
ধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে নুরী। দেখতে মোটামুটি সুন্দরী। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে নুরী তৃতীয়। জন্ম ঢাকাতেই। শৈশব ও কৈশোর ঢাকাতেই কেটেছে। যৌবনে পা রাখতেই তাদের পরিবার পাড়ি জমালো নোয়াখালীর এক মফস্বলে।

যখন সন্ধ্যা নামে......................কিউ নাহার

যখন সন্ধ্যা নামে......................কিউ নাহার

ম্যাম, হীরার ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে মায়ার!
-কিরে নৌকা ঠিক হলো ?
-জি ম্যাম ঠিক হয়েছে, আপনি আর ফাহিম নৌকায় গিয়ে বসেন আমি আসছি। 
-শোন একটা কোক নিস আর অবশ্যই পানি।

ভালবাসার যোগ বিয়োগ................শাহানা জাবীন সিমি

ভালবাসার যোগ বিয়োগ................শাহানা জাবীন সিমি
জ অনেক দিন পর দুপুরে পাক্কা দুঘন্টার একটা ঘুম দিল সে। বেশ ফ্রেশ লাগছে। হাতমুখ ধুয়ে মাইক্রোওয়েভে এক মগ পানিতে দুটো টি ব্যাগ দিয়ে বিকেলের চা টা বানালো।

স্বার্থই সকল স্বার্থকতা..................মুশফিকুর রহমান আবীর

স্বার্থই সকল স্বার্থকতা..................মুশফিকুর রহমান আবীর

পৃথিবীতে প্রতিটি সার্থকতার পিছনে স্বার্থই মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। পৃথিবীতে কোন কাজই নিঃস্বার্থভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, তেমনিভাবে প্রতিটি ভালোবাসার পিছনে স্বার্থই মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

এক করোনা যোদ্ধা ওসি মিজানুল..................প্রতিবেদন

এক করোনা যোদ্ধা ওসি মিজানুল..................প্রতিবেদন
কদিকে অপরাধী নিয়ে দৌড়ুদৌড়ি, অন্যদিকে অদৃশ্য এক শত্রুর সাথে যুদ্ধ। সাধারন মানুষ হলে তার সাথে পেরে ওঠা যায় কিন্তু যে বস্তু দেখা যায়না তার সাথে লড়াই করা আর বাতাসের সাথে লড়াই করা এক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

অপ্রতিম রাজীবের কবিতা......

অপ্রতিম রাজীবের কবিতা......
সে আর আমি
ইলু কে

সে তার খেলার কথা বলে যায়, আমি শুধু
স্বপ্নের স্রোতে ডুব দিয়ে অন্য এক পৃথিবীতে
মগ্ন হই, মেঘ দেখি, বৃষ্টি দেখি, অগ্নিগিরি দেখি,
আর সুইফট পাখি হয়ে আদিগন্ত চরাচর

আমিরুল আরহামের কবিতা........

আমিরুল আরহামের কবিতা........
ইয়াসিতে একদিন

সমস্ত একটা দিন কুয়াশায় কবুতরের ভিজে ডানায় ধুসর

পাতাশুন্য গাছের ডালে ডালে শীতের শাসন
দু পাহাড়ের ঘনবনে জেগেথাকা গীর্জার চুড়ায়
তিনটের ঘন্টাধ্বনি বাজতেই
কাকগুলোর কন্ঠে বাকের ভিয়োলোসেল।

ছায়াপথে ফিরো..............সুমন কল্যান

ছায়াপথে ফিরো..............সুমন কল্যান

ছায়াপথে ফিরো

আমি অসাধারন
হওয়ার চেষ্টা করিনি
তোমার কাছে
ভ্যানগগ বা
ভিঞ্চির তুলির টানেও

অমৃতা চট্টপাধ্যায়ের কবিতা

অমৃতা চট্টপাধ্যায়ের কবিতা


ফিরব বালকবেলা

অনেক দিন পর তোমায় লিখতে বসলাম-কেমন আছ?
শুনতে পাচ্ছ বালকবেলা?
আমকাসুন্দি রদ্দুরে দাও তুমি?
ঠাম্মার ছাদে বাড়ি পাহারায় আজও থাকো?

মারুফ আহমেদের দুটি কবিতা

মারুফ আহমেদের দুটি কবিতা

















উৎসর্গনামা

গোধূলি বয়ে যায়
প্রেমিকার ঠোঁটের মতো
অনিন্দ্যসুন্দর এই দিগন্ত
কেবলই আমার নতুন মনে হয়।

অনাবৃত কর..............আশিকুর রহমানের কবিতা

অনাবৃত কর..............আশিকুর রহমানের কবিতা
অনাবৃত করো সেই জ্বলন্ত
আবরণ
পৃথিবী মহা অসুখে
আজ, নিদারুণ অন্ধকার চারিদিক;

আতংক বার্তা................শ্রীলা পান্ডা

আতংক বার্তা................শ্রীলা পান্ডা
ময়ে অসময়ে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফেসবুক করা রোহিনীর একটা নেশা। বাকি সবকিছু ছাড়তে ছাড়তে আজ নিজের সব ভালো লাগাই হারিয়ে গেছে।

এক প্রচ্ছদ শিল্পী নিশার গল্প................প্রতিবেদন

এক প্রচ্ছদ শিল্পী নিশার গল্প................প্রতিবেদন
ছোট্ট একটা রুম। একটা মেয়ে গভীর আগ্রহে রং তুলিতে করে রঙ নিয়ে কাগজে আঁকিবুকি টানছে। তারপর সেগুলোকে স্ক্যান করে কম্পিউটারে নিয়ে ফটোশপে কাজ করে প্রিন্ট করে দেখছে কেমন হলো বইয়ের কাভারটা। কারন সামনে বইমেলা, প্রচুর চাপ প্রকাশকদের, লেখকদের। দ্রুত হাতে তাকে বইয়ের কাভার ডিজাইন করতে হচ্ছে। তার কাজের শেষ নেই। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি তাকে মাথার ঘাম ঝরিয়ে কাজ করে যেতে হচ্ছে। যার কথা বলা হচ্ছে সে বর্তমান প্রজন্মের একজন বুক কাভার ডিজাইনার নাহিদা নিশা। বাংলাদেশে যেক’জন হাতে গোনা নারী বুক কাভার ডিজাইনার রয়েছেন তাদের মধ্যে একজন এই নিশা। বয়সে কম হলেও তার অভিজ্ঞতা অনেক। ইতিমধ্যে তার কাজের অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ হয়েছে অসংখ্য বইয়ের কাভারে। বেশীরভাগ বইয়ের কাভার যদিও শিশুতোষ, তারপরও তিনি এরইমধ্যে নানা উপন্যাসের কাভারও করেছেন। তার প্রতিটি কাভার দৃষ্টিনন্দিত, বহুরঙা ও শৈল্পিক মানোতীর্ন। নিশা বলেন তিনি শিশুতোষ বইয়ের কাভার করতেই বেশী সাচ্ছন্দ বোধ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ২০০৭-৮ বর্ষের ছাত্রী নাহিদা নিশার পুরো নাম নাহিদা আক্তার নিশা। গ্রামের বাড়ি খুলনা। এখানেই বেড়ে ওঠা এবং বিভাগীয় শহরের চেনাজানা ছিল সব কিছুই। ইন্টারমিডিয়েটের গন্ডি পেরিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ উঠলো, নিশার প্রথম পছন্দই ছিল চারুকলা। আর তার বাবার পছন্দ ছিল নাট্যকলা। নিশা তখনও জানতেন না যে ঢাকার চারুকলা অনুষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত। তিনি ভাবতেন চারুকলা অন্য একটি সতন্ত্র একাডেমি।
এই ধারনাকে সঙ্গী করেই ঢাকা এলেন নিশা। উঠলেন ফার্মগেটে। এরপর চারুকলার শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত কর্মশালায় অংশগ্রহন করলেন। পরীক্ষা দিলেন কিন্তু তার ধারনা ছিল টিকবেন না। তাই তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আবারও ভর্তি পরীক্ষায় বসলেন। সেখানে টিকেও গেলেন। ক্লাস শুরু হয়ে গেল। কিন্তু বাবা যখন জানলেন যে নিশা ঢাকায় ভর্তি না হয়ে চট্টগ্রামে ভর্তি হয়েছে তখন কড়া ভাষায় তিনি ধমকালেন মেয়েকে। জানিয়ে দিলেন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হও নাহয় খুলনা চলে এস। তোমার পড়াশোনা করে কাজ নেই। 
বইমেলার কিছু বই এর কাভার
কিন্তু একগুঁয়ে নিশার খুব ইচ্ছে শিল্পী হবার। হঠাৎ একদিন ভাগ্যটা যেন খুলে গেল। নিশা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করছেন এমনি সময় ফোন এলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। জানানো হলো তিনি টিকে গেছেন। নিশা বিশ্বাস করলেন না যে আসলেই তিনি চারুকলা অনুষদে টিকে গেছেন যা তার চিরকালের স্বপ্ন হয়ে রয়েছে। তার মনে হলো কেউ তার সাথে দুষ্টুমি করেছে। অনেকেই বললো এটা হতে পারেনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এতোদিন পর ফোন করেছে মানেই হলো কোন প্রতারক এই ধরনের ফাঁদ পেতেছে। তারপর স্বপ্ন বলে কথা, নিশা সেই রাতেই এক কাপড়ে একটা ব্যাগ সম্বল করে চট্টগ্রাম ছাড়লেন। ঢাকা এলেন। চারুকলা অনুষদে গিয়ে জানলেন সত্যি সত্যি তিনি টিকে গেছেন সেখানে। তারপর তো কল্পনা সত্যি হবার গল্পই শুধু। 
নিশা বললেন,‘আমি ভাবতাম চারুকলা বা ফাইন আর্টস মানে কেবল জল রঙ নিয়ে কারবার। পরে দেখলাম সেখানে স্কাল্পচার সহ আরও অনেক বিভাগ রয়েছে।’ তবে যেহেতু তিনি সবসময় খুব কোমল মনের মানুষ তার কাছে রঙতুলি নিয়ে কাজ করাই শ্রেয় বলে মনে হতো।
তাই ওরিয়েন্টাল আর্ট বিভাগেই ভর্তি হলেন। সেখান থেকেই মাস্টার্স করলেন। মাস্টার্স পাসের পর তিনি পরিচয়ের সূত্র ধরে বিয়ে করলেন একজন শিল্পীকেই। সংসার জীবনে নিশা খুব একটা সময় দিতে পারেন না। কারন তার কাজই হলো বইয়ের কাভার নিয়ে। চারুকলায় পড়ার সময় চিন্তা করেছিলেন তিনি এমন কিছুর সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন যেখানে সবসময় ছবি আঁকাতেই থাকতে পারেন। বইমেলাতে গিয়ে যখন বইয়ের কাভারগুলো দেখতেন, মনের ভেতর গুনগুনিয়ে উঠতো-কেমন হতো যদি আমি এই কাভারগুলো বানাতাম! সেই স্বপ্ন থেকেই এগিয়ে চলা। এ পর্যন্ত অসংখ্য বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছেন নিশা ও ইলাস্ট্রেশন করেছেন।এগুলোর মধ্যে রয়েছে Room to read Bangladesh এর প্রকাশনায় ৬টি বই। কলা ছবি আঁকে, ময়ুর ও মূশিক, মুক্তার মালা, বানর ও পঙ্গপাল, বড় হই এবং সাজিয়ে তুলি উল্লেখযোগ্য। বাবুই প্রকাশনীর বুদ্ধিমান মোরগ ও বোকা কাকের গল্প। পুঁথিনিলয় প্রকাশনী থেকে বুলবুল চৌধুরীর সম্পাদনায় বাঙালীর রূপকথা। ছায়াবীথি প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে পর্বতাভিযানে ‘শ্বাসরুদ্ধকর পনেরো ঘন্টা,’ তুহিন রহমানের ‘মেঘ অরণ্য,’ মাহফুজা গোলন্দাজের ‘আকাশ নীলে ছড়ার ঘুড়ি,’ সাজ্জাদ ইমরানুল ইসলাম প্রধানের ‘ভূতের পিঠে মুক্তোর হাড়ি’, শাহরিয়ার সোহাগের ‘লং জার্নি,’ আশিকুর রহমান বিশ্বাসের ‘জোড়া কাক,’ ইফতেখার হালিমের ‘প্রিয় নেতা জাতীর পিতা,’ আলমগীর কবিরের লেখা ‘অনুভবে বঙ্গবন্ধু’, ‘আলোর দিশারী’ সহ আরও বহু বই যেগুলো তার নিজেরই কালেকশনে নেই। নিশা নবাগতদের ভেতর অনেক প্রচ্ছদ শিল্পীর চেয়ে এগিয়ে আছেন। প্রচ্ছদ শিল্পী হিসাবেই
তিনি নিজেকে এগিয়ে 
নিয়ে যেতে চান। রূপালী
ভারতে বেড়াতে গিয়ে....
পাতা যখন তাকে কাভারের মডেল হবার প্রস্তাব দিল তখন তিনি ম্রিয়মান হেসে বললেন এতো বড়ো বড়ো শিল্পী থাকতে আমি কেন?
সম্পাদকের আত্মভোলা উত্তরঃ আপনি তো তাদের ছাড়িয়ে গেছেন। তারচেয়েও বড়ো যুক্তি দিনের আলোতেই রঙধনু ওঠে, যদিও রঙধনু উজ্জ্বলতার দিক 
থেকে তাদের ছাড়িয়ে যায়না, তবে তার বাহারী রঙ ও বৈশিষ্ঠ্য তাকে আলাদা করে রাখে। আপনার প্রত্যেকটি প্রচ্ছদের যে ডিজাইন বা নকশা এবং যে বৈশিষ্ঠ্য সেটা অন্যদের থেকে আপনাকে আলাদা করেছে। অন্তত আপনার বয়সের তুলনায় আপনি অনেকটা এগিয়ে আছেন। 
নিশা বলেন, আমি যা কিছু করেছি তা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্যই করেছি। আর পড়াশোনা চলাকালেও আমি কখনও বসে থাকিনি। কোথাও না কোথাও চাকরি করেছি। আজিজ সুপার মার্কেটে একটা শপের ডিজাইনার হিসাবেও কাজ করেছি। প্ল্যান বাংলাদেশের একটা প্রোজেক্টে আমি আর্টের ট্রেনার ছিলাম। মূলত আমি একজন চিলড্রেন বুক ইলাস্ট্রেটর। আমার বাবা ও ভাই দু’জনেই নাট্যকর্মী এবং খুলনায় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত। পারিবারিকভাবে আমি এসব ব্যপারে অনেক অনুপ্রেরনা পেয়েছি যার জন্য আজ আমি এখানে আসতে পেরেছি।
ছবি আঁকায় নিমগ্ন নিশা
‘আঁকিয়ে খুঁজছি’ নামে পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দেখে প্রথম আমি একটি ওয়ার্কশপে যাই এবং সেই ওয়ার্কশপে ট্রেনিং নিয়ে আমি বুঝলাম যে আসলে বইয়ের কাভার আমরা যেমনভাবে চিন্তা করি মোটেও তেমন নয়। একটা বইয়ের কাভার যে একটা শিল্প হতে পারে সেটা তাদের ওয়ার্কশপেই প্রথম জানলাম। একটা বইয়ের কাভার কেমন হবে। ভেতরের ইলাস্ট্রেশন এর মাপ কেমন হবে। এসবই আমার কাছে একেবারে নতুন তখনও। তাদের ট্রেনিংটা পেয়ে আমার অনেক উপকার হয়েছিল।
তারপর দেখলাম আমাকে ডিজিটাল মাধ্যমগুলো জানতেই হচ্ছে। বর্তমানে একজন আর্টিস্ট কেবল রঙতুলি নিয়ে কাজ করেনা তাকে কম্পিউটারেও কাজ করতে হয়। সেখানেও তাকে অনেক কিছু জানতে হয়। সেই চিন্তা থেকে
পরিবারের সাথে নিশা
আমি আরো অনেক কিছু শিখলাম।
নিশা বর্তমানে দুরন্ত টিভিতে একজন ফ্রিল্যান্সার ভয়েজ আর্টিস্ট হিসাবে
আছেন। এর পাশাপাশি করছেন থিয়েটার।
মূলতঃ তিনি চান নিজেকে একজন
বুক ইলাস্ট্রেটর হিসাবে দেখতে। তাছাড়া বড়
নিশার আঁকা একটি ছবি
বড় সেলিব্রেটি শিল্পীদের সাথে কাজ করার যেমন মজাও আছে তেমনি খুব বেশী বইয়ের কাজ না করে মনোযোগ দিয়ে অল্প কিছু গুরুত্বপূর্ন বইয়ের কাজ করার ইচ্ছে তার। বইয়ের আঁকিয়ে হবার পাশাপাশি কন্ঠাভিনয় শিল্পী হিসাবে ও ডাবিং এর কাজ করে যাবার ইচ্ছে রয়েছে। নিশা সব কাজ করার পরও থিয়েটার করেন।

বর্তমানে তাড়ুয়া নামে একটি নাট্যদলের সাথে আছেন তিনি।

একদিন সরফুদ্দিন ও তার বউ............আশিকুর রহমান বিশ্বাস

একদিন সরফুদ্দিন ও তার বউ............আশিকুর রহমান বিশ্বাস

'আমাকে বলতে বলবেন না
              আমি বলতে শুরু করলে
              প্রকাশ্য সভায় আপনারা নগ্ন হয়ে যাবেন।'
           (প্রদীপ বালা)

গ্রীষ্মে এই ছায়াটুকু বড়ই মনোহর। পথিকের ক্লান্ত শরীরে প্রশান্তি বয়ে আনে বটে। তখন চোখদুটো পাথরের মতো ভারি হয়ে আসে; শরীর ক্রমশ ভেঙে এসে জড়ো হয়; আর ভাবনাচিন্তার পরিধি ছোট হতে থাকে। সূর্য তখনও ঠিক উলম্ব কিরণ দেয়। পাখিরা ভঙ্গুর শরীরে ডানা ছেড়ে হাঁপাতে থাকে, নদ নদীর পানি শুকাতে থাকে, সবুজ গাছেরাও বিবর্ণ হয়, বালুকাময় এই শহর মনুষ্য বসবাসের একেবারেই অনুপযোগী হয়। ঠিক তখন এই ছায়াটুকু কি প্রশান্তির নয়? কিন্তু কখনও আবার সে ছায়া কুকুরের দখলে। মৃদুমন্দ বাতাসে ছায়া নড়ে আর কুকুরের দল খেলা করে। ঘেউঘেউ। উঁচু চিমনি চূড়া অনর্গল কালো ধোঁয়া বমি করে তার কিছুটা ছিটকে আকাশের গায়ে লাগে, স্কেচ তৈরি হয়।অথচ আজ ছায়া নেই তাই কুকুরের খেলাও নেই। আছে শুধু আকাশ ভেঙে বৃষ্টি। ধোঁয়া। আবর্জনা। আঁশটে গন্ধ। সরফুদ্দিন আর ওর বউ শেফালী ভেবেছিল বৃষ্টির আগেই ওরা ভালোই ভালোই কেটে পড়তে পারবে, তখন না হয় দু'দণ্ড জিরিয়ে নিতে পারবে ছায়ায়। আগেও নিয়েছিল। সেবার নতুন বিয়ে করেছিল সরফুদ্দিন, ছায়ায় দাঁড়িয়ে দু'জন দু'টো আইসক্রিম চেটে সাবাড় করেছিল ওরা। লম্বা ঘোমটার ভিতর থেকে খেতে বড় অস্বস্তিই লাগছিল। সরফুদ্দিন বার বার বলছিলো-
- ঘোমটা ছাড়ো বউ, কে আছে আমি ছাড়া?
আসলে ওর বড় দেখতে ইচ্ছে করছিলো বউকে। এভাবে নানা ছলচাতুরী করে যাচ্ছিল ও, আর শহরের মর্ডান মেয়েদের গল্প। সে-গল্প শেফালীর সব জানা তবু অদ্ভুত কৌতূহলে শুনে যাচ্ছিল ও। হেসে ঢুলে পড়ছিলো সরফুদ্দিন। শেফালীও হাসছিলো। সেই হাসি বড় দেখতে ইচ্ছে করছিল সরফুদ্দিনের কিন্তু ঘোমটা ছাড়ে নি বউ। এই অবাধ্যতাটুকু একসময় মনে ক্রোধ বয়ে এনেছিল সরফুদ্দিনের। শেফালী বুঝতে পারে নি। কিন্তু আজ সরফুদ্দিন খেয়াল করেছে ওর বউ ঘোমটা টানে নি। ভিড়, গা ঘেঁষাঘেষি, অশ্লীলতা, তবুও। বউকে সে ইতোমধ্যে বারকয়েক বলে ফেলেছে-
- ঘোমটা টানো বউ। আহা ঘোমটা টানো বউ।
টানে নি শেফালী। চুপ থেকেছে। শেফালী আজ ঘোমটা তলে আবদ্ধ থাকতে চায় না, ও বেরুতে চায়, জরাজীর্ণতার দেয়াল
টপকাতে চায় ও। সবার মুখোশ খুলে দিতে চায়। সরফুদ্দিন যে হলুদের মিলে কাজ করতো ওখানে অগোচরে আটা মেশানো হতো রাতে, জেনে গেছে শেফালী। সবাইকে বলে দিতে চায় সে। সরফুদ্দিন সতর্ক করেছিলো-
- চুপ বউ, সাবধান! কাউকে বলবা না এ-কথা।
- কেন বলবো না?
- যা বলি তাই শোনো। তোমার কথা কেউ শুনবে
না, কেউ বিশ্বাস করবে না ওরা বরং হেসে 'পাগলি' বলবে। অশ্লীল গালি দিবে।
- বলেই দেখি না?
মুখ চেপে ধরেছিল সরফুদ্দিন। দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ও-কথা সবাইকে বলে দেবে সে। সরফুদ্দিন প্রায়শ মিছিলে যেত। লম্বা মিছিলের সামনে থাকতো ও, স্লোগান দিতো। বাসায় ফিরে ঘন চা চাইতো, গলা বসে যেত ওর। খেতে পারতো না, শরীরে ব্যথা করতো, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতো। লেপ মুড়ে নিতো শরীরে, প্রলাপ বকতো। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারতো না সে, সেই সরফুদ্দিন একদিন বউকে ডেকে বললো-
- আজ নির্ঘাত মারা পড়তাম বউ।
- ওমা কেনো! পুলিশ তাড়া করছিলো বুঝি?
- আরে পুলিশের ভয় এই সরফুদ্দিন করে না।
- তবে?
- অপজিশনের হামলা। কোনোমতে বেঁচে ফিরছি।
- এই আজি শেষ আর যেতে পারবা না বললাম। দরকার হলে না খেয়ে থাকবো, তবুও।
সেই মিছিলের সব খবর জেনে গেছে শেফালী, সবাইকে জানিয়ে দিতে চায় ও।
- খবরদার বউ। হুশিয়ারি দিয়েছিল সরফুদ্দিন।
- আর ক'দিন মুখ বন্ধ রাখবা তুমি? সবাই জানুক, সবাই চিনুক ওদের।
- খামখা একটা ঝামেলা কেন ক্রিয়েট করতে চাও বউ। এগুলো হলো পলিটিক্স বুঝেছ।
- তোমাকে যে ওরা টাকা দিয়ে ভাড়া করে নিয়ে যায় এটা জানুক সবাই। প্রেসক্লাবে ভাড়া করা লোক থাকে, রাস্তায় ভাড়া করা লোক থাকে, অনশনে থাকে, জনসভায় থাকে, এটা সবাই জানুক। সবাই বুঝুক। চিনুক ওদের। -আকুতি জানিয়েছিল শেফালী।
- চিনলে কী হবে? জানলে কী হবে? বুঝলে কী হবে? জিজ্ঞেস করেছিল সরফুদ্দিন। পরপর। সপ্রশ্নে তাকিয়েছিল ওর দিকে।
- জেগে উঠবে সবাই। -খুব সরল গলায় বলেছিল শেফালী।
সরফুদ্দিন বিকৃত হেসেছিল। সে জানে ওদের কিচ্ছু হবে না। ওদের কিছু হয় না। কেউ জেগে ওঠে না। ওদের চেতনার মৃত্যু
ঘটেছে তাই ওরা এখন আর জেগে ওঠে না। নিশ্চুপ ঘুমিয়ে থাকে। বস্তুত জেগে ওঠেনি হাসপাতালের কোনো একজন রোগী আর তাদের স্বজনরা। শেফালী প্রাইভেট হাসপাতালে
ছিলো অনেকদিন, ওদের ব্যাবসা জেনে গেছে সে। সেবা? ঘেঁচু, টাকা সব। কশাইখানা। ওদের অনিয়ম শেফালী আজও ভুলতে পারেনি তাই হয়ত ঘৃণা ধরে গেছে। সবকিছু স্পষ্ট চোখে ভাসে ওর। ঘুমোলে আরও স্পষ্ট
হয়। বুঝতে পারে সরফুদ্দিন। ঘুমোতে পারে না শেফালী, স্রেফ হত্যা বলে ও। মানুষগুলোর চাপা আর্তনাদ শুনতে পারে আজও। হত্যা, তোমরা হত্যা করেছো, তোমরা একেকজন মস্তবড় একেকটা হত্যাকারী- প্রলাপ বকে চলে শেফালী। ঘুমিয়েও বকে ও।
সরফুদ্দিন ধমক দেয়। শেফালী এই শেফালী, কী যা তা বলছো?
ঘন শ্বাস নেয় শেফালী, তখন ওর বুক ওঠানামা করে, শরীর ঘাম ছাড়ে। তারপর ধীরে চোখ মেলে ও। উঠে বসে।
- হত্যা! কে কাকে হত্যা করলো বউ? কার কথা বলছো?
- হত্যা করে ওরা। ওরাই করলো। এইতো আমার সামনে করলো।
- কারা? তারা কারা বউ।
শেফালী যেন হোঁচট খেয়ে ওঠে। সামলে নিয়ে বলে, পানি, আমাকে একটু পানি দাও। আমি পানি খাবো।
সরফুদ্দিন দৌঁড়ে গিয়ে পানি আনে। ও ঢকঢক করে মুখে টেনে নেয় সবটুকু। হাঁপিয়ে ওঠে। তারপর ধীরে শান্ত হয়। সরফুদ্দিন ওকে শুইয়ে দেয়, শিশুদের মতো শুয়ে থাকে ও। সরফুদ্দিন ও'কে আদর করে, কপালে চুমু এঁকে দেয়, ঠোঁটে দেয়, তারপর সমস্ত শরীরে। নিভাঁজ সুখে ভরিয়ে তোলে ও'কে। যে সুখের নেশায় একদিন সব ছেড়ে চলে এসেছিল ও। কিন্তু সরফুদ্দিন কি সুখী করতে পেরেছে ও'কে? আজ সে হিসাব নয়, শেফালী মাথা নাড়ে। ভুলে যায় সবকিছু; সুখে ভুলে থাকে ও, কিন্তু তা সীমিত সময়ের জন্য। শেফালীর ওর বাচ্চাটার কথা মনে হয় তখন। ডুকরে কেঁদে ওঠে ও। হঠাৎ বাচ্চাটার কী যেন হলো! পায়খানা, জ্বর, বমি, তারপর চোখ উল্টে গেল, মুখটা নীল হয়ে এলো। দৌঁড়ে হাসপাতালে নিয়েছিল শেফালী, কত পয়সা যে ওই কসাইখানায় ঢাললো ওরা অথচ শেষমেশ বাঁচলো না। বাঁচতো ও, কিচ্ছু হতো না, থাকলে অনেক বড় হতো আজ- শেফালী বিশ্বাস করে। সেই কথাগুলি বলে দিতে চায় ও। কী ঘটেছিল সেই রাতে সব জানে শেফালী শুধু একবার চিৎকার করে জানিয়ে দিতে চায় সবাইকে।
হয়তো মানুষ কখনও জাগবে না।
হয়তো ওদের কিচ্ছু হবে না; ওরা বেঁচে যাবে; ওরা তো এভাবেই বেঁচে যায়; রাষ্ট্র, সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, মুদ্রানীতি ওদের বাঁচিয়ে রাখে; আর বাঁচিয়ে রাখে দুর্ভিক্ষ, মহামারি, বন্যা, সাইক্লোন। তবু একবার শেফালী জানিয়ে দিতে চায় সবাইকে।
সরফুদ্দিন বলল, ঘোমটা টানো বউ।
শেফালী টানলো না।
সরফুদ্দিন আবার বলল, ঘোমটা টানো বউ।
এবার শেফালী অস্ফুটে বলল, না।
- কী করতে চাও তুমি?
- বলতে চাই। আমি সব বলতে চাই।
- কাকে বলবা?
- যারা শুনবে। যাদের এখনও মৃত্যু হয় নি।
- যদি তারা আর কেউ না থাকে?
- তবুও বলবো।
- কাদের সাথে?
- ফুটপাতে বলবো, গাছেদের সাথে বলবো, পাখিদের সাথে, বিদ্যুৎ পিলারের সাথে, আর ঐ ময়লার বাক্সের সাথে।
- ওরা কি শুনবে?
- অবশ্যই শুনবে। আমি চেঁচিয়ে বলবো। ওদের শুনতেই হবে। আমি চেঁচিয়ে গলা চিরে
ফেলবো, তারপর হড়হড় করে রক্ত বমি করবো, আর সেই রক্তবমি যারা শুনবে না, যারা শুনতে চাইবে না, যারা চির-বধির, যারা চির-অন্ধ, যারা চির-মৃত একে একে তাদের গায়ে ছুড়ে মারবো। রক্তে ডুবিয়ে ফেলবো ওদের।
- তারপর?
- তারপর মরে যাবো।
সরফুদ্দিন স্থির চোখে তাকিয়ে থাকে। বৃষ্টি তখনও থামেনি, সরফুদ্দিন ও তার বউ ভিজে গেছে। কিন্তু এ বৃষ্টি তাদের রক্তমাংসের শরীর ভেদ করে ভিতরে যে একটা দাবানল সৃষ্টি হয়েছে সেখান অবধি পৌঁছাতে পারে নি। ভেতরটা দাউদাউ করে পুড়ছে তখন। গনগন করছে আগুন। চুপ করে পুড়ছে, মুখ বুজে পুড়ছে। কিন্তু পুড়ছেই।
সরফুদ্দিন বলল, গাড়িতে ওঠো বউ।
- যাবে?
- চলো যাই।
- কোথায় যাবে?
- প্রেসক্লাবে।
- সেখানে যদি কেউ না আসে?
- তবে রাস্তায় দাঁড়াবো।
- তখনও কেউ যদি না শোনে।
- তবে আবাসিক এলাকায় যাবো, কলকারখানার সামনে, প্রয়োজনে চায়ের দোকানে, লঞ্চ ঘাটে, টার্মিনালে, স্টেশনে।
- চলো যাই।
সরফুদ্দিন ও তার বউ একসময় প্রেসক্লাবে হাজির হলো। একে একে হাজির হলো সাংবাদিক, সুশীল, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক, শিল্পী, কবি, সেবিকা, ক্যামেরাম্যান, গোয়েন্দা, কেরানি আর যারা রাস্তায় শুয়ে থাকে তারাও। কী বলে সরফুদ্দিনের বউ?
কী বলতে চায় সে? চারিদিক চাপা গুঞ্জন। সরফুদ্দিন চুপটি দাঁড়িয়ে রইলো একটি কথাও বললো না। শেফালী মুখ খুলতে শুরু করলো। ও হলুদ মিলের আটা ভেজালের খবর জানিয়ে দিলো সবাইকে। মিছিলে লোক ভাড়া করার খবর দিলো।হাসপাতালের খবর দিলো।
চেঁচিয়ে বললো শেফালী, চাপা আক্ষেপ থেকে বললো, হয়ত অন্তরের দাবানল থেকে বললো শেফালী। কিন্তু সেই দাবানলে আর কারো অন্তর পুড়লো কিনা তা জানা গেলো না। সবাই চুপ শুনে গেলো। 

"আশিকুর রহমান বিশ্বাস যশোরের ছেলে। বর্তমানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগে অধ্যয়নরত আছেন। আগামী বইমেলাতে তার ‘এক নক্ষত্রের নিচে’ নামে একটি উপন্যাস প্রকাশিত হবার কথা রয়েছে।”

ক্ষত..............মনিরুল ইসলাম জোয়ারদার

ক্ষত..............মনিরুল ইসলাম জোয়ারদার
কুদরতকেএক নজর দেখেই চিনে ফেললো শানু। মেইন রাস্তার ধারে এক লোকের সাথে কথা বলছে। লোকটাকেও চিনতে পারলো, ওতো আসগর ভাই। আসগর ভাই ও তার হাজবেন্ড সাজ্জাদ একই কলেজে পড়ায়।সাজ্জাদ কেমেস্ট্রি , আসগর ভাই ইতিহাসে। তবে আসগার ভাই ভাল কবিতা লেখে। সারাক্ষণ কবিতা আওড়ায়, বিরক্তিকর। মাঝে মাঝে বৌ নিয়ে বাসায় আসে, বৌটা খুউব মিশুক। দীর্ঘক্ষণ কথা বলা যায়, সময় কাটে বেশ। কিন্ত আসগরের সাথে কুদরতের পরিচয় কিভাবে? এই দূরতম বগুড়া জেলা শহরে কিজন্যে এসেছে কুদরত বুঝতে পারলো না শানু। হ্যাঁ সেই অবিকল একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে এক পায়ের উপর ভর দিয়ে, প্রায়শই পা বদল করছে । কথা বলতে বলতে ডান হাত দিয়ে চুল ঠিক করছে বারবার। তবে চুলগুলো অনেকটাই পাকা। ডাই করে সাদা চুল ঢাকার চেষ্টা করেনি একটুও। এটা শানুর ভাল লাগলো। ক্লিন সেভড। নতুন যোগ হয়েছে চশমা, মনে হচ্ছে হাই পাওয়ারের গ্লাস। কথা বলার সময় মিটিমিটি হাসিটা মুখে লেগেই থাকে। এই হাসি দেখেইতো ও পাগল হয়েছিল। কত বছর আগের কথা বিশ থেকে পঁচিশ বছর হবে। মনে হচ্ছে এইতো সেদিন। সরকারি গার্লস স্কুলে ক্লাশ সেভেনে পড়ে শানু। দারুন দুরন্ত ও ডানপিটে ছিল। কপালেে এখনো দুটো অস্পষ্ট কাটার দাগ রয়ে গেছে। পাড়ায় এমনও দিন ছিলনা যে তার বিরুদ্ধে বাবার কাছে নালিশ যেত না। বাবা তাকে খুউব আদর করতো এজন্যে তার গায়ে কখনো হাত না দিলেও মাঝে মাঝে ভীষন বকতো। তখন চুপটি করে থাকলেও পরদিন যা তাই। শানুর একটা ছোট্ট দল ছিল সাত আট জনের।তারাও ওরকমই ছিল। দল বেধে দুরন্তপনাই ছিল ওদের কর্ম।
এ সময়ই থানা শহর থেকে জেলা শহরে ওদের পাড়ায় এলো কুদরতের পরিবার। কুদরত তখন ক্লাশ নাইনে পড়ে প্রচন্ড মেধাবী ছাত্র। ম্যাথে সে অত্র জেলায় প্রথম। বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে তাই জেলা শহরে আসা। বাবা তার নাম রেখেছে বাংলাদেশের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ডঃ কুদরত ই খোদা'র নামানুসারে । মোঃ কুদরত ই খোদা একসময় বড় বিজ্ঞানী হবে এ আশায়। পড়াশুনায় ভাল হলে কি হবে চলাফেরায় একদম অগামগা। সব সময় মাথা নিচু করে চলে আর কি যেন ভাবে। একদিন কুদরত স্কুল থেকে ফেরার পথে শানু ওর পায়ে ল্যাং মেরে ফেলে দিলে পড়ে গিয়ে কুদরতের হাটু ছড়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতে শানুকে বলে আপনি আমাকে ফেলে দিলেন কেন? সেই থেকে কুদরতকে দেখলেই শানু বলতো আল্লার কি কুদরত চোখের কোনায় পানি ও ছেলে তুই ছিচ কাদুনি। কুদরতের এস এস সি পরীক্ষার বছর খানেক আগে শানু এ ধরনের কথা বলতেই কুদরত ওকে মারতে তেড়ে এসেছিল। শানু তো অবাক। ও বুঝতে পারেনি যে পাড়ায় বছর খানেকের মধ্যে কুদরত খাপ খাইয়ে নিয়েছে। কিন্তু শানুর ডানপিটে দলের মারমুখী ভঙ্গি দেখে কুদরত পিছিয়ে আসে।
এসএসসি পরীক্ষায় কুদরত বোর্ডে সপ্তম স্থান পায়। তখন তার সেকি নামডাক। এসময় শানু ক্লাশ টেনে পড়ে, অংকে ভীষন কাঁচা। ওর বাবা কুদরতের বাবাকে বললো আপনার ছেলেটি যেন কিছুদিন আমার মেয়েকে অংকটা শিখিয়ে দেয় ছেলেটাকে বুঝিয়ে বলেন কিন্তু। শানুর বাবা প্রভাবশালী বিধায় না করা হয় না কুদরতের। অংক শেখার চেয়ে কুদরতের সাথে গল্প করতো চাইতো বেশী। প্রথম প্রথম রাগ হলেও কিছুদিনের মধ্যে ওদের সম্পর্কটা মধুর হয়ে উঠে। দুজনের এভাবেই কেটে যায় দু’ তিন বছর। কুদরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সে ভর্তি হয়। ও তখন সেকেন্ড ইয়ারে। শানু এইচএচসি পাশ করে স্থানীয় সরকারী কলেজে ডিগ্রীতে ভর্তি হয়। ক্লাশ শুরুর আগেই ঘটলো দুর্ঘটনা। শানুর বাবা ওর বিয়ে প্রায় পাকা করে ফেলে। পাত্র দেখতেও হেভি হ্যান্ডসাম। তদুপরি বিসিএস ক্যাডারে শিক্ষা বিভাগে একটা কলেজে পড়ায়। সবারই পছন্দ সুতরাং শানু বিয়েটা কোন রকমেই এড়াতে পারলো না। সব ধরনেই যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল। শানু কুদরতের সাথে কিন্তু কুদরত যোগাযোগ করতে পারেনি।গায়ে হলুদের দিন হন্তদন্ত হয়ে শানুকে ডেকে কুদরত জিজ্ঞেস করে কেন তুমি এমনটি করলে? কেন আমাকে জানাওনি? শানুর হাত দুটো ধরে বলে চল আমরা পালিয়ে যাই। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলেই হু হু করে কাঁদতে থাকে। প্লিজ শানু আমাকে শেষ করে দিও না।শানু চুপ করে থেকে খানিক্ষণ পরে বলে, কুদরত এখন আর তা হয় না। সব আয়োজন শেষের পথে তাছাড়া সন্মানেরও বিষয় জড়িত। তুমি আমাকে ভুলে যাও। কুদরত বলে শানু আমি এখন কি করবো বলো।শানু কষ্টটা বুকে চেপে বলে কুদরত, তুমি লেখাপড়া শেষ করে চাকরি বাকরি নাও তারপর বিয়ে করে সংসারি হয়ো। কুদরত হঠাৎ দিশেহারার মত বলে উঠে, ‘শানু তুমি আমাকে শেষ করে দিয়ে ভূল করলে। দেখো আমি কোনদিন তোমাকে ভুলতে দেবনা এই আমাকে। আমাকে চিনতে তুমি ভুল করেছো শানু, আমার ভালবাসাকে অপমান করে ভূল করলে শানু।’ কুদরত চলে যায় ঝড়ের গতিতে শানুর হাতটা ঝটকা দিয়ে ছেড়ে। শানু হাতে প্রচন্ড ব্যাথা পায় তবুও এ ব্যাথা হৃদয়ে ব্যাথার চেয়ে ক্ষুদ্রতম।
শানু উদাস দৃষ্টিতে কুদরতের চলে যাওয়া দেখে আর নীরবে চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল গড়ায়। ‘এই শানু ,শানু এই শাহানা’ একটু জোরেই ডাক দেয় সাজ্জাদ । ‘ওদিকে কি দেখছো? দেখো আপেল নেবে না পেয়ারা নেবে?’ একটা ফলের দোকানে রিক্সা থামিয়ে ফল কিনছিলো ওরা। ‘ওদিকটায় দেখ উনি আসগর ভাই না ? শানু চোখের জল লুকোতে চায়। চোখ ওর ঝাপসা হয়ে আসে। আসগর ওদিকে চেয়ে বলে ‘হ্যাঁ তাইতো।’ আসগর আসগর বলে ডাক দেয় সাজ্জাদ। আসগর ওদিকে তাকিয়ে হাত ইশারা করে অপেক্ষা করতে বলে। কুদরত শানুর দিকে তাকায়। শানু ডান দিকে ঘুরে যায় যেন কুদরত ওকে দেখতে না পারে। কিন্তু সাজ্জাদ দেখে ফেলে শানুর চোখে জল।
‘কি হয়েছে চোখে?’ 
‘চোখে কি যেন পড়েছে,’ শানু আঁচল দিয়ে চোখ মোছে। ঢাকার বাস এলে কুদরত ওতে উঠে যায়। কুদরতকে বিদায় জানিয়ে আসগর ওদের কাছে আসে। 
‘কি ব্যাপার স্যার এখানে? ভাবির চোখে কি হয়েছে?’  
‘ওর চোখে পোকা টোকা পড়েছে মনে হয়’। 
আসগর দ্রুত পাশের চায়ের দোকান থেকে এক মগ পানি নিয়ে আসে। চোখে মুখে পানি ছিটা দেয় শানু। সাজ্জাদ জিজ্ঞেস করে ‘ঐ লোকটা কে?’
‘আরে ওকে চিনলেন না স্যার উনিতো বাংলাদেশের নাম করা কবি কুদরত ই খুদা!’ 
শানু হা করে তাকিয়ে থাকে আসগরের মুখের দিকে। মুখ ফসকে বলে উঠে ‘ও এখানে কেন?’ ‘বগুড়াতে একটা সাহিত্যের আসর ছিল উনাকে চিফ গেষ্ট করা হয়েছিল।’ 
‘উনাকে তুমি চেন,’ সাজ্জাদ জিজ্ঞেস করে। 
শানু বলে ‘হ্যা উনি বেশ নাম করা কবি চিনবোনা কেন?’ 
‘ও হ্যাঁ তুমিতো আবার গল্পের বই টই পড়ো।’ 
‘উনিতো বিজ্ঞানের ছাত্র ছিল,’ শানুর প্রশ্ন। 
‘বাহ, তাঁর অনেক খবরই জানেন দেখি,’ আসগর বলে। 
‘এতটুকুই জানি এর বেশি না।’ মনে মনে ভাবে কিছুই জানতাম না এখন জানলাম। বা বিজ্ঞান নিয়ে পড়লে কি কবিতা লেখা যায় না! তা যায় বৈকি। ‘আচ্ছা আসগর ভাই উনি চাকরি বাকরি করেন না?’ ‘তা করেন একটা সরকারি অফিসে। জানেন ভাবী উনার একটা স্যাড ব্যাক আছে। উনি এখনো বিয়ে থা করেনি।’ 
‘বলেন কি কেন?’ 
‘একটা মেয়ের সাথে উনার প্রেম ছিল কিন্তু মেয়েটা অন্যত্র বিয়ে করে, ফলে উনি আর বিয়েই করবে না বলে পণ করে। আরো একটা মজার ঘটনা আছে।’ 
‘কি সেটা?’ 
‘উনি সারাদিন হেড ফোনে একটি মাত্র গানই শোনেন।’ 
‘কোন গানটি?’ শানু জিজ্ঞেস করে।’ 
‘ঐ যে 'যেটুকু সময় তুমি থাক কাছে মনে হয় এদেহে প্রান আছে বাকিটা সময় শুধু মরন আমার, হৃদয় জুড়ে নামে অথৈ আধার।' 
‘কেন শুধু এ গানটিই শোনে?’ 
‘উনি যাকে ভালবাসতো সেই মেয়টির নাকি এই গানটি ভাল লাগতো।’ 
আর সহ্য করতে পারছে না শানু। বুকের মধ্যে হু হু করে উঠে।সাজ্জাদকে বলে, ‘চলোতো আমার চোখ জালা করছে। তাছাড়া ছেলে মেয়ে দুটোরই পরীক্ষা।’ 
‘ওরা যেন কি পরীক্ষা দিবে ভাবী’, আসগরের প্রশ্ন। 
শানু উত্তর দিতে পারে না, কান্না ঠেকাতে পারছে না, শাড়ীর আঁচলে চোখ মোছার ভান করে।  উত্তরটা সাজ্জাদই দেয়। মেয়েটা এইচ এস সি, ছেলেটা এসএসসি। বাসায় এসো আসগর,’ বলেই ওরা রিক্সায় উঠে বসে। বাসায় এসেই সোজা ওয়াশ রুমে ঢুকে যায় শানু। ট্যাপ ছাড়ে ফুল স্পিডে তারপর ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকে, কান্নার দাপটে গলার ভিতর থেকে শুধু ঘড় ঘড় শব্দ বের হয়। যখন কান্নার ঝড় থেমে যায় তখন বেসিনের আয়নায় নিজেকে নিজেই বলে, ‘কিরে শাহানা খাতুন শানু তুই ঠিকই হেরে গেলি। কুদরত তোকে কিছুই ভূলতে দিলো না। তোর হৃদয় মাঝে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা কোনদিন কি মুছবে?  কোনদিনই মুছবে না।।’