মানুষ শব্দটি আমরা যদি বলতে চেষ্টা করি তাহলে সবার আগে একটি শব্দই আসবে মা তারপরে নুষ। মা শব্দটি ব্যতীত যেমনভাবে মানুষ শব্দটির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। তেমনভাবেই প্রার্থীব জগতেও মায়ের অস্তিত্ববাদে সন্তান তার নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে কেবলই এক রিক্তহস্ত কাঙালি বলেই প্রতীয়মান হয়ে পড়বে।
মহাকাশের বিশালতা যেমনিভাবে মানুষের কাছে কল্পনাতীত, তেমনি ভাবে মায়ের ভালোবাসা, মহত্ব সাধারণ মানুষ তার ক্ষুদ্র বিচার-বুদ্ধি দারা সম্পূর্ণ অনুধাবন করা অসম্ভব। সে জ্ঞান অনুধাবনের ক্ষেত্রে আমি কেবলি একটি পদ্ম পাতার উপরে এক বিন্দু শিশির কণার সরুপ।
এই পৃথিবীতে যদি কোন মানুষের মনের কঠোরতার পরীক্ষা নেয়া হতো, তাহলে সেই পরীক্ষায় মা জাতী বিনা দ্বিধায় জয়লাভ করতে পরবে। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে একজন মায়ের কাছ থেকে শিখতে পারা যায় নিজের আত্মত্যাগের সদৃশ্য। বাবা-মায়ের সুখের কথা চিন্তা করে নিজের অস্তিত্ব, নিজের ভয় কে পিছনে ফেলে চলে যেতে হয় অচেনা এক ঠিকানায় চিরতরে। কাছের মানুষগুলোর কাছ থেকে চিরতরে পর হয়ে স্বামীর সংসারের প্রতিটি মানুষের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার নতুন যুদ্ধে নিজেকে সমর্পণ করতে হয়। বিয়ের পর তার নতুন জগৎ, নতুন পরিজনকে আপন করে নেওয়ার কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে জীবন তরী পরিচালিত হয়। যে জননী নতুন এই জীবন যুদ্ধে নিজের সর্বস্ব অকাতরে বিলিন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে হার মনতে বাধ্য হয় , সেইতো শিকার হয় স্বামীর কঠোর অত্যাচার ও মানসিক পীড়নে, হতে হয় শাশুড়ির চোখের বালি আর বাড়ির একমাত্র আদরের ননদের পরনিন্দা করার উপকরণ। আর যে মাতা তার নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত এ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাই কেবল সেই হয়ে ওঠে আমাদের সমাজের কথিত আদর্শ গৃহিণী। যার নিজের কোনো ভালো লাগা নেই, নিজের কোনো ইচ্ছা নেই। শুধুমাত্র পরিবারের সুখের জন্য নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করা দাসি সদৃশ্য কথিত গৃহিণী মাত্র।
শত ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য পেরিয়ে একদিন সেই নারী তার শরীরে সন্তান ধারণ করে। প্রতিটি মায়ের কাছে তার সন্তান শুপ্ত সত্য সপ্নের মতো বিরাজ করে। দিনের পর দিন একটি স্বপ্ন দেখেয় নিজের সন্তানকে স্নাহাডোরে তিল তিল করে বড় করে তোলে,সন্তান একদিন মানুষের মত মানুষ হয়ে তার ক্লান্ত জীবনের শেষ সম্বলটুকু হবে এই আশাই। সন্তান ও পরিবারের সুখের চিন্তা করে নিজের সর্বস্ব আত্মত্যাগের মাধ্যমে একজন মাতা হয়ে ওঠে মমতাময়ী মহীয়সী। একজন নারীর ভিতর কেবল মাত্র মায়া মমত্ব বিরজ করলেই একজন মাতার মহিমার সমকক্ষ হতে পারে।
পৃথিবীতে সেই জাতির সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যে জাতি নিজের মা কে সম্মান দিতে জানে না। যে সন্তান তার পরিবারের সদস্যদের কুটিলতার কথা শুনে নিজের জন্মদাত্রী মাকে নিজের বাড়িতে রাখতে পারে না অথচ দশ মাস দশ দিন অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেও মাতা তাকে পরম যত্নে আগলে রেখেছিল, তার চেয়ে বড় হতভাগ্য এবং নিকৃষ্ট মানুষ দুনিয়াতে আর হয় না। যে ব্যক্তির নিজের মায়ের সম্মান যথাযথ দিতে পারে না, সে ব্যক্তি দেশমাতার ক্ষতিসাধন করতে সামান্য পরিমাণ দ্বিধাবোধ করবে না। তার মানসিকতা পশুর থেকেও নিকৃষ্ট পরিগণিত হবে। নারী জাতিকে সম্মান করা ব্যতীত সমাজের প্রকৃত সুখ শান্তি মরীচিকার মত প্রতীয়মান হবে। সেই জাতি পিছিয়ে পরে,যে জাতি নারী জাতিকে সম্মান দিতে জানে না। সন্তান মাতার প্রতি বর্বরতা দেখাতে পারলেও, মাতা কখনো তার সন্তানের প্রতি নিষ্ঠুর হতে পারে না।
কেবল মাতৃত্ব থেকে একজন নারী তখনই সরে আসে যখন তার সাধারন মমতাময়ী স্বভাবের পরিবর্তন ঘটে। নারিতো কেবল তার মমতাময়ী স্বভাবের জন্য সমাজের সকলের কাছে মহীয়সী। সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে যদি সেই নারী তার সকল মায়া মমতা বোধ বিসর্জন দিয়ে নিকৃষ্টতাই পর্যবসিত হয়, তাহলে তার থেকে কষ্টকর -সমাজের কাছে আর কিছু হতে পারে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন ঘটেছে। নারী তার অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে তার প্রকৃত স্বভাব থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে। শালীনতা, মমতাময়ী, মহীয়সী মাতার পরিচয় বহন করে। কিন্তু বর্তমানে সমাজের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে নারীরা তাদের শালীনতা আধুনিকতার কাছে বিসর্জন দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে দিনের পর দিন নিজের সম্মান বিসর্জন দিয়ে চলেছে।
নারী আমার মায়ের জাতি । তার যেমন চাওয়া থাকে সমাজে সর্বোচ্চ সম্মান নিয়ে নিজের জীবনটাকে রঙীন করতে। তার থেকেও বেশি চাওয়া থাকে সমাজের অন্যদের যেনো মায়ের জাতির সমতুল্য সম্মানের বাতায়ন থেকে সে নারীর মমতাময়ী সভাবের এমন কোন পরিবর্তন না হয় যেনো সেই নারীকে নিকৃষ্ট পশুর সমতুল্য মনে করতে হয়।
নারী তুমি আমার দেশ মাতার মমতা লালন করো নিজের ভিতর । তবেই তুমি হবে মমতাময়ী মহীয়সী।
বেশ ভাল লিখেছেন ভাই
Reply