একদিকে অপরাধী নিয়ে দৌড়ুদৌড়ি, অন্যদিকে অদৃশ্য এক শত্রুর সাথে যুদ্ধ। সাধারন মানুষ হলে তার সাথে পেরে ওঠা যায় কিন্তু যে বস্তু দেখা যায়না তার সাথে লড়াই করা আর বাতাসের সাথে লড়াই করা এক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু তাই করতে হচ্ছে তাকে দিনরাত। যে কাজ করেন নি কোনদিন। ভাবেনওনি যে তাকে করতে হবে তাই তাকে করে যেতে হচ্ছে কোন ধরনের ডাক্তারী অভিজ্ঞতা ছাড়াই।
কিন্তু তাই করতে হচ্ছে তাকে দিনরাত। যে কাজ করেন নি কোনদিন। ভাবেনওনি যে তাকে করতে হবে তাই তাকে করে যেতে হচ্ছে কোন ধরনের ডাক্তারী অভিজ্ঞতা ছাড়াই।
হ্যাঁ, বলছিলাম কালিগঞ্জ থানার ওসি এ কে এম মিজানুল হকের কথা। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয় চলতি বছরের ১১ এপ্রিল। তারপর থেকেই তার কাজের শেষ নেই। একের পর এক করোনা রোগী বাড়তে থাকে উপজেলায়। সেই সাথে ব্যস্ততাও বাড়তে থাকে তাঁর। একদিকে সরকারী নির্দেশনা অন্যদিকে পারিবারিক আতংক। এর মাঝে দিনরাত কাজ করে যেতে হয় তাঁকে। কিন্তু পারিবারিক আতংক তাকে টলাতে পারেনি,পিছু ফিরে তাকাননি কোনদিকে। তার একটাই লক্ষ্য কাজ করে যেতে হবে। সেবা দিয়ে যেতে হবে সাধারন মানুষকে। মানুষকে করোনা থেকে বাঁচাতে ও সচেতন করতে শুরু থেকেই লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, বাজার মনিটরিং, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা, লকডাউন ও হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করা, রাতের অন্ধকারে অসহায় পরিবারের ফোন পেয়ে তাদের মাঝে খাবার পৌছে দেওয়া, সুবিধাবঞ্চিত সব শ্রেণী পেশার মানুষকে নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানবিক খাদ্য সহায়তা দেয়া এসবই ছিল তার কাজ।
কখনও কখনও প্রচন্ড ক্লান্তি তাকে ছুঁয়ে যেত, কিন্তু থামাননি তার শ্রম। তার সেবা। করোনা আজও তার ভয়াল থাবা বিস্তার করে রেখেছে পুরো দেশ জুড়ে। আর তাই থেমে গিয়ে একটু ছুটি নেবার সুজোগ নেই ওসি এ কে এম মিজানুল হকের। ময়মনসিংহে জন্ম এ কে এম মিজানুল হক ঢাকার তেজগাঁও কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করার পর ১৯৯৮ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেন।
একই বছর যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। দায়িত্ববান মিজানুল হক নিজের যোগ্যতায় উঠে আসেন আজকের অবস্থানে। তিনি এখনও বিশ্বাস করেন পুলিশ হয়েও সততা ও পরিশ্রম দিয়ে কাজ করে গেলে এলাকায় অপরাধ থাকেনা। দায়িত্ববোধ ভিন্ন একটা জিনিষ যা অর্জন করা যায়না। এটা পুরোপুরি জন্মগত একটা ব্যপার। মিজানুল হক এই জিনিষটি নিয়েই জন্মেছেন। আর তাই যখন চারপাশে করোনার কড়া নাড়ার শব্দ, প্রচন্ড ঝুঁকি সত্বেও তিনি চাকরির সময়ের বাইরেও কাজ করে যান নিবেদিতভাবে। যখন থানা ঘুমিয়ে যায়, রাস্তায় কমে যায় মানুষজন, তিনি বেরিয়ে পড়েন। যারা গরীব, রাস্তার পাশের ফুটপাথে যাদের বসবাস তাদের জন্য কিছু সেবার তাগিদে। তার ইউনিফর্ম থাকেনা বলে তারা তাকে চেনেনা। তাছাড়া মিজানুল হক সবসময় মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কালীগঞ্জ উপজেলাতে মাদকের বিরুদ্ধে তিনি বহু অভিযান চালিয়েছেন এবং বর্তমানেও চলছে। এলাকায় অনেকে বিশ্বাস করেন যে তিনি যতোদিন আছেন ততদিন এই এলাকাতে মাদক তার ভয়াল থাবা বিস্তারের সুবিধা করতে পারবে না। তিনি বিশ্বাস করেন সবাই যদি বাড়িতে থাকে এবং বাইরে বেরুবার সময় মাস্ক ব্যবহার করেন তবে খুব দ্রুতই করোনার মতো ভয়াল রোগ আমাদের দেশ থেকে নির্মূল হয়ে যাবে। তাছাড়া বাইরে থেকে এসে হাত ধোয়া বা টাকা, খুচরো পয়সা স্পর্শ করার পর ভালভাবে হাত ধোয়া এবং আনুসঙ্গিক কিছু নিরাপত্তা নিশ্চিতের ভেতরে রয়েছে এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়।
২০১১ সালে রেজওয়ানা শারমিনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মিজানুল হক। স্ত্রী গৃহিনী। বর্তমানে তাদের সংসারে দুই ছেলে, মাহিনুল হক নূর (৮) ও মাহবিরুল হক (২)। বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির একনিষ্ঠ ভক্ত মিজানুল হক তার দায়িত্বপালনের ব্যপারে কঠোর হলেও তার রয়েছে একটি কোমল মন। তিনি নিজে মাঝেমাঝে কবিতা লেখেন। কবিতা লিখতে ভাল লাগে তার। তিনি বলেন সাহিত্য ও শিল্প মানুষকে অপরাধ থেকে দুরে রাখে। এই শাখাতে যারা কাজ করে তাদের প্রতি ভালো ধারনা রয়েছে তার। রূপালী পাতার প্রথম সংখ্যাটি তার বেশ ভালো লেগেছে। যারা এই সংখ্যাতে লিখেছেন সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ওসি মিজানুল হক।