আমাদের গল্প.........................তুহিন রহমান

রজার ওপর দুম দুম শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। প্রথম বুঝতে পারলাম না কি ঘটছে। পরমুহূর্তে চোখ কচলে উঠে বসলাম। চোখে রোদ এসে লাগছে জানালা গলে। গতরাতে দেরী করে বাড়ি ফেরাতে খেয়েই শুয়ে পড়েছিলাম।
ভুলে গিয়েছিলাম জানালার পর্দা টানতে। প্রতিদিনের নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতিতে একটা ছেদ পড়ে গিয়েছিল গত রাতে। টেবিল ঘড়ির দিকে তাকালাম। সকাল ন’টা বেজে গেছে। বাবা নক করছে আমি নিশ্চিত। বাবার নক করার ধরন আমি বুঝি। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। বাবা দাঁড়িয়ে আছে খবরের কাগজ হাতে।
‘কিরে, এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছিস!’
‘কাল দেরী করে ফিরেছি তো। ’ আমি বললাম চোখ ঘষতে ঘষতে। ‘ঘুমটা যাচ্ছেনা চোখ থেকে।’
‘লোকটা দাঁড়িয়ে আছে দরজায়।’ বাবা বললো, ‘ভেতরে ঢোকাইনি।’
‘কোন লোক?’
‘চিনিনা, বললো তোর কাছে এসেছে।’
আমি চোখ ডলতে ডলতে সদর দরজার দিকে এগুলাম। দেখি মনসুর এসেছে। আমাদের অফিসের পিওন। গতকাল আমার কাছে কিছু টাকা চেয়েছিল। আমার নিজেরই বেতন হয়নি এখনও আমি ওকে টাকা দেব কোথা থেকে? বলেছিলাম বাড়িতে আসতে, যদি কোথাও থেকে টাকা ম্যানেজ করে দিতে পারি। আমাকে দেখেই সালাম দিল মনসুর। বললাম, ‘বাড়িতে তো এসেছো কিন্তু টাকা তোমাকে দেব কোথা থেকে। দাঁড়াও দেখি কোথাও পাই কিনা।’
আমি আমার রুমে চলে এলাম ওকে দরজায় দাঁড় করিয়ে। আমার ড্রয়ারে সাধারনত টাকা থাকে। আমি বেতন পেয়ে বেতনের টাকাগুলো এখানেই রাখি। তারপর আস্তে আস্তে খরচ করি। থাকার ভাড়া লাগেনা, খাওয়ার টাকা লাগেনা। খালি নিজের হাতখরচ। তাও শেষ। আজ মাসের পাঁচ তারিখ। এখনও কোম্পানীর বেতন দেয়ার নাম নেই। মনসুর হাজার খানেক টাকা ধার চেয়েছিল আমার কাছে। তার বাড়ি ভাড়া দিতে হয়। বেতন না পেলে বাড়ি ভাড়া দিতে পারেনা। গরীব মানুষ। কিন্তু আমার কাছে পাঁচশো টাকা ছাড়া আর কোন নোট নেই। সেটাই তুলে নিলাম। দুটো একশো টাকার প্রাইজবন্ড পড়ে ছিল ড্রয়ারে। বাবা প্রাইজবন্ডের খুব ভক্ত। মাঝে মাঝে কেনে, ড্র হলে পত্রিকায় আঁতিপাঁতি করে খোঁজে নাম্বার মিললো কিনা। মেলেনা কখনও। রিটায়ার্ড মানুষ। বাড়িতে থাকে সারাদিন। বই পড়ে, পত্রিকা খুঁটিয়ে পড়ে আর লনের গাছগুলো নিয়ে পড়ে থাকে। গত পরশু দিন আমাকে দিয়ে দুটো প্রাইজবন্ড কিনিয়েছে বাবা। এখন ওদু’টো মিলিয়ে মোট সাতশো টাকা হলো। আমি তিনটে জিনিষ মনসুরের হাতে তুলে দিয়ে বললাম, ‘মনসুর আমার হাতে পাঁচশো টাকা আর এই দুটো প্রাইজবন্ড ছাড়া আর কিছুই নেই। প্রাইজবন্ড দুটো তুমি সোনালী ব্যাংকের যে কোন শাখায় নিয়ে গেলে ওরা তোমাকে এনক্যাশ করে দেবে।’
মনসুরের জন্য এই ঢের। ও ফিরে গেলে আমি আমার রুমে চলে এলাম। বাবা এখন ব্যস্ত লনের গাছপালা নিয়ে। আজ শুক্রবার। মা গেছে শপিং করতে। আমার বিয়ের জন্য সবাই উঠে পড়ে লেগেছে। আগামী মাসের চার তারিখ আমার বিয়ে। আমার জন্য বিষয়টা কিছুটা আনন্দের আবার কিছুটা শংশয়ের। আমি বিয়ে করবো এই অনুভুতিটা বেশ সুন্দর একটা অনুভুতি, আবার আমাদের আর্থিক অবস্থার কথা যখন ভাবি তখন শংশয়ের দোলায় দুলি। বাবা রিটায়ার্ড করেছেন। এখন পেনশনের টাকায় সংসার চলে। আমার বেতন বেশী নয়। হাত খরচের টাকা মাস শেষ হবার আগেই ফুরিয়ে যায়। এর মধ্যে যদি বৌয়ের খরচ ঘাড়ে পড়ে তাহলে নুনই খেতে হবে, পান্তা জুটবে না।
চার তারিখ যতো এগিয়ে আসে আমার ভাবনা চিন্তাও বাড়তে থাকে। মা আর বোনের আনন্দ আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকে। ছোট বিষয় নিয়ে মেয়েমানুষের আনন্দ করার প্রবনতা চিরন্তন। দেখা গেল পাশের বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে, তাদের মনে আনন্দের ফল্গুধারা বয়ে যাচ্ছে। পাশের বাড়ির বিয়ের বিষয় নিয়ে তাদের ভাবনা চিন্তার শেষ নেই। যদি এটা নিজেদের বাড়িতে হয় তবে তাদের আনন্দের মাত্রা কতো উপরে ওঠে তা মনে হয় প্রেশার মাপা মেশিনে মাপা যাবে। পরমা মানে আমার ছোট বোনের আনন্দ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আগে থেকে স্কুলে ছুটির দরখাস্ত করে রেখেছে। বলেই দিয়েছে ত্রিশ তারিখের পর ছুটি দিক আর না দিক সে স্কুলে যাবেনা। মায়ের কাছে শাড়ির বায়না করে রেখেছে। একটা হলুদ শাড়ী আর একটা জামদানী শাড়ি। মা আমার জন্যে বেছে বেছে খুব সুন্দর একটা স্যুট কিনেছে। বোঝাই যায় বেশ দামী। বাবার পেনশনের টাকা থেকে প্রতিমাসে একটা অংশ সরিয়ে রাখে মা। সেই টাকা থেকেই এখন এতোসব শপিং। আমার বিয়ের সব খরচই হবে বাবার পেনশনের টাকা থেকে। বাবা অবশ্য তার গ্রাচুইটি ফান্ড আর তার মাসে মাসে কিছু কিছু করে জমানো টাকার ওপর ব্যাংক থেকে লাভ পান। তবে সেটা সামান্য। সেই লাভ থেকে তো বিয়ের মতো বড়ো খরচ চলেনা।
বাবা পুরোপুরি ভাগ্য বিশ্বাসী। তার মনে আপশোস কম। যা পেয়েছেন জীবনে তাতেই সন্তুষ্ঠ। তিনি বলেন ভাগ্যে না থাকলে আমি কোনদিনই উপরের সিঁড়ি খুঁজে পাবোনা। আমি বলি, বাবা ভাগ্য বলে কিছু নেই। সবই কর্ম। কর্ম ছাড়া ভাগ্যের উন্নতি হয়না। বাবা বলে, ‘সৃষ্টিকর্তা কোটি কোটি বছর আগেই তোর ভাগ্য সৃষ্টি করেছেন যেভাবে তোরা একটা সফটওয়্যার বাজারে ছাড়ার আগে বহুদিন ধরে সেটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করিস। আর সফটওয়্যারে দেয়া প্রোগ্রাম কি সফটওয়্যার ইচ্ছে করলে নিজে থেকে পরিবর্তন করতে পারে? পারে না।’
আমি বলি, ‘তাহলে বাবা এক কাজ করো, আমি কোন কাজ টাজ না করে বাড়িতে বসে থাকি। ভাগ্য এসে মুখে তুলে খাইয়ে দিয়ে যাবে।’
বাবা রাগ করে না, বলে, ‘ভাগ্য আছে বলেই আমরা সবাই এক কাজ করিনা। সকলের জীবনও এক রকম নয়। পৃথিবীতে বারো রকমের মানুষ আছে। এই মানুষগুলো তাদের কাজ করে চলে, তারা তাদের ইচ্ছা মতোই করে কিন্তু তারা জানেও না যে এই যে ইচ্ছা সেটা কোথা থেকে আসলো। এই ইচ্ছাটাও স্রষ্টার দেয়া। তাই তুই যাই করিস সেটাই তার প্রোগ্রাম করা। তুই তোর কাজ করে যা।’
আমি কাজ করি। দিন রাত কাজ করি। টাকা জমাতেই পারিনা। সংসারে কিছু টাকা দিতে হয়। কিছু টাকা দিতে গেলে আমার হার খরচে টান পড়ে। বস বলেছে শীগ্রি আমার প্রোমোশন হবে। কিন্তু কতো টাকা বাড়বে সেটা বলেনি। আমি তাতে দমিনা, কাজ করে যাই। মাত্র পনেরো হাজার টাকা বেতন আমার। কিছু টাকা বাড়িয়ে দিলেই আমার যাতায়াত ভাড়াটা হয়ে যেত। মুল বেতনে আর হাত দিতে হতোনা। সুখবর পেলাম আমার বিয়ের ঠিক দশ দিন বাকি থাকতে। পাঁচ হাজার টাকা বেতন বেড়েছে। মনে হয় নাজ, মানে যে মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে সে বেশ ভাগ্যবতী। বাবার কথাই তাহলে কি ঠিক? ভাগ্য বলে কিছু একটা আছে?
লনের সুর্য্যমুখী গাছে ফুল ফুটেছে। আটটা সুর্য্যমুখীর চারার ওপর বড়ো বড়ো হলুদ ফুল সুর্য্যের দিকে চেয়ে থাকে দিন রাত। বেলী ফুলগুলো গন্ধ ছড়ায় বেশী। সুন্দর করে ছাঁটা লনের ঘাসগুলোর মাঝে গোলাপঝাড়গুলো বাতাসে দুলে সুঘ্রান ছড়ায়। আমার জানালা দিয়ে সেই ঘ্রান গোটা রুমে ছড়িয়ে পড়ে। আরও নাম না জানা অনেক ফুল গাছ আছে লনে যেগুলোর নাম বাবার মুখস্ত। বাবার কাছে ফুল গাছের বংশ বৃত্তান্তসহ মোটা একটা বই আছে। সেটা বাবার বইয়ের র‌্যাকে যত্ন করে সাজানো থাকে। বাবা মাঝে মাঝে বইটা নিয়ে বসে কি সব টুকে নেয় নোটবুকে। বিয়ের আগে আমি ছুটি নিয়েছি প্রায় দশ দিন। গত এক দেড় বছরে বড়োজোর দুই দিন অফিসে অনুপস্থিত ছিলাম আমি। বসদের সুনজরে থাকা আমার জন্য ছুটি পাওয়া কোন সমস্যাই ছিলনা। এক তারিখ থেকে ছুটি পেলাম আমি। দশ তারিখ পর্যন্ত। ত্রিশ তারিখে প্রাপ্তি চলে এলো বাড়িতে। আমার মেজ বোন। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। হলেই থাকে। ও আসাতে বাড়ি যেন আরও গরম হয়ে উঠলো। ও একটু বেশী হৈ চৈ প্রবন। ছুটির প্রতিদিন আমাকে নিয়ে পার্লারে যাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠলো সে। তার কথা গায়ে হলুদের সময় ভাইয়াকে লাগতে হবে নায়কের মতো। 
আমি দেখতে তেমন খারাপ নই। আমার সুঠাম নায়কের মতো একটা শরীর আছে। গায়ের রঙ বেশ ফর্শা না হলেও রঙটা যেন আমার শরীরের সাথে মানিয়ে গেছে। পরমা আর প্রাপ্তি দু’জন মিলে আমাকে এক তারিখে পার্লারে নিয়ে গেল। ছেলেদের পার্লার নয়, মেয়েদের পার্লার। ওরা আগে থেকে পরামর্শ করে বান্ধবীর পার্লারে এসবের ব্যবস্থা করে রেখেছিল। আমার ইতঃস্তত দেখে প্রাপ্তি বললো, ‘এখানে এই সময়ে কোন মেয়ে আসবেনা। তোমার জন্য এটা একেবারে ক্লোজড করে রেখেছি। খালি আমার বান্ধবী হেমন্তী মানে বিউটিশিয়ান তোমাকে একটু যত্ন নেবে।’
‘এখানে না গিয়ে মোড়ে একটা ছেলেদের পার্লার আছে, ওখানেই যেতে পারতাম।’ আমি বললাম।
‘ছেলেদের আবার পার্লার! হুহ্।’ মুখ ভ্যাংচালো পরমা। ‘ওরা সৌন্দর্যের কি বোঝে। মেয়েরা পার্লারে যায় শুনে ওদেরও যাবার ইচ্ছে হয়েছে তাই এসব বানিয়েছে।’
‘শোনো ভাইয়া, আমার বান্ধবী ইংল্যান্ডে এই সাবজেক্টে পড়াশোনা করেছে। এখন বড়ো করে পার্লার দেয়ার আগে প্রাকটিস করছে। ও তোমাকে জাস্ট কিছু টিপস দেবে আর মেকাপ করাবে তিনদিন আর তাতেই দেখবে তোমার চেহারা অনেক ফিরে এসেছে। বাসে ঝুলে ঝুলে চাকরি করতে যাও, চেহারার যা হাল হয়েছে! পাত্রীপক্ষ ছিঃ ছিঃ করবে।’ প্রাপ্তী আমাকে টানতে টানতে নিয়ে গেল ভেতরে।
বোন থাকলে বোঝা যায় ভাইয়ের মাহাত্ম। আমার অবস্থা হয়েছে এমন যে না পারছি সইতে না পারছি কইতে। ওরা আমাকে সাজাচ্ছে, গোছাচ্ছে, পরাচ্ছে, ওদের কথামতো সব করছি। তারপরও ওদের শান্তি নেই। আমার ভ্রু করতে হবে, আমার ভ্রু নাকি বেশী মোটা। মুখের ত্বকে নাকি কালো দাগ আছে। ওগুলো তুলতে হবে। কিন্তু গায়ে হলুদের দিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হলো আগের আমি আগের মতোই আছি। ওরা দু’জন আমাকে একটু বেশী সচেতন করে তুলেছে এইযা। আমার তেমন বন্ধু বান্ধব নেই। হৈ চৈ যা করার তা প্রাপ্তী আর পরমার বান্ধবীরাই করলো। আমাকে এক গাদা হলুদ শাড়ী পরা মেয়ে মানুষের দল হলুদ মাখিয়ে ভুত বানালো। মিস্টি খাওয়ালো। এই প্রথম বাবাকে হাসতে দেখলাম আমি। শুনেছিলাম ছেলের বিয়েতে বাবাদের খুব নাকি আনন্দ হয়। আজ তা প্রত্যক্ষ করলাম। এতোদিন বাবাতে হাসতে দেখেছি কেবল গাছপালাদের সাথে। লনের ভেতর বা পেছনের বাগানের ভেতর যে সব গাছ গাছালি আছে বাবা তাদের সাথে কথা বলেন আর কি মনে করে যেন হাসেন। কিন্তু বাড়ির ভেতর এসে তার মুখ গোমড়া হয়ে যায়। আজ সবার আনন্দ দেখে তিনি কিভাবে মুখ গোমড়া করে রাখবেন?
বিয়ের দিন অফিসার্স ক্লাবে সবার সাথে বাবাকেও স্যুট পরতে দেখলাম। এর আগে শেষবার তিনি স্যুট পরেছিলেন আট বছর আগে চাকরিরত অবস্থায়। আমিও স্যুট পরেছি। একটু নীল ধরনের কমপ্লিট স্যুট, সাথে চমৎকার কারুকাজ করা টাই। বিয়ের দিনে স্যুট পরার প্রচলন আধুনিক সমাজে দিন দিন বাড়ছে। আগে বিয়ের দিনে মানুষ পাঞ্জাবী পায়জামা পরতো বা শেরওয়ানী পরতো সেটা প্রায় উঠে যাচ্ছে। গ্রামের দিকে এখনও সেসবের প্রচলন আছে। আত্মীয় স্বজনের সাথে আমার অফিসের অনেক কলিগ এসেছে। তাদের সাথে তাদের বউ বাচ্চাদের এনেছে তারা দাওয়াত না দেওয়ার পরেও। আসলে সবাই পরিবার নিয়ে একটু আনন্দ করতে চায়, এতে দোষের কি আছে? পিওন মনসুরকে দাওয়াত দেয়া হয়নি কিন্তু সেও এসেছে অনুষ্ঠানে। মাথা নিচু করে ড্রাইভারদের সাথে বসে আছে। আমাকে এগিয়ে যেতে দেখে ও মুখ তুললো, ‘স্যার আমি এসেছি।’
‘খুব ভালো করেছো মনসুর।’ আমি ওর কাঁধে হাত রাখলাম।‘আসলে যাদের ফোন নাম্বার আমার কাছে ছিল তাদেরকেই বলতে পেরেছি। তা একা এসেছো কেন, পরিবার কই?
মনসুর মাথা নিচু করেই থাকলো। ‘স্যার ছোট মেয়েটা আসতে খুব জেদ করেছিল। আমি নিয়ে আসিনি।’
‘কেন মনসুর? কেন তাকে আনোনি?’
মনসুর একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকলো। আমি বললাম, ‘বাচ্চাদের নিয়ে আসতে পারতে। যাও নিয়ে আসো এখন।’
‘না স্যার।’ এপাশ ওপাশ মাথা দোলালো মনসুর। ‘আমি আপনার বিয়েতে কোন গিফট আনতে পারিনি। সবাই কিছু না কিছু সাথে করে নিয়ে এসেছে। আমি এমনই হতভাগা যে একটা চকলেট কেনার টাকা আমার কাছে নেই।’
আকস্মাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেল। এতো আনন্দের মাঝে যেন একটা কষ্টের ঢেউ আমার ওপর দিয়ে বয়ে গেল। ‘স্যার।’ মনসুর বলে চললো।‘অনেক কষ্ট করে সংসার চালাই। খালি হাতে আসার ইচ্ছে ছিলনা কিন্তু আপনার বিয়ে আর আমি যদি না যাই আপনি কি ভাববেন। আপনি কতোবার টাকা পয়সা দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছেন। এইতো সেদিন আমি পাঁচশো টাকা আর দুটো প্রাইজবন্ড আপনার কাছ থেকে নিয়ে এলাম।’
‘মনসুর।’ আমি বললাম। ‘এসব নিয়ে একদম ভাববে না। তুমি যে এসেছো এতেই আমি অনেক খুশি হয়েছি। আর যাবার আগে আমার সাথে দেখা করে যেও, ঠিক আছে?
মনসুর মাথা নাড়লো।
মনসুরের চ্যাপটার শেষ করে আমি আমার আত্মীয় স্বজনদের কাছে ফিরে এলাম। প্রায় সকলের সাথে কুশল বিনিময় করলাম। আমার নতুন বউ নাজের সাথে আমি দাঁড়িয়ে ফটোসেশন করলাম বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবার পর। ’খাওয়া দাওয়ার পাট শেষ হলে একটু দ্রুতই আমরা সকলকে বিদায় জানালাম। বেরিয়ে আসার আগে চারপাশে তাকিয়ে মনসুরকে খুঁজলাম আমি। নাহ কোথাও নেই ছেলেটা।
আমরা ফিরে এলাম বাড়িতে। সাথে নতুন বউ নাজ।
বিয়ের প্রথম প্রথম বেশ এদিক সেদিক ঘুরতাম আমি আর নাজ। জীবনটাকে প্রজাপতির জীবনের মতো ভারমুক্ত মনে হতো। বেতনের টাকা সব ঘোরাফেরার পেছনে ব্যয় হয়ে যেত। নাজ আমাকে বলতো, ‘জাস্ট ডোন্ট ওরি। এটা তোমার জীবন নয়। এটা স্রষ্ঠার তৈরী করা একটা প্রোগ্রামড জীবন। তার ইচ্ছাতেই সব হচ্ছে। তাই তুমি যদি শুধু শুধু চিন্তিত হও তবে সেটা একটা বাড়তি বোঝাই হবে তোমার জন্য।’
তবে নাজও কিছুটা চিন্তিত হয়ে উঠলো যখন দেখলো মাস শেষ হবার আগেই দ্রুত টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে এবং চাকরির টাকায় প্রায় কোন কিছুই হচ্ছেনা। ও বললো, ‘চাকরি ছেড়ে দাও, একটা ব্যবসা করো। দিনের পর দিন অন্য একটা কোম্পানীর কাজ করে তাদের লাভ এনে দিচ্ছো কিন্তু তুমি কিছুই পাচ্ছোনা। তারচেয়ে নিজের জন্য কিছু করো।’
আমিও চিন্তা করে দেখলাম আগে বিশ হাজার টাকায় আমার নিজের হাত খরচ বেশ ভালোভাবেই চলে যেত। কিন্তু দু’জনের সংসার এই টাকায় চলেনা। বউয়ের খরচ আছে, সংসারে নানা জিনিষ কিনতে হয়। এটা যে সবসময় দু’জনের সংসার থাকবে তাতো নয়। এরপর সদস্য সংখ্যা বাড়বে। তাদের খরচ যোগ হবে। তখন কি করবো? এই সেই চিন্তা করে আমিও চাকরিটা হুট করে ছেড়ে দিলাম। বস ছাড়তে চায়নি কারন আমি খুব মনোযোগ দিয়ে অফিসের কাজ করতাম। চা সিগারেট এসবের নেশা আমার ছিলনা অন্যদের মতো তাই বস আমাকে অনেক পছন্দ করতেন ব্যক্তিগতভাবে। তারপরও চাকরিটা না ছেড়ে পারছিলাম না। চাকরি ছেড়ে আমি বসে রইলাম না। প্রাথমিকভাবে বাড়ির সামনের গ্যারেজটা তুলে দিয়ে সেটাকেই একটা দোকান বানিয়ে নিলাম। কিছু কিছু করে দোকানের মালপত্রও সাজিয়ে ফেললাম। এসব করতে করতে একটা মাস চলে গেল। দোকানটা কোন ব্যবসা নয় জানি। তবে সাময়িকভাবে এটা একটা সাপোর্ট হতে পারে আমার জন্য। দেখলাম বাবা নিয়মিত দোকানে বসা শুরু করেছেন। আমিও এবার দোকানের চিন্তা বাদ দিয়ে কোন একটা ব্যবসা করা যায় কিনা ভাবতে লাগলাম। অনেক ব্যবসার চিন্তা মাথায় এল। এক্সপোর্ট ইমপোর্ট বিজনেসটা বেশ বুঝি আমি, কারন অফিসে দিনরাত এসব নিয়েই কাজ করতাম। কিন্তু সমস্যা হলো এলসি করার বিষয়টা। আমারতো এতো টাকা নেই। কম করেও দশ লাখ টাকা নিয়ে শুরু করতে হবে। দিন রাত ভাবি কি করা যায়।
টাকার কোন সুরাহা হয়না। বাবার কাছে যা ছিল তা দোকানের মালপত্র তোলার পেছনে ব্যয় হয়েছে। দোকানে যা আয় হয় তা আমার বেতনের সমানই বলা চলে। নাজের নিজের কিছু সঞ্চয় ছিল তা দিয়ে কয়েকটা মাস চলে। এর মধ্যে আমি ব্যাংক লোনের জন্য চেষ্টা করতে থাকি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটাও হয়না কারন আমার ব্যবসাটা শুরু করে তাদের প্রফিট দেখাতে হবে তবেই লোন পাবো আমি।
চাকরি ছাড়ার ছ’মাস চলে গেছে। আমার এক্সপোর্ট ইমপোর্টের কোন অফিস নিতে পারিনি। এরমধ্যে একবার ভেবেছিলাম পুরোনো চাকরিটা আবার নেবো। কারন দোকান থেকে কিছু আয় আসছে, চাকরি করলে আরও কিছু সাপোর্ট হবে। কিন্তু বাদ সাধলো আমার ইগো। যা ছেড়ে দিয়ে এসেছি তার কাছে যাওয়া মানে হলো নিজের দাম কমানো। অফিসের সবাই মুখ টিপে হাসবে আর আমার ব্যর্থতার কারন জানতে চাইবে। নাহ্ সেখানেও যাওয়া যাবেনা।
সংসারের খরচ অনেক কমিয়ে এনেছি আমি। আগে যে বড়োলোকিটা ছিল তা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারা গেছে। যেমন বাড়িতে কাজের দুটো বুয়া ছিল, একটাকে তাড়ানো হয়েছে। বিয়ের প্রথম কয়েক মাসের দুরন্ত ঘোরাঘুরির পেছনে ব্যয় হয়েছে অনেক টাকা। এখন ঘোরাঘুরির পাট শেষ। নাজের সংসারের দায়িত্ব পালন করার পর যেটুকু সময় থাকে তা দিয়ে দোকানের হিসাব নিকাশ করতে হয়। বাড়িতে আগে পত্রিকা রাখা হতো। এখন আর পত্রিকা রাখা হয়না। ডিশের লাইনটাও কাটা হয়েছে। অনেকটা সাশ্রয় হয়েছে টাকার।
বলতে গেলে এখন দোকানের টাকায় সংসার চলে। পালা করে আমি আর বাবা বসি দোকানে। ভাবছি আরও একটা দোকান দেব। কিন্তু নাজের নিষেধ দোকান কোন স্থায়ী সমাধান নয়। বিজনেস করতে হবে আমাকে। দোকানদার এই কথাটা ও সহ্য করতে পারেনা মোটেও। বিয়ের এক বছর পার হলো। বলতে গেলে গড়িয়ে গড়িয়ে পার হলো। অভাব যখন পাশে থাকে সময় তখন আলসেমি করে। সুখের সময় রেসিং কারের মতো। সাঁই করে বেরিয়ে যায়।
নাজ আর আমি সন্তান নেবার কথা ভুলেও চিন্তা করিনা। কারন বাবার অনেক টাকা নষ্ট হয়েছে পরমার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পেছনে। প্রাপ্তিও একটা ভালো স্কুলে পড়ে। ওর খরচ চলে বাবার পেনশনের টাকায়। তাই এই অনটনের সাম্রাজ্যে আর কাউকে টেনে এনে কষ্ট দিতে আমি চাইনা। নাজ মানুষ হিসাবে খুবই ভালো এবং মিশুক। আমাদের পরিবারে আসার পর এক দিনের ভেতর সকলের মন কেড়ে নিয়েছে সে। আর আমাদের পরিবারের সকলেই একটু ভাবপ্রবন। ফলে তাদের সাথে সখ্যতা গড়তে নাজের এক ঘণ্টার বেশী লাগেনি।

বিয়ের দেড় বছর পর একদিন আমি আমার বসকে ফোন দিলাম। আমার আগের কোম্পানী সিপিএল এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সেফায়েত উল্লাহ। এতদিন পর আমার ফোন পেয়ে উল্লসিত হয়ে উঠলেন তিনি। আমি বললাম, ‘স্যার একদিন আসতে চাইছি আমি আপনার সাথে দেখা করার জন্য।’
তিনি অনুমান করে ফেললেন বিষয়টা। আবেগপ্রবন গলায় বললেন, ‘আপনি নিশ্চয় আবার জয়েন করতে চাইছেন আমাদের এখানে।’
আমি একটু চিন্তা করে বললাম, ‘স্যার, আসলে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম ব্যবসা করবো বলে। যেহেতু কিছুটা ধারনা পেয়েছি আপনাদের সাথে থেকে সেটা দিয়েই চালাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মুলধন গোছাতে পারিনি। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে, এখন আমি আবার আসতে চাই স্যার।’
‘ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।’ সেফায়েত উল্লাহর গলায় উষ্মতা।‘আমি তো আপনাকে ছাড়তেই চাইনি। আপনি জোরজার করাতে যেতে দিয়েছি মাত্র। ফিরে আসলে আমি কি যে খুশী হবো! তবে কি জানেন, এখন এই কোম্পানীর মালিক আমি একা নই।’
‘কি বলছেন স্যার!’
‘জ্বি, আমাদের পিওন মনসুরকে চিনতেন না? সে আমাদের অর্ধেক শেয়ার কিনে নিয়েছে! এখন আমার মতো সেও একজন মালিক এই কোম্পানীর।’
বসের সামনে বসে আমি আমার হৃৎপৃন্ডের কম্পন টের পাচ্ছি। যতো কথা শুনছি আমার শরীরের কাঁপুনি ততো বাড়ছে। অসম্ভব! সেই মনসুর! যে দেড় বছর আগে আমার বিয়েতে এসেছিল খালি হাতে! সেবার কি লজ্জা আর আত্মগ্লানি নিয়ে সে মাথা নিচু করে বসেছিল। তার ছোটমেয়েটা বিয়ের অনুষ্ঠানে আসতে চেয়েছিল সে আনেনি কারন সে খালি হাতে এসেছিল। তার কাছে একটা চকোলেট কেনার টাকা ছিলনা। এ কি সেই মনসুর যে আমার কাছ থেকে টাকা ধার করতে এসেছিল বিয়ের দিন পনেরো আগে? আমি তাকে একটা পাঁচশো টাকার নোট আর দুটো প্রাইজবন্ড দিয়েছিলাম ধার হিসাবে।
এমডি সিগারেট ধরালেন একটা। ‘ভাগ্য কা’কে কখন কোথায় নিয়ে যায় কে জানে। আচ্ছা আপনি কি কখনও জানতেন না তার বিষয়টা?’
‘কোন বিষয়টা স্যার?’ হৃৎকম্পন থামিয়ে আমি প্রশ্ন করলাম।
‘তার প্রাইজবন্ডের ড্রতে প্রথম পুরস্কার পাবার বিষয়টা?’
‘না...।’ বলে আমি থেমে গেলাম। আমার সারা শরীরে হিম শীতল এক স্রোত বয়ে গেল। চোখের সামনে কোথায় যেন একটা নীল আলো ফুটে উঠে মিলিয়ে গেল আবার। আমি বুঝতে পারছি এবার। পুরো রহস্যটা এবার পরিস্কার আমার কাছে।
‘সম্ভবতঃ আপনি পত্রিকা টত্রিকা পড়েন না বা খবর দেখেন না।’ বস বললেন।‘এটা নিয়ে কতো লেখালিখি হলো পত্রিকায়। কত নিউজ হলো টিভিতে। আপনার দেয়া দুটো প্রাইজবন্ডে প্রথম আর দ্বিতীয় পুরস্কার পেল মনসুর। একটায় পনেরো লাখ আরেকটাতে দশ লাখ। সেই টাকা সে একটুও অপচয় করেনি। আমার সাথে বিজনেস করবে বলে ভিসা করে চায়নায় গেল। ওখানকার কয়েকটা কোম্পানীর সাথে কথা বলে বাংলাদেশেই কিছু চায়নিজ প্লান্ট বসালো। ওর আগ্রহ আর সততায় মুগ্ধ হয়ে চিনা কোম্পানীগুলোও ইনভেস্ট করলো ওর সাথে। তুমি তো জানো বিহারী ছেলে মনসুর। অনেক খাটতে পারে। পিওন হলে কি হবে সুন্দর ইংরেজী পারে। চিনা জিন্স প্যান্ট তো খুব চলে এখানে। সে সেগুলোর মেশিন বসালো উত্তরায়। তারপর খেলনা আর কম্পিউটার এক্সেসরিজ ইমপোর্ট করতে শুরু করলো। হঙকঙ থেকে আনতে শুরু করলো বেবী প্রডাক্ট। যেহেতু আমাদের কোম্পানী দেউলিয়া হতে বসেছিল। আমাদের ইলেক্ট্রিক কেবল আর সুইচ উচ্চমুল্যের কারনে বাজারে ঢুকতে পারতো না, আমি কোম্পানী বিক্রি করে দেবার চিন্তা করতাম। সেই সময়, আজ থেকে ছয় মাস আগে মনসুরই প্রস্তাব দেয় আমাকে। ও বললো স্যার কোম্পানী বিক্রী করবেন কেন, আসুন নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে বাজারে আসি। সিপিএল কে তো ক্রেতারা চেনে। এখন নতুন প্রোডাক্ট মার্কেটে নিয়ে এলে তারা গুডউইল এর কারনে বিশ্বাস করবে আমাদের। ও ফিফটি পার্শেন্ট শেয়ার কিনে নেবার ইচ্ছে প্রকাশ করলো। আমি এতে বরং খুশী হলাম কারন ভেবেছিলাম লস মেনে নিয়ে কোম্পানী ছেড়ে দিতে হবে। সেখানে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো আমি। এখন আর সিপিএল নয়, কোম্পানীর পুরো নাম সিপিএল এরিকা লিমিটেড। মনসুরের ছোট মেয়ের নাম এরিকা। ওর নামেই নামকরন হয়েছে তার অংশটুকুর।’ বস আয়েস করে সিগারেটে টান দিলেন। ‘দেখুন আপনি কি কোনদিন ভাবতে পেরেছিলেন যে আপনার প্রাইজবন্ড দুটোই মনসুরের মতো অভাগার জীবন বদলে একেবারে কোটিপতি করে দেবে? অথচ আল্লাহ চাইলে কি না হয়। আল্লাহ আপনার মাধ্যমে তাকে কোটিপতি বানিয়ে দিল। তিনি সব কিছু পারেন। যাক, এখন বলুন আপনি জয়েন করছেন কবে থেকে?’
আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না। সম্ভবতঃ আমার কানদুটো নষ্ট হয়ে গেছে। বসের সাথে কি কথা হলো বা কি বলে আমি বিদায় জানালাম কিছুই মনে করতে পারছিনা। কেবল স্মরন করতে পারছি অফিসের গেট দিয়ে যখন বেরুচ্ছি তখন একটা কালো প্রিমিও গাড়ী এসে দাঁড়িয়েছিল টেরেসে। কালো রঙের সানগ্লাস আর কমপ্লিট স্যুট পরা মনসুরকে চিনতে ভুল হয়নি আমার। মনসুর আমার কাছে আসেনি কারন আমি ওকে দেখার সাথে সাথে অন্যদিকে ফিরে গিয়েছিলাম। ও আমাকে চিনতে পারেনি। হায় মনসুর, কেউ কেউ না চাইলেও পায়। আমি মনসুরকে এড়িয়ে গিয়েছিলাম কেন? তবে কি আমি জেলাস হয়ে গিয়েছিলাম? নাকি নিজেকে ঘৃনা করতে শুরু করেছিলাম?
বাড়ি পৌছেও আমি স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না কোনভাবেই। নাজ কিভাবে যেন বুঝে ফেললো বিষয়টা। ওর ভেতর ঘটনা অনুমান করে ফেলার মতো কিছু আধ্যাত্বিক শক্তি আছে। বাধ্য হয়ে ওকে বলতেই হলো। সব শুনে ও বললো, ‘ছোট বলে কোনকিছুকেই অবজ্ঞা করতে নেই। তুমি বাবার কেনা প্রাইজবন্ডগুলোকে তেমন পাত্তা দাওনি। আজ তুমি যদি ওগুলোকে রাখতে তবে তুমিই পঁচিশ লাখ টাকার মালিক হতে কিন্তু প্রকৃতি চায়নি তুমি তা হও। প্রকৃতি চেয়েছে তোমার চেয়েও গরীব কারো ভাগ্য ফিরিয়ে দিতে। এটা তোমার দোষ নয়। হয়তঃ এমনও হতে পারতো যে তুমি প্রাইজবন্ডগুলো মনসুরকে দাওনি কিন্তু ওগুলোর একটাও ড্র তে জেতেনি। তাই মহাস্রষ্টার পরিকল্পনাকে সম্মান জানাও। তিনি কি কারনে কাকে কি দেন সেটা তিনিই ভালো জানেন। তোমার আমার তাতে মন খারাপ করার কিছুই নেই। আমরা ভালো আছি। তুমি চাকরিটা আবার পেয়েছো এতেই আমি সুখী। সমস্যা কি মনসুরের অধীনে চাকরি করতে। একসময় সে তোমার অধীনে চাকরি করতো। আজ তুমি তার অধীনে চাকরি করবে। সবাই তো মানুষ। মন থেকে সব ঝেড়ে ফেল। আরও বিশ হাজার টাকার সংস্থান হয়েছে সেই বা কম কিসে?’
সত্যি আমি মন থেকে সব ঝেড়ে ফেললাম। এরিকার কথা ভাবলাম। ছোট মেয়েটা কতো রাত হয়তঃ কেঁদেছে আমার বিয়েতে আসতে না পারার কষ্টে। আজ সে বাবার সাথে কালো প্রেমিও গাড়িতে চেপে স্কুলে যায়। বাবা তাকে নিয়ে থাইল্যান্ড ঘুরতে যায়। মন ভরে উঠলো অনেক পাওয়ার আনন্দে।
বাইরে তাকালাম। বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে নাজ সেই বৃষ্টি দেখছে। বৃষ্টির আলাদা একটা ঘ্রান আছে। আমি বুক ভরে সেই ঘ্রান নিলাম।

মেঘ অরণ্য বই থেকে
রচনাকাল : অক্টোবর ২০১৯

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট
সাবিহা সুলতানা প্রিতী, টাঙ্গাইল
September 16, 2020 at 5:34 PM

এতোসুন্দর একটা গল্প যে ভাললাগার শেষ নাই। কি শক্তিশালী লেখা যে ভেতরটাকে পর্যন্ত নাড়িতে দেয়। লেখকের প্রতি অকৃত্তিম অভিনন্দন রইল।

Reply
avatar