হাসপাতাল রহস্য (ধারাবাহিক).................................সাজিয়া শাহরীন বিনতে শাব্বির মৌন

 - তারমানে আপনি বলছেন যে ঐ হাসপাতালে যেই ভর্তি হয় সেই সুইসাইড করে? প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর জনাব আবির চৌধুরীকে প্রশ্ন করলেন ডেমরামারা থানার ওসি মি. বসু।

- হ্যাঁ, ওখানে যেই ভর্তি হয়, সে-ই অজানা কারণে সুইসাইড করে। আর এটা বেশ কয়েক মাস ধরেই চলে আসছে।

- এটা কিভাবে সম্ভব? আর আপনি কীভাবে এত কিছু জানলেন? আবার সেই শখের গোয়েন্দাগিরি ! বলে একচোট হাসলেন মি. বসু।
- ঘটনাচক্রে একটা কেস আমি পেয়েছি। তাই ভাবলাম একবার আপনার সাথে কথা বলে যাই। কিন্তু এতগুলো সুইসাইড হয়েছে ওখানে আপনার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি? আই মিন ভিক্টিমের পরিবার?
- না, আমার কাছে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। তবে আমিও শুনেছি এমন ২/৩ টা সুইসাইড নাকি হয়েছে। তবে কি বলেন তো, কেউ যদি অভিযোগ দায়ের না করে আমি তো সেই হাসপাতালে গিয়ে সার্চ করতে পারি না।
- মি. বসু, আপনার একবার সেখানে যাওয়া উচিত। কী এমন কারণ থাকতে পারে যে, যে-ই ভর্তি হচ্ছে সেই সুইসাইডাল হচ্ছে?
- দেখেন, শখের বশে কাজ করাটা আপনাদের পেশা, আমাদের নয়। আমাদের আরো অনেক কাজ থাকে। তবুও আপনি যখন বলছেন আমি একবার যাবো।
- ঠিক আছে, তাহলে আজ উঠি। বলে আবির থানা থেকে বের হয়ে যায় ।

সেন্ট্রাল হাসপাতালে একটা গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। ঐ হাসপাতালে যে ভর্তি হয়, সে-ই কোনো একটা অজ্ঞাত কারণে সুইসাইড করে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো কোনো পরিবারই থানায় হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি। কিন্তু কেনো? কি রহস্য লুকিয়ে আছে ঐ হাসপাতালে? না, জানতে হবে এর পেছনে কী রহস্য আছে! আবির ভাবতে ভাবতে রাস্তা পার হচ্ছিল।
আচমকা ওর সামনে দিয়ে সাঁই করে একটা গাড়ি ক্রস করেই হার্ড ব্রেক কষলো। দেখে চলতে পারেন না? চোখ কি আকাশে তুলে হাঁটেন? গাড়ির ভেতর থেকে আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলেন এক তরুণী।
- আই অ্যাম স্যরি ম্যাম, আমি আসলে খেয়াল করিনি। আমার আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো।
- তো কোথায় যাবেন বলেন। নামিয়ে দিয়ে আসি। নাহলে না জানি আবার কোন গাড়ির তলায় পড়বেন। বলে হাসলো মেয়েটি।
- না, না । অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আমি সামনেই যাবো। কিন্তু এবার আর গাড়ির তলায় পড়বো না।
- ঠিক আছে, উঠুন আপনি। আমি নামিয়ে দেই।
- না ঠিক আছে। তার কোনো দরকার নেই। আমি চলে যেতে পারবো।
- আমি জানি, আপনি যেতে পারবেন। কিন্তু আমি আপনাকে নামিয়ে দিতে চাচ্ছি। না করবেন না প্লিজ । আমি কারো না শুনতে পারি না।
- আচ্ছা ঠিক আছে। সামনেই নেমে যাবো। গাড়িতে উঠে বসে আবির। দুইজনই চুপ করে আছে। নীরবতা ভেঙে মেয়েটিই প্রশ্ন করলো আবিরকে, আপনার নাম কি?
- আবির, আপনি?
- সেঁজুতি। নাইস টু মিট ইউ, বলে হাত বাড়িয়ে দিলো মেয়েটি আবিরের দিকে। করমর্দন শেষে মেয়েটি বললো, আপনি কি করেন? মানে কোনো জব নাকি ব্যবসা?
মেয়েটাকে কি আমার আসল পরিচয় দেয়া ঠিক হবে? অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে শেষে বলে, আমি একজন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর।
- ওয়াও!! আপনি কি প্রফেশনাল?
- হুঁম, বলতে পারেন। ভাই, এখানে সাইড করেন। ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বললো আবির। আসছি। থ্যাংকস লিফ্টের জন্য।
- আরে কোনো ব্যাপার না। আপনাকে সাহায্য করে আমার ভালো লেগেছে।
- আচ্ছা আসছি। আবির মেয়েটির থেকে বিদায় নিয়ে হাসপাতালের দিকে এগোলো। ইচ্ছে করেই একটু আগে নেমে গেছে আবির। কোনো ব্যাপারেই রিস্ক নেয়া উচিত না। ও যে গোয়েন্দা এটা এখন কারো জানার দরকার নেই।
হাসপাতালটা বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে বেশিদিন হয়নি নির্মানের। দেখা যাক ভেতরে কি অবস্থা। আবির হাসপাতালের ভেতর ঢুকলো।
ভেতরটা দেখে বোঝার উপায়ই নেই যে একের পর এক সুইসাইডাল কেস এখানে ঘটে যাচ্ছে। এখনই কাউকে বলা যাবে না কেসের ব্যাপারে। কিন্তু কি বলে যে শুরু করবে বুঝে উঠতে পারছে না আবির। সামনে একটা নার্সকে দেখতে পেলো। তার কাছে এগিয়ে গেলো।
- এক্সকিউজ মি, আমি মিতালি জাহানের বাড়ির লোক।
- কোন মিতালি?
- যে মিতালি আত্মহত্যা করেছে।
- সে তো কত মিতালিই আত্মহত্যা করে। সবার নাম কি মনে থাকে বলেন। বলেই চমকে উঠলো নার্স। বেশ কয়েকবার ঢোকও গিললো। ব্যাপারটা নজর এড়ালো না আবিরের। বুঝতে পারলো অনেক কিছু লুকিয়ে আছে এই হাসপাতালে।
- কি বললেন? অনেক মিতালি আত্মহত্যা করে মানে?
- না, মানে। বলে আবারো ঢোক গিলে নার্স। মানে, বলছিলাম কি যে আমাদের কাছে তো এমন কেস অনেক আসে। সবাইকে তো মনে রাখা যায় না, তাই না? বলে কপালের ঘাম মোছে নার্সটি।
- হ্যাঁ, সেটা ঠিকই বলেছেন। কয়জনকেই বা মনে রাখবেন। আচ্ছা যা বলছিলাম, মিতালির মা আমাকে বলেছেন যে, হাসপাতালে সে যে কেবিনটায় ছিলো সেখানে তার কয়েকটা জিনিস আছে। তো আমি ওগুলো নিতে এসেছি।
- না, না। এখন কোনো রুমে যাওয়া যাবে না। আর তাছাড়া বডি সরানোর পর রুম ভালোভাবে ক্লিন করা হয়। তাই কোনো জিনিস যদি থেকেও থাকে এখন আর পাবেন না।
- না, আমাকে রুমটা একবার দেখতেই হবে। কী আছে ঐ রুমে? মনে মনে ভাবে আবির।
- দেখুন, আমি জানি হয়তোবা কিছুই পাবো না। কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে কিছু খুঁজেও পেলাম । প্লিজ, আমাকে নিয়ে যাবেন একটু?
- আচ্ছা, দাঁড়ান এখানে। দেখছি।
নার্সটাকে ভালোভাবে লক্ষ্য করছে আবির। নার্সটার মধ্যেও মনে হচ্ছে সমস্যা আছে। তাকে চোখে চোখে রাখতে হবে। নার্সটা গিয়ে কার সাথে যেনো ফোনে কথা বললো। এদিকে আবির এমন একটা ভাব করে আছে যাতে কেউ তাকে দেখে বুঝতে না পারে সে কে। সবই ঠিক আছে, তাও কি যেনো ঠিক নেই। ঠিক ধরতে পারছে না আবির। হঠাৎই পেছন থেকে কেউ ওকে ডেকে উঠলো। সে ফিরে তাকাতেই ……

(চলবে)

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট
Nazmul Hasan
October 2, 2020 at 6:15 PM

আপু একখন্ড লিখে এত দেরী করছেন কেন? আমরা প্রথম খন্ড শেষ করেছি বেশ কিছুদিন হল, অরও দেরী হলে প্রথম পর্ব খেয়াল থাকবেনা,তাড়াতাড়ি দ্বিতিয় পর্ব দিন

Reply
avatar
October 22, 2020 at 8:18 PM

খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবেন । দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত।

Reply
avatar