পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নাই যে জীবনে বন্ধু শব্দটির সাথে পরিচিত হয়নি। জগতের সব থেকে সুন্দর,মধুরতম, গভীর এবং আত্মীক সম্পর্ক বলে যদি থাকে সেটা বন্ধুত্ব। বন্ধু শব্দটায় ই কেমন প্রাণ জুড়িয়ে আসে, ভেঙ্গেচূড়ে খুচরো পয়সার মত নিজেকে জমা রাখা যায় তো বন্ধুর কাছেই। তীরবিদ্ধ হওয়ার দিনে যে ঢাল হয়ে যায় সামনে সে একজন সত্যিকার বন্ধু, রক্তাক্ত হওয়ার দিনে যে মলম লাগিয়ে দেয় ক্ষতস্থানে সেই একজন বন্ধু। জগতে মানুষ যত দ্রুতই স্বার্থপর হয়ে উঠুক না কেন একজন সত্যিকার বন্ধু বোধকরি ততটাই আপন হতে থাকে। পুঁচকি মেয়েটাকে সেই একযুগ আগে স্কুলের মাঠে গোল্লাছুটের সার্কেলে পেয়েছিলাম, কাঁধের উপর বেণুনি নাচিয়ে ভোঁ দৌড়ে যেতেই হিঁচকে টেনে ফেলে দিয়েছিল যে মেয়েটি সেই মেয়েটির সাথে কোমড় বেঁধে ঝগড়ায় নেমেছিলাম, ওর চোখ দিয়ে তখন জলের ফোয়ারা নেমে কপোল ভিজিয়ে মুখ ফুলিয়ে দিয়েছিল, তখন শক্ত করে হাত মুঠোয় বন্দি করে খেলার মাঠ ছেড়েছিলাম।সেই মুঠোয়বন্দী শক্ত হাতদুটি অবিকল তেমন ই আছে। সময়ের পরিক্রমায় কত বন্ধু এসে গেছে, স্বার্থের খেলায় জিতে গেছে, পাটকেল ও ফিরিয়ে দিয়েছে প্রতিদানে কিন্তু এই একজোড়া হাত শত হার-জিতের, মান-অভিমানের,দুঃখ-সুখের, উল্লাস-বিপত্তিতেও ফারাক হয়নি। শৈশবের বন্ধুটি হারিয়ে যায় কৈশোরে,কৈশোরের বন্ধুটি হারিয়ে যায় যৌবনে,কিংবা কখনো যৌবনের বন্ধুটি হারিয়ে যায় বৃদ্ধকালে। কিন্তু এমন ও হয় শৈশবের বন্ধুটি কৈশোরে,যৌবনে এবং বৃদ্ধকালের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানোর দিনেও থাকে এমন বন্ধুত্ব ঠিক কতটাই না অমর হয়? স্কুলের বেঞ্চিতে যার পাশে বসতে না পারলে স্যারের লেকচারে মন দিতে পারতাম না, একদিন ক্লাসে যে কোন একজন উপস্থিত না হলে মন ভেঙ্গে আসতো সেই বন্ধুটিকেই ভালবাসি আমি, ক্লাসের নোটখাতা যার ব্যাগে তুলে দিতাম তার সাথে আমার নিঃস্বার্থ ভালবাসা। কৈশোরের নানানরকম ভুলের দিনে যে দুজন দুজনের দিকে নজর রাখতাম সেই আমার এই বন্ধুটি। যার সাথে থাকলে ভরসা পায় পরিবার, চোখবুঝে বলতে পারে 'ওর সাথে আছে ও' সেই আমার বিশ্বস্ত বন্ধু। অজস্র দিনে বলা হয়না কখনো ভালবাসি বন্ধু তোকে, যে বন্ধুর ভালবাসা পাওয়ার জন্যে প্রেমিকের মত হাহাকার জমাতে হয়না তার মত আপন জগতে কেই বা আছে! মা-বাবার পরে যদি কাউকে জায়গা দিতে বলা হয় এই মানুষটিকেই দিব আমি। উচ্চশিক্ষার জন্যে যখন মা-বাবার কোল ছাড়ি তখন এই একজোড়া হাত ই ছিল সবসময়ের জন্যে, মা-বাবাও নিশ্চিন্তে থাকে ওরা দুজন একসাথে আছে! শহরের ইট-পাথর-কংক্রিটের রাস্তায় অজস্রবার হোঁচট খেয়ে দিনশেষে গল্প জোড়া হয় এই মানুষটির সাথেই। অজস্রবার ভেঙ্গে পড়ার দিনে এই মানুষটির কাঁধে মাথা রেখেই আমি সাহস নিতে পারি। সবাই যখন ফিরিয়ে দেয় এই বন্ধুটির কাছে গিয়ে বলি তুই তো আছিস!
কোন এক হিম-শীতল দিনে, কুয়াশার চাদরে যখন আকাশের একপ্রান্ত ঢাকা, প্রকৃতি সকল দহন, বর্ষা আর নীল ঝরিয়ে ক্লান্ত ঠিক তখন শীতের জমে যাওয়া দিনে সমস্ত দাবানল,রোদ বরফের ঠিক এমন দিনে এই পৃথিবীতে তোর আগমন! সকল কুয়াশা ভেদ করে প্রভাতের কিরণ উঁকি দিয়েছিল খুশিতে তোদের জানালায়। জীবনে যতই খরতা,দাবানল, বর্ষা আসুক যাক তুই থাকবি কোমল, উষ্ম রোদের মত। সেদিনের কান্নার আওয়াজ ধ্বনিতে উল্লাসে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছিল আপনজনেরা, হাঁটিহাঁটি পা পা করে যতই বড় হওয়া শুরু প্রতিবছর জন্মদিনে কত আনন্দ!
এই জন্মবার্ষিকীতে ঘুম নেই আপনজনদের চোখে, হাসপাতালের এ মোড়ক থেকে অন্য মোড়কে ছুটে বেড়াচ্ছে! আমার কলিজায় ও ভেদ হয় তোর বিনিদ্র-মৃত্যু যন্ত্রণার কষ্টের ভাগীদার না হতে পেরে। একাকাশ, একসমুদ্র আর এক পৃথিবী সমান ভালবাসা উজাড় করে দিলে তুই সুস্থ হবি তো? আমার সমস্ত যাচনা, সমস্ত প্রার্থনা, সমস্ত ত্যাগ, সমস্ত ভালবাসা তোর নামে উজাড় করে দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালাম। এই বদ্ধদিন একদিন শেষ হয়ে যাবে প্রিয়, এই একলা থাকার দিন, এই যন্ত্রণা, ক্রন্দনের দিন, এই শ্বাসকষ্টে আটকে থাকা দিন তারপর আমরা আর কোনদিন আটকে থাকবোনা, গাঙচিলের বেশে উড়ে বেড়াবো মুক্ত-আকাশে। আমাদের প্রতিবন্ধকতার দিন সামলে নিব সুনিপুণভাবে! বন্ধু তুই ছিলি, তুই আছিস, তুই থাকবি সমস্ত জায়গা জুড়ে, সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে, সমস্ত মায়া জুড়ে আর যোজন যোজন মুহুর্ত জুড়ে থাকবে আমাদের অমর-বন্ধুত্ব!
' একচিলতে মিষ্টি উষ্ম রোদের কিরণ ছড়িয়ে থাকুক জীবন জুড়ে'!!
অসাধারণ ❤️❤️
Replyদারুন দারুন
Reply