স্বার্থই সকল স্বার্থকতা..................মুশফিকুর রহমান আবীর


পৃথিবীতে প্রতিটি সার্থকতার পিছনে স্বার্থই মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। পৃথিবীতে কোন কাজই নিঃস্বার্থভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, তেমনিভাবে প্রতিটি ভালোবাসার পিছনে স্বার্থই মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
সৌন্দর্যমণ্ডিত চাঁদের বিচ্ছুরিত আলোয় রাতের অন্ধকার আকাশ মৌন স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে। চাঁদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেই রাতের কালো মলিন আকাশের সার্থকতা বিদ্যমান। রাতের কালো আকাশের বুকে সৌন্দর্য খচিত চাঁদকে ধারণ করাই আঁধার আকাশের মূল স্বার্থ, সে স্বার্থ রাতের আকাশ, দিনের আলোর কাছে ত্যাগ করতে নারাজ। তাইতো চাঁদের সৌন্দর্য শুধুমাত্র রাতের আকাশেই প্রতীয়মান হয়।
মা, বাবা, ভাই, বোন কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসাই স্বার্থের উপস্থিতি অবশ্যই বিদ্যমান। প্রতিটি ভালোবাসার পিছনে মনের চাহিদা পূরণের স্বার্থের সার্থকতা বিদ্যমান রয়েছে। তুমি নিশ্চয়ই এমন কাউকে ভালোবাসবে না , যাকে তুমি সহ্য করতে পারো না। আবার এমনও হতে পারে তোমার ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে তোমার আশা আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ হচ্ছে না,তাই আস্তে আস্তে তার প্রতি তোমার ভালোবাসা আবেগগুলো কমতে শুরু করেছে। মাতা সন্তান এর ভিতরেও স্বার্থ বিদ্যমান রয়েছে। মাতা এবং তার সন্তানের ভেতর ভরসা এবং চূড়ান্ত আস্থার স্বার্থ বিদ্যমান।
স্রষ্টার করুণা লাভের স্বার্থে- স্রষ্টার সৃষ্টির পিছনে নিজের স্বেচ্ছাশ্রম নিবেদন করো। স্রষ্টা তোমার কাজে প্রসন্ন হয়ে তোমার জীবন পথ সুগম করে।
মানুষে মানুষে বিবেধ তৈরি করার স্বার্থে কেউ কেউ ধর্মকে ব্যবহার করি, আবার সেই ধর্মেরই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করতে গেলে অনীহা প্রকাশ করি।
আবার কেউ কেউ নিজের জীবনকে আলোর পথে পরিচালনার স্বার্থে ধর্মের আদর্শে নিজের জীবন সার্থক করে তোলে। সত্যের সন্ধান পেতে চায়। সত্যের পথ অনুসন্ধান তাঁদের জীবনের প্রধান স্বার্থ হয়ে ওঠে। এই স্বার্থের পূর্ণতায় তাদের সার্থকতা পর্যবসিত হয়।
স্বার্থ মূলত আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। সবাই সবার জন্য, অন্যের কল্যাণের জন্য এই আত্মকেন্দ্রিকতা ঘোচাতে পারলেই সমাজ জীবন আরো সুন্দর হয়ে উঠতে পারে।
জীবন কখনো কারো জন্যে থেমে থাকে না। মনের ভিতর তবুও যে কষ্টগুলো অনুভব করা হয়, সেগুলো হারানো স্মৃতির ব্যথা। ব্যথাগুলো নিজের স্বার্থের কাছে এতটাই করুনভাবে পরাজিত হয় যে, মাঝে মাঝে সে ব্যথা মৃত্যু যন্ত্রণার কাছেও হার মানতে বাধ্য হয়। স্বার্থ এবং সার্থকতা দুটোই এখন সারিতে অবস্থান করলেও এদের ভিতর কিছু পার্থক্য রয়েছে।
স্বার্থ মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে তুললেও, সার্থকতা মানুষকে সকলের কল্যাণে আহ্বান করে। কারণ জীবনের সার্থকতা মহৎ এর মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সন্ধান মিলবে। নিজের স্বার্থ পূরণ হওয়ার পর সকল কিছুর কাছে কৃতজ্ঞতা স্যার এর মাধ্যমেই সার্থকতা বিরাজ করবে।
আত্মকেন্দ্রিক এবং সার্থসন্ধানী প্রাণীদের মধ্যে গণনা করলে মানুষ সবার উপরে থাকে। কারন মানুষ এমন একটি প্রাণী যারা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য জগতের কোন কাজ করতে দ্বিধা করে না। মানুষের জীবন অনেক বৈচিত্র্যময়।
পৃথিবীতে অন্যান্য জীবরা যখন বেঁচে থাকার জন্য নিজের প্রয়োজনীয় বস্তুুটুকু পেলেই স্রষ্টার নিকট সন্তুষ্ট থাকে সেখানে মানুষ তাদের নিজেদের মধ্যে লোক দেখানো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে। ঐশ্বর্যের সন্ধানের চাইতে শান্তির সন্ধান জীবনকে বেশি উপভোগ্য করে তুলতে পারে। প্রকৃত শান্তির সন্ধানে নিজের স্বার্থকে বিলিয়ে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের পরিচয়।
আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা তাদের জীবনের পুরো সময়টাই নিজের ঐশর্য, প্রতিপত্তির সন্ধানে ব্যয় করেছে। কিন্তু যখন তার কষ্টার্জিত এই সম্পদগুলো ভোগ করার সময় হয়েছে তখন তার জীবন ঘড়ির সময় ফুরিয়ে এসেছে। তার জীবনটা শুধু সম্পদের দাসত্ব করেই অতিবাহিত হয়ে গেছে। এমন জীবন কারোরই কাম্য নয়, তা জেনেও আমরা সম্পদের হ্যালুসিনেশনের পিছনেই ছুটছি। কারন আমরা মানুষ। এখন আমাদের স্বভাবটাই এমন হয়ে গিয়েছে।
পৃথিবীতে স্বার্থ না থাকলে কোন কাজই সম্ভব হয়ে উঠতো না। নিজের জীবনকে পরিপূর্ণ করতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন স্বার্থের সম্মুখীন হই। সার্থ তখনই সার্থকতা লাভ করবে যখন আমাদের সমাজ থেকে আত্মকেন্দ্রিকতা শব্দটি বিলীন হয়ে যাবে।
মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের মাধ্যমে জীবন সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। কেবল স্রষ্টার সৃষ্টির সেবায় নিজেকে নিবেদন করে প্রকৃত সুখের সন্ধান মিলতে পারে। নিজের স্বার্থকে বড় করে না দেখে অন্যের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব-বন্ধন তৈরি হবে।
পৃথিবীতে নিঃস্বার্থ শব্দটার কোন অস্তিত্ব আছে কি নেই তা নিয়ে আমি বড় সন্দিহান। কিন্তু সৃষ্টি ও স্রষ্টার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে স্বার্থ শব্দটি হয়ে উঠতে পারে নিঃস্বার্থ সার্থকতা।

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট