আমি এবং আমি....................আ, ন, ম, শাহরিয়ার জাওয়াদ

তিন ফুট লম্বা ঘাসের ভেতর ঘাপটি মেরে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। ঘুটঘুটে অন্ধকার। চারদিকে মশা পিনপিন করছে। মূর্তির মতো বসে জঙ্গলের মশার কামড় সহ্য করতে হচ্ছে। হাত নাড়িয়ে চারপাশের মশা তাড়াতে গেলেই ঘাসের বন নড়ে উঠবে। আর ঘাসের বন নড়ে উঠলেই যেকোনো নিশাচর শ্বাপদের চোখে পড়ে যাবো খুব সহজেই।
আমার পাশে নাইট ভিশন বাইনোকুলার চোখে উবু হয়ে বসে থাকা শ্বেতাঙ্গ যুবকের নাম আমি মনে করতে পারছি না। অন্ধকারে যুবকের চেহারা স্পষ্ট দেখা যায় না। তবু বুঝতে পারছি, আমি যুবককে চিনিই না। কখনো দেখি নি। আমার পৃথিবীতে এই যুবকের সাথে আমার কখনো পরিচয় হয় নি। কিন্তু এই পৃথিবীর জাওয়াদ হয়তো সাদা চামড়ার যুবকটাকে খুব ভালোভাবেই চেনে।আমি অন্য পৃথিবীর জাওয়াদের শরীরে বেড়াতে এসেছি। আমার মাঝে মাঝে এমনটা হয়। বডি সুইচিং। তখন আমার সত্ত্বা অন্য কোন পৃথিবীর জাওয়াদের শরীরে কিছুক্ষণের জন্য ঢুকে বসে থাকে। আর অন্য পৃথিবীর জাওয়াদের সত্ত্বা চলে আসে আমার শরীরে। কিছুক্ষণ বলতে কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে বেশ কয়েকঘণ্টা পর্যন্ত। কখন আমার বডি সুইচিং হবে, বডি সুইচ হওয়ার পর ঠিক কতটা সময় আমি অন্য পৃথিবীতে থাকবো তার কোনটারই নিয়ন্ত্রণ আমার আয়ত্ত্বে থাকে না। তবে এই বডি সুইচিংটা হয় ঘুমের সময় কিংবা চুপচাপ কোথাও একা বসে থাকলে।এ পর্যন্ত দু'টো পৃথিবীর জাওয়াদের শরীরে আমি বেড়াতে গিয়েছি কয়েকবার। এক পৃথিবীর জাওয়াদ একজন নামকরা লেখক। তার শরীরে থাকা অবস্থায় আমি আমার লেখকসত্ত্বাকে আবিষ্কার করেছি। সেই আমিটা সারদিন ঘরের এমাথা থেকে ওমাথা পায়চারি করে আর লেখে। তার মাথাভর্তি হাজার রকম লেখা গিজগিজ করছে। আরেক পৃথিবীর জাওয়াদকে আবিষ্কার করেছি তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে। ইংল্যান্ডের রাণীর হাত থেকে কুইন্স অ্যাওয়ার্ড নেওয়ার সময় আমি তার শরীরে ঢুকে গেলাম। চারপাশে কত আয়োজন, কত বিখ্যাত মানুষ! আমি হা করে তাকিয়ে আছি। বৃদ্ধ রাণী আমার মধ্যে কিছু একটা গণ্ডগোল টের পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "আর ইউ ওকে, মিস্টার শ্যারিয়্যার? আর ইউ ফিলিং ইল?"আমি বিভ্রান্ত চোখে রাণীর দিকে তাকালাম। আমার বলতে ইচ্ছা করলো, "ব্রিটিশের বাচ্চা ব্রিটিশ, আমার নামের উচ্চারণ ঠিক কর... নাহলে এক থাবড়া দিয়ে নামের শুদ্ধ উচ্চারণ শিখিয়ে দেবো! ঘুঘু দেখেছো, ফাঁদ দেখোনি।"
কিন্তু আমি কিছু বললাম না। রাণীর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়েই রইলাম।আমি এখন যেখানে আছি, সেটা সম্ভবত তৃতীয় কোন পৃথিবী। এই পৃথিবীতে আমি কে? এই অন্ধকার রাতে আমি এভাবে বসে মশার কামড় খাচ্ছি কেন?
আমার পাশে বাইনোকুলার চোখে বসে থাকা শ্বেতাঙ্গ যুবকের ঠোঁট নড়ে উঠলো। ফিসফিস করে পরিস্কার আমেরিকান উচ্চারণে বললো, "এক বোতল হুইস্কি থাকতো এখন হাতের কাছে!"আমি ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লাম।"কিছু বলছো না কেন জ্যাওয়্যাড?"আচ্ছা, সাদা চামড়ার মানুষগুলোর সমস্যা কী? তারা এশিয়ানদের নামের এভাবে বিকৃত উচ্চারণ করে কেন- তারা কি নিজেদেরকে খুব অন্যরকম মনে করে? এশিয়ানদের নাম এভাবে বিকৃত উচ্চারণ করে তারা কি নিজেদের অহমিকাবোধ প্রকাশ করে?আমি আবার ফোস করে আরেকটা বড় নিঃশ্বাস ছাড়লাম।ক'সেকেন্ড পরে যুবক আমার দিকে তার চোখের নাইট ভিশন বাইনোকুলারটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো, "লুক বাডি, হোয়াট উই হ্যাভ ফাউন্ড!"আমি বাইনোকুলারটাতে চোখ রাখলাম। একপাল হায়না একটা ওয়াইল্ড বিস্টের দেহাবশেষ নিয়ে টানাটানি করতে করতে ছোটাছুটি করছে। বহুদূর থেকে ক্রমশঃ আমাদের কাছে এগিয়ে আসছে।আমেরিকান যুবক আবার মুখ খুললো, "দেখলে?""হুঁ!""আর কিছু দেখছো?""একটু অপেক্ষা করো। দেখে নিই।"আমাদের পেছনে কিছু দূরে ঘাসের বন নড়ে উঠলো। চকিতে আমি আমার শ্বেতাঙ্গ সঙ্গীর দিকে তাকালাম। সিংহী!"জ্যাওয়্যাড দৌঁড়াও... জিপে পৌঁছাতে হবে!'"জিপ কোথায়?""তুমি ভয় পাচ্ছো জ্যাওয়্যাড? একজন ফিল্ড জ্যুলজিস্টকে তার নার্ভ ঠাণ্ডা রাখতে হয়। আমার সাথে এসো!" আমরা দু'জন ঘাসবনের ভেতর দিয়ে প্রাণপণে ছুটছি। আমাদের পেছনে ছুটে আসছে ক্ষুধার্ত সিংহী। একটা না কয়েকটা। সবগুলো আশেপাশেই ঘাপটি মেরে ছিলো। একটু একটু করে কমে আসছে শিকারি আর শিকারের মধ্যকার দূরত্ব।হঠাৎ হ্যাচকা টানে আমার অচেনা সঙ্গী আমাকে জিপে তুলে নিলো। হেডলাইটের চোখধাঁধানো আলোয় দেখতে পেলাম চারটে সিংহীর হিংস্র চেহারা৷ আমার সঙ্গী দ্রুতহাতে জিপের মুখ ঘুরিয়ে নিলো। এক্সেলেটরে চাপ দিতেই তীব্রগতিতে ছুটতে শুরু করলো জীপ।"তাবুতে পৌঁছাতে হবে," চেঁচিয়ে উঠলো যুবক, "সব তোমার বুদ্ধি। তোমার কারণে একপাল সিংহী আমাদের পেছনে ছুটছে! কোন প্রয়োজন ছিলো এভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে মাঝরাতে কঙ্গোর বন দেখতে বেরোনোর?"
আমাদের জিপ সাঁই সাঁই করে ছুটে চলেছে এবড়োথেবড়ো জমির ওপর দিয়ে। হেডলাইটের আলো চোখে সয়ে গেছে। ড্রাইভিং সিটে বসে আমার আমেরিকান সঙ্গী বকবক করেই চলেছে, "এসেছি ম্যানাটির খোঁজে... ম্যানাটি নিয়ে গবেষণা করতে। ওখানেই থাকতাম। আজ দু'দিনে তো ফাঁদে একটা ম্যানাটিও ধরা পড়লো না। কঙ্গো নদী কি ম্যানাটিশূন্য হয়ে গেছে নাকি? ফ্রেশওয়াটার আফ্রিকান ম্যানাটির এত আকাল পড়লো?"আমি বুকে প্রায় নিঃশ্বাস আটকে রেখে যুবকের কথা শুনছি। আমাদের মাথার ওপর অনন্ত নক্ষত্রবীথি। একটা ম্যানাটি ফাঁদে না আটকানো পর্যন্ত আমাকে এই পৃথিবীতে প্লিজ থাকতে দিও কারিগর! এ সুযোগ আমার পৃথিবীতে আমি কখনো পাবো না, প্লিজ কয়েকটা দিন এখানে থাকতে দাও!রাতের পৃথিবীতে অগণিত নক্ষত্রের ছায়া পড়ছে। আমি বসে আছি একটা চলন্ত জিপে। পেছনে তাড়া করে আসছে কিছু ক্ষুধার্ত সিংহী। এ জীবন আমার বড় আকাঙ্ক্ষিত।আমি তারাভর্তি আকাশের দিকে তাকালাম। এরকম আরো কতগুলো জগৎ পাশাপাশি আছে কে জানে! 

(চলবে................)

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট
Anonymous
August 29, 2020 at 10:12 PM

দুর এটা কোন ধরনের সাইন্স ফিকশন হইল? বুঝলামই না কোথা দিয়া কি।

শুরুজ মল্লিক@
0161236593

Reply
avatar
ফাহিম রেজা, উত্তরখান ঢাকা, সাইন্স ফিকশন ক্লাব
September 2, 2020 at 12:35 PM

দারুন দারুন দারুন দারুন হয়েছে কাভারটা এক্কেবারে ফাটাফাটি, জাফর ইকবাল স্যার ফেইল

Reply
avatar
September 4, 2020 at 1:09 AM

মতামতের জন্য ধন্যবাদ! 😊

Reply
avatar
September 4, 2020 at 2:59 PM

লেখাটা ভালোছিল।
ভালো লাগছে পড়ে।

Reply
avatar
Marium Mollik, HolyCross sch
September 13, 2020 at 12:55 PM

এটা জটিল ধাঁচের সাইন্স ফিকশন। কিছু জিনিষ বুজিনাই,যেমন শেষে কি হল না হল ইতাযাদি

Reply
avatar