দেবী..................তুহিন রহমান

(প্রচ্ছদের ছবিতে মডেল হয়েছেন কোলকাতার ভ্রমন লেখিকা সেমন্তী ঘোষ)

 
এক
দীর্ঘ সময় নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিল সুশীল, তারপর তাকালো জাহিদের দিকে।‘আমার মনে হয় তুই ঠিক ব্যপারটা বিশ্বাস করতে পারিসনি। এটা জাস্ট ম্যাগাজিন এর কোন পপ আর্টিকেল নয় যে ওরা পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর জন্যই লিখেছে।’
‘তাহলে তুই কি মনে করিস ব্যপারটা ঠিক?’ সুশীলের দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো জাহিদ।
‘আমার বিশ্বাসে কিছুই যায় আসেনা।যে লিখেছে সেই লেখককে আমি বিশ্বাস করি কারন উনি আমার পরিচিত।উনি এমন কিছু লিখবেন না যা কেবলই ফিকশন, আমি মনে করি অবশ্যই এর পেছনে কোন সত্য আছে।’
জাহিদ পত্রিকাটার পৃষ্ঠা ওল্টালো। সাপ্তাহিক ঘটনাক্রম। বাপের জন্মে পত্রিকার নামটাও শোনেনি ও। এমন পত্রিকা মনে হয়না এক হাজার কপি বিক্রি হয়।সুশীলের ধারনা এই পত্রিকার লেখক যা লিখেছে তা একেবারে সত্যি।অবশ্য এর পেছনে সুশীলের ধর্ম বিশ্বাসও কাজ করেছে।কোন মানুষ এতোদিন বাঁচে এটা একেবারে অবিশ্বাস্য।হতে পারে লেখক গাঁজায় দম দিয়ে লিখেছে বা কোন ভারতীয় পত্রিকার নকল।হঠাৎ মুখ তুললো জাহিদ,‘আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়?’
‘বল?’
‘আমরা লেখকের সাথে দেখা করি।’
‘কে, মানবদরদী?’
‘এটা কি ওর আসল নাম?’
‘এই নামেই সে অনেক পরিচিত।আমি তাকে চিনি এই নামে। ডাকি দরদী ভাই নামে।’সুশীল বললো,‘তবে তার আসলে নাম কি তা জিজ্ঞেস করিনি কোনদিন।’
‘চল কালই দেখা করি।তাহলে বোঝা যাবে ঠিক নাকি বেঠিক।কাল তো শুক্রবার।ছুটির দিন।বাড়িতে থাকবে আশাকরি।’
সুশীল একটু চিন্তা করে বললো,‘ঠিক আছে, তার তো কোন ফোন নাম্বার আমার কাছে নেই।সরাসরি যেতে হবে তার ডেরায়।ভাগ্য ভাল থাকলে তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে।আর না থাকলে ফিরে আসতে হবে।’
‘আমার কোন সমস্যা নেই।’জাহিদ বললো,‘এমন এক গল্প শোনালি যে আমার আর উপায় নেই তার সাথে দেখা না করে।কথায় বলেনা কুকুর মরে কৌতুহলে!’
দু’জন হেসে উঠলো হাঃ হাঃ করে।
----------------------------------------++++-----------------------------------------
সত্যিই বলেছিল জাহিদ। কুকুর মরে কৌতুহলে।এটা বোঝা গেল যখন ওরা মিরপুরে পৌছালো। এমন এক জায়গা যেখানে কাদা ভেঙে যাওয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই।ক’দিন আগে বৃষ্টি হয়েছিল, মানুষ চলাচল করতে করতে এখন পাঁকের রূপ নিয়েছে।যেতে যদি হয় তবে জুতো মাথায় তুলে যেতে হবে।আশেপাশে গাছপালাও প্রচুর।মশার আড়তখানা।জাহিদ জিজ্ঞেস করে,‘তুই তো নিশ্চিত এখানে পাওয়া যাবে তাকে?কারন এই কাদা মাড়িয়ে তার বাড়িতে গিয়ে যদি তাকে পাওয়া না যায় তবে এই পা নিয়ে আর ফিরতি পথে আসতে পারবো না।’
সুশীল বলে,‘তুই আল্লাহর নাম নে আর আমি ভগবানের নাম নিই, এছাড়া আর কোন পথ নেই আমার।’
দু’জন স্রষ্ঠার নাম জপতে জপতে কাদার ভেতর নেমে পড়ে। যতোটা ভেবেছিল তেমন পাঁক নয়।পা বড়োজোর গাঁট পর্যন্ত দেবে যাচ্ছে।তবে বেশী খারাপ কাদার দুর্গন্ধটা।মনে হচ্ছে একেবারে পেট পর্যন্ত ঢুকে যাচ্ছে।স্রষ্ঠার নাম নিয়ে ভালোই করেছিল ওরা।বাড়িতেই পাওয়া গেল মানবদরদীকে।একেবারে বুড়ো লোক।খেতে পরতে পায়না বলেই মনে হয়।জীর্নশীর্ন চেহারা।যে শার্টটা গায়ে দিয়েছে সেটা গা থেকে নেমে যেতে চাইছে।এইমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে তার ছাপ স্পষ্ট তার চোখে মুখে।খুব বেশী সিগারেট খাওয়ায় কালো হয়ে গেছে তার ঠোঁট তবে দাঁতগুলো সাদা, পান খায়না সে বোঝা যায়।সুশীলকে দেখে মনে হয় হয় খুশী হলো।হাতের ইশারায় কাছে ডাকলো।সুশীল বললো,‘দাদা,আপনার সাথে কথা আছে,সময় নিয়ে বলতে হবে।কোথাও বসা যাবে?’
‘হ্যাঁ বসা যাবে মানে, থাকতে চাইলেও দেয়া যাবে।’ মানবদরদী বললো।‘এসো এসো বাড়ির ভেতর এসো।’
সুশীল হেসে বললো,‘তার আগে পা ধুতে হবে দাদা।’
বাড়ির বাইরেটা দেখে দু’জন ভেবে বসেছিল লোকটা অর্ধমৃত।খেতে পরতে পায়না, কোনমতে লেখালিখি করে সংসার চালায়।তাদের ভুল ভাংলো ঘরের ভেতর ঢুকে।আরে!এই লোকতো রীতিমতো ধনী লোক! কি জৌলুস বাড়ির!ড্রইংরূমটাকে বলা যায় রাজকীয়।একা থাকে, সম্ভবত বিয়ে টিয়ে কিছু করেনি।করলেও তার পরিবার এখানে থাকেনা।এই বয়সী একজন মানুষ যদি বিয়ে করে থাকে তবে তার নাতিপুতীর ভারে বাড়িঘর গমগম করার কথা।তা করছেনা, বরং পুরো বাড়ি শান্ত, বলা যায় গোটা বাড়িতে পিন ড্রপ সাইলেন্স।
মানবদরদী ইশারা করলো বসতে।দু’জন দামী সোফার দু’প্রান্তে বসলো।মানবদরদী জোর গলায় ডাকলো,‘রাজু?’
বাড়ির ভেতর থেকে কাজের একটা লোক ছুটে এলো।এই লোকটাও বুড়ো মতো তবে জীর্ন হাতের পেশীবাহুল্য দেখে বোঝা যায় অনেক কাজে সে পটু।মানবদরদী তার দিতে না তাকিয়েই বললো,‘রাজু, ভাইয়েরা এসেছে, কেক, পরোঠা আর ডিমপোচের ব্যবস্থা কর।আর হ্যাঁ, লাল চা দিবি, সুশীল আবার লাল চা ছাড়া খায়না।আশাকরি তার বন্ধুও তার মতো হবে।’
সুশীল অবাক হয়ে বললো,‘দাদা কিকরে বুঝলেন আমি লাল চা ছাড়া খাইনা?’
মানবদরদী হেসে বললো,‘আমি আমার মাথাটাকে তথ্যকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করি।কারো সাথে মিশলে তার সব তথ্য আমি এই মাথার ভেতর ভরে রেখে দেই যাতে ভবিষ্যতে তার সাথে আবার দেখা হলে নতুন করে তার কাছে জিজ্ঞেস করে কিছু জানতে না হয়।’
‘জাস্ট ওয়াও!’ সুশীল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মানবদরদীর দিকে।‘আমার সাথে আপনার বোধহয় বছর দুয়েক আগে একবার দেখা হয়েছিল।আপনি সেই তথ্যও আপনার ব্রেনে ভরে রেখে দিয়েছেন? শুনেছি লেখকরা মাথায় কিছু রাখতে পারেনা, একটু উদাসিন স্বভাবের হয়।আপনি তো উল্টো!’
‘হ্যাঁ, তা হয় বৈকি,’মানবদরদী বললো।‘তবে আমার ব্যপারটা ভিন্ন।আমাকে শুধু এই ঘটনা নয়, অনেক ঘটনাই ব্রেনের ভেতর রেখে দিতে হয়েছে।এবং প্রয়োজনে এসব তথ্য আমাকে ব্যবহারও করতে হয়েছে নিজের স্বার্থে।আচ্ছা এবার বলো কি এমন গুরুত্বপূর্ন কথা যার জন্য এতো সকাল সকাল এই কাদা মাড়িয়ে আমার বাড়িতে আগমন।’
‘তবে তার আগে আপনার নাম নিয়ে কিছু জিজ্ঞাস্য ছিল।’ সুশীল বললো,‘আপনার আসল নামটা যদি বলতেন তবে কষ্ট করে এমন দাঁত ভাঙা নামে ডাকতে হতোনা। তাছাড়া নাম দিয়ে অনেক কিছুই আমরা বুঝি যেমন সে কোন ধর্মের মানুষ, কোন স্বভাবের মানুষ ইত্যাদি।আপনার মানবদরদী নামটা একটা ছদ্মনাম।আশাকরি আমাদের কাছে আপনার আসল নামটা বলবেন।’
মানবদরদী হেসে বললো,‘তুমি আর আমি একই লাইনের লোক তাই এই নামে চেন। আমার এলাকার সবাই আমাকে চেনে হীরাভাই নামে।যারা আমার লেখা পড়ে তারা মানবদরদী নামে চেনে।আমি এই দুটো শ্রেনীকে ভাগ করে রেখেছি।তুমি তোমার জানা নাম দিয়ে আমার এলাকায় আমাকে খুঁজে বের করতে পারবেনা।এটাই হলো আমার নামের মাহাত্ম।’ 
হীরাভাই হাঃ হাঃ করে হাসলেন।তার হাসিতে যোগ দিল সুশীল আর জাহিদ।হাসি থামলে হীরাভাই বললেন,‘এবার বলো কি জানতে চাও।’
রাজু নামের বুড়োটা খাবারের ট্রে নিয়ে এলো, আবার আসল কথায় বিঘ্ন ঘটলো। হীরাভাই বললো,‘এসো খেতে খেতে কথা বলি।’
সুশীল একটা কামড় দিল কেকে।তারপর তাকালো হীরাভাইয়ের দিকে।‘গতকাল আমি সাপ্তাহিক ঘটনাক্রমে আপনার লেখা অমর রত্ন লেখাটা পড়ছিলাম….।’
হীরাভাই মাঝপথে হাত তুললো, বুঝে ফেলেছে সুশীল কি বলতে চায়।চায়ের কাপে দীর্ঘ একটা চুমুক দিয়ে সাপপেন্সটাকে মনে হয় জমতে দিল তারপর কাপটা নামিয়ে রেখে বললো, ‘বুঝেছি সেই অচিনদেবের ঘটনাটা তো? আমি ভেবেছিলাম এসব পত্রিকার লেখা কেউ পড়েনা।দেখছি আমার ভাবনাটা ভুল ছিল।আসলে কোন পত্রিকা চলে আর কোন পত্রিকা চলেনা এটা আমি ভাবিনি কখনও।আমি ঘটনাটা শুধু প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম।এবং এখন দেখছি রীতিমতো পাঠক জমিয়ে ফেলেছি!’
‘আসলে এটা এমন একটা ঘটনা যেটা পাঠক কখনও ভুলে যেতে পারবেনা।আমি নিজেও বুঝতে পারিনি এটা কি ফিকশন নাকি সত্যি ঘটনা।’
‘এটা কোন মিথ নয়।একেবারে সত্যি।’চায়ের কাপে আবার চুমুক দিল হীরাভাই।অচিনদেবের ঘটনাটা একেবারে সত্যি।তবে ও যা আমাকে বলেছিল সেটা ঠিক কি বেঠিক তা বিচার করার দায়িত্ব আমার নয়।ভারতের উনত্রিশটি প্রদেশের ভেতর সাতাশটাতেই আমার ঘোরা শেষ।একেবারে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত সবকিছু এখন আমার নখদর্পনে।অচিনদেবের ঘটনাটা ছিল নৈনিতালের একটা ঘটনা মানে উত্তরাখন্ডের।সে তো দাবী করে তার বয়স এখন এগারোশো তিয়াত্তর।’
‘মাইগড!আপনি তো লিখেছেন সে দাবী করে চারশো বছর।’
‘চারশো হলেও কথা ছিল।ওটা আমি লিখেছি যাতে কিছুটা হলেও বিশ্বাসযোগ্য হয় কথাটা।কিন্তু এগারোশো বছর তো কাউন্ট ড্রাকুলাও বেঁচে ছিলনা বলেই জানি।তোমরা যতোটুকু ম্যাগাজিনে পড়েছ ঠিক ততোটুকুই আমি জানি।অচিনদেব তার নাম নাকি আমার মতো কোন ছদ্মনাম সে ব্যবহার করে তা জানা নেই আমার তবে তাকে দেখলে তোমার বড়োজোর বছর চল্লিশেক মনে হবে।তেমন হাসিখুশি নয় মোটেও।তার চালচলন দেখলে তোমার মনে হবে কোন বুড়ো।কথাবার্তা তো আরও গম্ভীর আর অভিজ্ঞতায় ঠাসা।’ চা খাওয়া শেষ।হীরা ভাই একটা সিগারেট ধরালেন।মুখভর্তি ধোঁয়া উঠে যেতে দিলেন কড়িকাঠের দিকে।‘তোমার মনে হবে কোন একটা বুড়ো বুঝি এই লোকটার ভেতর বাসা বেঁধে আছে।কি নেই লোকটার ঝুলিতে! একেবারে সেই হাজার বছর আগের পুরোনো সব কথা।শুনতে শুনতে তোমার কান পচে যাবে। সেই মুঘল আমলের কথা, বাবর যখন ভারতবর্ষে এলো কিভাবে শাসন করতো দেশ।তার ছেলে হুমায়ুন তার ভাষায় বেশ কিছুটা অত্যাচারী ছিল।সে সেই সময় হুমায়ুনের কাছে কিছু টাকার জন্য গিয়েছিল কিন্তু হুমায়ুন নাকি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল।দান খয়রাত করার তার কোন ইচ্ছাই ছিলনা।তারপর আকবর এল।এল জাহাঙ্গীর।এই লোকটা কিছুটা দান খয়রাত করতেন।অচিনদেবকে কিছু টাকা দিয়েছিলেন তিনি ব্যবসা করার জন্য।তারপর শাহজাহান যখন আগ্রার তাজমহল বানালেন সেখানে সে কি এক কাজ পেয়েছিল।এরপর আর ভারতবর্ষে থাকবেনা বলে নিয়ত করে অচিনদেব।চলে আসে ইউরোপে।সেখানে সবেমাত্র রেনেসাঁর অভ্যুদ্দয় হয়েছে।মানুষজন জ্ঞানবিজ্ঞানে পারদর্শিতা লাভ করছে, হয়েছে মধ্যযুগীয় সভ্যতার পতন।ইউরোপের নানা দেশে সে কাটিয়ে দেয় প্রায় দুশো বছর।জীবনে বিয়ে করবেনা বলে পরিকল্পনা করেছিল।তবে একবার বিয়ে করেছিল মাত্র দেড়শো বছর বয়সে।সেই বৌ মারা যাবার পর আর বিয়ে করেনি।কেনই বা করবে? কয়জনকেই বা করবে? হাজার বছরের জীবনে বৌতো বাঁচবে বেশী হলে ষাট সত্তর বছর।তারপর আবার বিয়ে করতে হবে, এবং আবারও।আর এভাবে প্রতি সংসারে সে জন্ম দিতে থাকবে একের পর এক সন্তান।এভাবে তার সন্তানের চাপেই সমাজ যদি নুয়ে পড়ে বাকি মানুষরা কি করবে।এটাও তার একটা ভাবনার বিষয় ছিল।যতো বয়স বাড়ে মানুষের অভিজ্ঞতাও বাড়ে।দেখা যায় একটা মানুষের বয়স যখন আশি বছর হয় তখন সে অভিজ্ঞতার কারনেই অনেকটা নুব্জ হয়ে যায়।আর এই হাজার বছরের জীবনে অচিনদেব এতোটাই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যে মাঝে মাঝে তার অভিজ্ঞতা কাউকে না কাউকে বলতে হয়। তার অভিজ্ঞতা কাউকে বলতে না পারলে সে বুকফাটা কষ্টে থাকে এবং মাঝে মাঝে আত্মহত্যার বিষয়টাও মাথায় আসে।এবং আত্মহত্যার চেষ্টাও সে করে কিন্তু মরতে পারেনা।যতোবারই মারা যাবার চেষ্টা করে ততোবারই সে বেঁচে যায়।কারন তার মৃত্যু নেই। সে অমর।’
‘অসম্ভব।’ মাঝপথে বলে ওঠে জাহিদ।এতোক্ষন চুপ করে সে শুনছিল হীরাভাইয়ের কথা।থাকতে না পেরে সে প্রায় চিৎকার করে ওঠে।‘এটা কিভাবে হয়? পৃথিবীতে কোন কিছুই অমর নয়।এটা প্রকৃতি কিছুতেই হতে দেবেনা।অবিনশ্বর বলে কোন কিছু নেই পৃথিবীতে।’
‘হতে পারে এটা আমাদের একান্ত নিজের ধারনা।’হীরাভাই তাকান জাহিদের দিকে।মনে হচ্ছে ব্যাঙ্গ করছেন তাকে।‘একজন মানুষ যদি অমর হয় তবে তুমি কিভাবে তা জানতে পারবে? ধরো তোমার পাশের বাসার একজন মানুষ একশো বছর বেঁচে আছেন কিন্তু তুমি তো একশো বছর বেঁচে থাকলেনা।তোমার ছেলে তো বিষয়টা জানলোনা।তোমার নাতিও বিষয়টা জানলোনা যে এই লোকটা তার দাদার সময় থেকে বেঁচে আছে।তার সমসাময়িক কেউ যদি বেঁচে থাকে তবেই না বিষয়টা প্রচার পায়। ধরো এখন যদি টিপু সুলতানের সময়কার কেউ একজন বেঁচে থাকে তবে কি আমরা জানতে পারবো? কিভাবে জানবো? সে যদি বিয়ে না করে এবং তার কোন ছেলে মেয়ে না থাকে এবং তাকে যদি চল্লিশ বছর বয়সের মতো মনে হয় তবে কার বাপের সাধ্য তার আসল বয়স জানে?আছে কোন যুক্তি?’
জাহিদ মাথা নাড়ে।তার মাথায় কোন যুক্তি আসছেনা।‘তবে এটা একেবারে গাঁজাখুরী হয়ে গেলনা যে একটা মানুষ বলা নেই কওয়া নেই একেবারে এগারোশো বছর বেঁচে রইলো?আপনার কি মনে হয়নি লোকটা মস্ত একটা চাপাবাজ?’
হীরাভাই লম্বা করে টান দিলেন সিগারেটে।তার অভিব্যক্তি অনেকটা শার্লক হোমসের মতো শীতল বলে মনে হলো জাহিদের কাছে।দেখে মনে হচ্ছে একেবারে বিশ্বাস করে বসে আছেন তিনি অচিনদেবকে।মাথা নাড়লেন ধীর গতিতে,‘আচ্ছা,’অবশেষে বললেন,‘আমি যদি এই এলাকার কোন মানুষকে বলি আমি একজন লেখক, আর তোমরা আমার লেখা পড়ে ঢাকার একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে এসেছ তাহলে মানুষ হাসবে।বিশ্বাস করবেনা তোমাদের কথা।কারন তারা জানে হীরাভাইয়ের অনেক টাকা।তিনি রাতদিন পড়ে পড়ে ঘুমোয় আর সন্ধ্যা হলে প্রভাতী সঙ্ঘে গিয়ে তাস পেটায়।কোনদিন কেউ জানেও না যে মানবদরদী নামে যে লেখকটা তিনি হলেন এই হীরাভাই।তোমরা যতোই বলোনা তারা বিশ্বাস করবেনা।তাহলে কোনটা ঠিক?তাদের কথা নাকি তোমাদের কথা?জবাব দাও?’
সুশীল জাহিদের দিকে আড়চোখে তাকালো।কিছুটা অনুনয়ের ভাব তার চোখে।তার এই দৃষ্টিটা চেনা আছে জাহিদের।তাকে আর এগুতে নিষেধ করছে।জাহিদ চুপ করে রইলো।তাকে চুপ করে থাকতে দেখে হীরাভাই বললো,‘বিশ্বাস হলো সেটাই যা তুমি দেখ।যা অদৃশ্য তা তুমি বিশ্বাস করতে চাওনা।এই একটা কারনে বহু মানুষ নাস্তিক হয়ে যায়।এবং সেই একই কারনে আমি তাকে বিশ্বাস করবো।’
সুশীল চোখ বড়ো বড়ো করে বললো,‘তারমানে আপনি তাকে এখনও বিশ্বাস করতে পারেননি তাইতো?’
‘ঠিক তাই।তবে করবো।’ হীরা ভাই সিগারেট টানছেন ঘনঘন।‘আসল কথাটা তো বলা হয়নি।অচিনদেবের সাথে দেখা হয়েছিল আজ থেকে তেতাল্লিশ বছর আগে,যখন আমার বয়স মাত্র আঠারো কি বিশ বছর।তখনই তার বয়স দেখাচ্ছিল চল্লিশ।এখন যদি তার সাথে আমার দেখা হয় আর সে যদি আগের মতোই থাকে তবে ভাববো সে সত্যি কথাই বলছে।’
বোমা ফাটলো ঘরের ভেতর।চমকে গেল দু’জন।সুশীল আর জাহিদ দু’জনেই সোজা হয়ে বসেছে।‘তারমানে আপনি তার সাথে দেখা করবেন?’ সুশীল উৎসাহে ঝুঁকে পড়েছে একেবারে।
মৃদু হাসলেন হীরাভাই,‘কেন যেতে চাও নাকি অচিনদেবের সাথে দেখা করতে?’ 
‘যেতে চাই মানে!’লাফিয়ে উঠলো সুশীল।‘গল্পটা পড়ার সময়ই আমার ইচ্ছে হচ্ছিল লোকটার সাথে যদি দেখা করতে।আর এই ঘটনা আমার জীবনের সেরা একটা ঘটনা।আমি এর প্রতিটি ঘটনা ভিডিও ধারন করে রাখতে চাই।হোক সে মিথ্যে বা মায়াজালে ঘেরা।এমন একটা ঘটনা ইউটিউবে ছাড়লে তো হাজার হাজার সাবসক্রাইবার জুটবে নিশ্চিত।’
‘আমিও যাবো।’ জাহিদ হালকা গলায় বললো।‘আমি কখনও এর আগে ইন্ডিয়া যাইনি।তুই যদি যাস আমি যাবো।’
সিগারেটটা এ্যাশট্রেতে চেপে নিভিয়ে দিলেন হীরাভাই।বললেন,‘আমার হাতে তো বেশী সময় নেই।আমি আগামী সপ্তাহেই যেতে চাই।তোমাদের ভিসা কি করা আছে?’
সুশীল বললো,‘আমি তো প্রায়ই ইন্ডিয়া যাই।আমার ভিসা আছে সাত মাসের।জাহিদের অবশ্য পাসপোর্ট আছে কিন্তু ভিসা নেই। সেটা আমি ব্যবস্থা করে নিতে পারবো তিনদিনের ভেতর।’

দুই
প্লেন কোলকাতায় নামার আগে একটাও কথা বলেননি হীরা ভাই। প্লেন ল্যান্ড করতেই তিনি বললেন,‘আমার একটা অভ্যাস আছে। প্লেন আকাশে থাকলে আমি কোন কথা বলতে পারিনা। মাটির সাথেই আমার বন্ধুত্ব। আকাশের সাথে নয়।’ বলে হাঃ হাঃ করে হাসলেন তিনি। অবশ্য তার হাসিতে যোগ দিলনা বাকি দু’জন। সুশীল তো সেই প্লেনে ওঠার সময় থেকেই ভিডিও করে চলেছে তার মোবাইলে। এরজন্য মোবাইলের ওটিজি কেবল, কয়েকটা পেন ড্রাইভ নিয়ে এসেছে সাথে।
কোলকাতায় প্লেন একঘন্টার যাত্রা বিরতি। এই এক ঘন্টায় এ পর্যন্ত করা ভিডিওগুলো নিজের গুগল ড্রাইভে আপলোড করে নিল সুশীল। এয়ারপোর্টের ওয়াইফাই বেশ ভালো স্ট্রিমিং করে।এর মধ্যেই তিনজন কিছুটা খাবার খেয়ে নিয়ে পরবর্তী যাত্রার জন্য প্রস্তুত হয়ে নিল। এবার একটু লম্বা যাত্রা।কোলকাতা থেকে দেরাদুন এয়ারপোর্ট প্রায় সাড়ে সাত ঘন্টার উড্ডয়ন পথ।
দেরাদুন পৌছুতে পৌছুতে প্রায় রাত হয়ে গেল। সুশীলের মোবাইলের চার্জ শেষ হওয়াতে তাকে আপাতত ভিডিও করা বন্ধ করতে হয়েছে।দেরাদুনে বেশ ঠান্ডা মনে হলো সবারই।হীরাভাই বললেন,‘জায়গাটা হিমালয়ের পাদদেশে তাই এখানে বছরের সবসময়ই ঠান্ডা থাকে।আর এখানে যেসব পশুপাখি দেখতে পাওয়া যায় তা গোটা ভারতবর্ষে পাওয়া যায়না।তোমরা তো জিম করবেটের নাম শুনেছো।তার জন্মস্থান হলো এই উত্তরাখন্ড মানে নৈনিতাল। উনি খুব বড়ো মাপের শিকারী ছিলেন।এখানকার গাড়োয়াল, নৈনিতাল, কুমায়ুন, রুদ্রপ্রয়াগ, চম্পাবত এসব এলাকার নানা জায়গায় বাঘ শিকারের কাহিনী রয়েছে মানুষের মুখে মুখে।ছোটবেলা থেকে এসব কাহিনীর ভক্ত ছিলাম আমি।আর তাই দিল্লীর পরই তালিকায় রেখেছিলাম উত্তরাখন্ডকে।আর এখানে ভারতের সবচেয়ে ভালো আলুর ফলন হয়ে থাকে।এখানকার দৃশ্যও অসাধারন।আরও বড়ো তথ্য হলো এখানে অনেক মন্দির আছে, প্রচুর তীর্থযাত্রী প্রতি বছর এখানে আসে।অচিনদেবের সাথে দেখা করতে হলে আমাদের অনেক হাঁটাপথ পেরিয়ে যেতে হবে।আশা করি তোমরা মানসিক ও শারিরিকভাবে প্রস্তুত আছো।’
দু’নেই ঘাড় বাঁকা করে হ্যাঁ বাচক জবাব দিল।
রাতটা দেরাদুনের নামকরা একটা হোটেলে কাটালো ওরা।সেরাতেও গল্পের আসর বসালো হীরাভাই।ইন্ডিয়ার কোথায় কি আছে না আছে, কোথায় কোন রেস্তোরাঁয় কি খাবার পাওয়া যায়, আসলে দিল্লীর লাড্ডু বলতে কি বোঝায় ইত্যাদি নানা গল্প।পরের দিন সকালে দেরাদুন থেকে একটা ট্যাক্সি নিল হীরা ভাই। যেতে হবে নৈনিতাল পর্যন্ত।সেখানে পৌছুতেই বিকেল হয়ে গেলে হীরাভাই আবারও যাত্রা বিরতির ঘোষনা দিল।নৈনিতালে আরও একরাত।এই রাতে হীরাভাই কঠিন কিছু ভুতের গল্পের ঝুপি খুলে বসলো।জিম করবেটের কোন বইতে মাথা কাটা এক শ্রমিকের লাশ পড়েছিল ট্রেন লাইনের ওপর আর চাঁদের আলোতে সেই কাটা মাথা কিভাবে শিকারীর দিকে ঘুরে যাচ্ছিল তার গল্প, জনি চেকব নামে আরেক শিকারীর ভুত শিকারের গল্প, কতো যে শিউরে ওঠা গল্প জানে লোকটা কে জানে।
পরদিন সকালে নাস্তা করে আবার ট্যাক্সিতে চেপে যাত্রা শুরু হলো।হীরাভাই বললো, ‘এবার আমরা শহরের শেষ প্রান্তে চলে যাবো।আর বলতে পারো সেটাই সভ্যতার শেষ সীমানা।এরপর শুধু হাঁটা পথ।পাহাড়, উপত্যকা, চড়াই উৎরাই আর মেঠো ঘাস বিছানো জঙুলে পথ।’
ভেতরে ভেতরে দমে গেলেও জাহিদ বাইরে থেকে বুঝতে দিলনা যে কিছুটা চিন্তিত।এর আগে সে দেশের বাইরে আসেনি।এবারেই প্রথম তাই একটু ভয় ভয় ভাব আছে তার আচরনে।সুশীল কিছুক্ষন পরপরই ভিডিও করছে।কিছু ভিডিওতে সে নিজের ভয়েসও দিচ্ছে।তারা কোথায় যাচ্ছে না যাচ্ছে সব তুলে রাখছে ভিডিওতে। এমনকি অচিনদেবের বয়স, কতো বছর ধরে সে কি কি করে বেড়িয়েছে পৃথিবীর বুকে যা যা হীরাভাইয়ের কাছ থেকে শুনেছে সব বলছে সে ভিডিওতে।
‘তেতাল্লিশ বছর অনেকটা সময়।’ হীরাভাই বললো,‘আমি অনেক দৃশ্যই এখন মনে করতে পারছিনা।ঠিক কোনখানে গিয়ে এই পথটা দু’ভাগ হয়ে একটা কুমায়ুনের পথে আরেকটা গাড়োয়ালের পথে গেছে এটা নিয়ে আমি এখন কনফিউজড।’ তারপরও ট্যাক্সি ওদেরকে সঠিক জায়গাতেই নামালো।ট্যাক্সিভাড়া দিয়ে ওরা একটা রাস্তার মাথায় দাঁড়ালো।তখন সুর্য্য একেবারে মধ্যগগনে।‘মনে পড়ছে এটাই সেই জায়গা যেখানে এসে সে আমাকে বিদায় জানিয়েছিল।এখান থেকে তার ডেরায় যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে রাত নামার কথা। একটু দ্রুত হাঁটতে হবে তোমাদের কারন এখানকার জঙ্গলগুলোতে বাঘ থাকে।’
বাঘের কথায় ওরা প্রায় দৌড়ুলো হীরাভাইয়ের পিছনে।শুরু হলো কষ্টের রাস্তা।প্রথমে কাঁটানটে বেছানো গ্রামের পথ, তার দুই মাইল পরেই শুরু হয়ে গেছে পাহাড়ী উঁচু নিচু টিলা টক্কর।এখানকার মাটির রঙ লাল আর সাদা মেশানো।জঙ্গলগুলোও অচেনা গাছ গাছালীতে ভরা।তবে যেদিকে তাকানো যাকনা কেন শুধু শুন্যতা আর শুন্যতা।কোন মানব বসতি নেই।সভ্যতা যেন শেষ হয়ে গেছে হাইওয়ে থেকে এদিকটায় নামার পর পরই।দুই ঘন্টা পর একটা চিকন নদীর কাছে এসে পৌছুলো ওরা।তবে নদী না বলে নালাই বলা ভালো।হাঁটু পর্যন্ত স্বচ্ছ পানি পেরুতে তেমন বেগ পেতে হলোনা ওদের কারোই।নদীর পর গভীর জঙ্গলের দেখা মিললো।এসব জঙ্গলের ভেতর জিম করবেট হয়তঃ একসময় বাঘ শিকার করে বেড়াতো কে জানে।এখানকার জঙ্গলগুলো মূলত শীতকালীন বর্গীয় অঞ্চলের বৃক্ষ দ্বারা পরিপূর্ন ।ইউক্যালিপটাস, বার্চ, পাইন এসব গাছই বেশী বনগুলোর ভেতর। দুপুর তিনটার পর আবার পাহাড়ের দেখা মিললো।তবে এবার পাহাড়গুলো বেশ উঁচু এবং একটার সাথে একটা গায়ে গা লাগানো।হীরা ভাই বললো,‘আমার ব্রেন যদি ঠিক থাকে তবে আমি জায়গামতো এসে পড়েছি।’
জাহিদ জিজ্ঞেস করলো,‘আচ্ছা সে এমন দুর্গম অঞ্চলে কেন থাকে? সে ইচ্ছে করলে তো শহরে গিয়ে থাকতে পারতো।’
হীরাভাইয়ের জবাব দেয়ার আগেই পেছন থেকে কে যেন বললো,‘কারন সে সকলের চেয়ে আলাদা তাই।’
ওরা তিনজনই এমন চমকে উঠেছিল যে আরেকটু হলেই চিৎকার করে উঠতো। সুশীল আর জাহিদ দৌড়ে গিয়ে একটা গাছের নিচে দাঁড়ালো, যেন কোন বাঘ মানুষের রূপ নিয়ে ঘাড় মটকাতে এসেছে।হীরাভাই লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে।তার চোখে রাজ্যের বিশ্ময়।লোকটাও হাসিমুখে হীরাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ বিশ্ময় উপেক্ষা করে চিৎকার করে উঠলো মানবদরদী হীরাভাই,‘অচিনদেব!’
--------------++++-------------
সত্যি,গত তেতাল্লিশ বছরে অচিনদেবের চেহারায় একটা আঁচড়ের দাগও পড়েনি।তার চেহারাটা যেন গতকালের দেখা।হীরাভাই তার বিছানার ওপর বসে আছে হাঁটুমুড়ে।ছোট একটা ঘর লাল পাহাড়ের একেবারে চুড়োর কাছাকাছি।বেড়া, পাইন কাঠ আর শক্ত তক্তা দিয়ে বানানো বাড়ি।বিছানাটাও তক্তা দিয়ে বানানো।বিছানার ওপর একটা পুরোনো গদি, কোনকালে সোফা বা নরম সেটির আসন ছিল সেটা।ঘরে বিছানা ছাড়া আর কিছু নেই। একেবারে শুন্য।
‘আমি কিন্তু সবকিছুই স্মরন করতে পারছি।তুমি চলে গেলে আমি ফিরে আসলাম এখানে, আমার বেশ খারাপ লেগেছিল তুমি চলে যেতে।পরে ভাবলাম এটা এমন আর কি, এই জীবনে তো কতো জনকেই হারালাম। সব কি আর ফিরে পাওয়া যায়?’অচিনদেব মৃদু দীর্ঘশ্বাস ফেলে,‘এই বাড়িতেই কাটিয়ে দিলাম একটা লম্বা সময়।বাগানে চাষ করি, পাহাড়ীয়াদের কাজে সাহায্য করি।অবসর সময়ে বই পড়ি।এভাবেই কেটে যাচ্ছে।তা তুমি কি মনে করে হঠাৎ?’
হীরাভাই একটা সিগারেট ধরলো,‘আমি রিসেন্টলি তোমাকে নিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলাম পত্রিকায়।এই দু’জন সেই লেখাটা পড়ে আমার কাছে এসেছে।আমি তোমার কথা এদেরকে বললাম।অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম তোমার সাথে দেখা করবো, এরা যখন এসেছে আর তোমার ব্যপারে যথেষ্ঠ ইন্টারেস্ট আছে তাই ভাবলাম তোমার এখানে নিয়েই আসি।’
অচিনদেব গম্ভীর মুখে বললো,‘কাজটা ভালো করনি।আমি নিরিবিলি মানুষ নিরিবিলি থাকতেই পছন্দ করি।এসব কথা অনেক মানুষ পড়বে, তারা আমাকে খুঁজতে আসবে।আমার শান্তি নষ্ট হবে।এই পৃথিবীর মানুষকে জানানোর জন্য আমার গোপন কথা তোমার কাছে বলিনি হীরা।’
‘আহা, কি ভাবছো তুমি?আমি কি তোমার ঠিকানা দিয়েছি নাকি? আমি শুধু গল্পের স্টাইলে ইন্ডিয়ার উত্তরাখন্ডের নাম করেছি।উত্তরাখন্ড কি আর হাতের তালুর মধ্যে রাখা মোয়া নাকি যে ইচ্ছে হলেই ভেঙে চুরে দেখা যাবে।’
অচিনদেব কিছু বললোনা।অনেকটা আয়েসী ভঙ্গিতে হেলান দিয়ে বসলো বিছানাতে।সুশীল আর জাহিদ খুবই বিশ্মিত এই অচিনদেবকে দেখে।তাদের কাছে মনেই হচ্ছেনা এই লোকটার বয়স চল্লিশ বছর।তার গায়ের হলদে রঙ, টানটান চামড়া দেখে বেশী হলে ত্রিশ ভাববে লোকে।তবে তারা বেশীক্ষন বিশ্ময় ধরে রাখতে পারলোনা, একসময় বিশ্ময় সাগরে গিয়ে পড়ে হাবুডুবু খেতে লাগলো।এই অচিনদেব একাধারে সামাজিক, বৈষয়িক, অর্থনীতিবিদ, গানিতজ্ঞ, বিজ্ঞানী, রসায়নবিদ, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, জ্ঞানী, সমরবিদ, পুরাতত্ববিদ, ইতিহাসবেত্তা, মনোবিজ্ঞানী এবং কল্পনা বিশারদ ও ভবিষ্যতবেত্তা।অসীম তার জ্ঞান।কোন মানুষ জ্ঞানের দিক থেকে তার সমকক্ষ হবে এটা চিন্তাও করা যায়না। এ যেন প্রকৃতির এক অপার রহস্য।কিভাবে একজন মানুষ সব বিষয়ে পারদর্শী হয়? এটা তো শুধু মুখের কথা নয়, এটা সে প্রমান দিচ্ছে প্রতি পদে পদে।বিষয়বস্তু যে দিকেই গড়াক না কেন সে কাউকে এগুতে দিচ্ছেনা, লুফে নিয়ে তার বক্তব্য শুরু করে দিচ্ছে।আর তার বক্তব্য তো যা তা বক্তব্য নয়, একেবারে গভীর জ্ঞানসম্পন্ন।তার যতো জ্ঞান বলা চলে সবই প্রাকটিক্যাল কারন প্রতিটা বক্তব্যের সাথে সে উদাহরন জুড়ে দিচ্ছে।তাজমহল বানানোর পেছনে কি টেকনিক ছিল তাও সে বর্ননা করলো।অথচ আকবর নাকি এরচেয়েও বড়ো তাজমহলের ডিজাইন করেছিল যা কারো জানা নেই। এবং সেই তাজমহলের ডিজাইন বানানো হয়েছিল হাতির দাঁত দিয়ে, যা করেছিল দুইজন ইউরোপিও ডিজাইনার।টিপু সুলতান যে বন্দুকের গুলিতে প্রান হারিয়েছিলেন তা নাকি একটা গাদা বন্দুক ছিল।টিপুর ছিল সাতটা ছেলে আর একটা মেয়ে যা ইতিহাসে পাওয়া যায়না।ইতিহাস বলে তার ছিল তিন ছেলে।অথচ টিপু সুলতানের ছেলে দিলওয়ার সুলতানের সাথে অচিনদেবের সখ্যতা ছিল।তার ছেলে প্রিন্স মুনওয়ার সুলতানের কবর আছে কোলকাতার বেহালার ফকিরপাড়ার কবরস্থানে যা কেউ জানেনা।প্রিন্স মুনওয়ার সুলতানই ছিলেন ভারতের সর্বশেষ মুসলিম প্রিন্স।তারপর কথাবার্তা এগুলো কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কার নিয়ে।অচিনদেবের বয়স যখন চারশো বছর তখন কলম্বাস আমেরিকা আবিস্কার করেন।কলম্বাস ৩রা অগাস্ট ১৪৯২ সালে আমেরিকা আবিস্কার করেন।কলম্বাস নাকি আসলে একজন জলদস্যু ছিলেন।তিনি মূলত এশিয়ার দেশগুলো থেকে দামী দামী রত্ন আর পাথর ডাকাতী করার উদ্দেশ্যে তিনটা বিশাল রনপোত নিয়ে বেরিয়েছিলেন।সফল হতে পারেননি এবং আমেরিকা আবিস্কার করে বিখ্যাত হয়ে যান এই জলদস্যু।এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কথা এল।এল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এই অঞ্চল থেকে সরে গেলেন অচিনদেব চিনে।সেখানে প্রায় বিশ বছর থাকার পর চলে এলেন আবার এখানেই।তখন ব্রিটিশদের রাজত্ব।জিম করবেটের সাথেও অচিনদেবের পরিচয় ছিল।জিম করবেট নাকি তার এই বাড়িতে একদিন পুরো সময় অপেক্ষা করেছিলেন একটা মানুষখেকো বাঘের জন্য।পরবর্তীতে তিনি বাঘটাকে শিকার করেন আর সেই কাহিনী কুমায়ুনের মানুষখেকো লিখে বিখ্যাত হয়ে যান।তবে মারা যাবার আগে সেই বাঘটা অচিনদেবকে আক্রমন করে এবং অচিনদেবের একটা পা খেয়ে ফেলে।
অচিনদেবের কথা শুনে চট করে সুশীল আর জাহিদ তার পায়ের দিকে তাকায়।হীরা ভাই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তার পায়ের দিকে।তারপর বিশ্ময় কাটিয়ে উঠে বললো,‘একি কথা!আমাকে তো কখনও বলোনি যে এটা তোমার নকল পা?’
মৃদু হাসলো অচিনদেব।খোলা দরজা দিয়ে সামনে দিগন্ত বিস্তৃত উপত্যকার দিকে তাকালো।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।নীড়ে ফিরতে শুরু করেছে হিমালয়ান পাখির দল।তার উক্তিটাকে ফিসফিস বলে মনে হলো,‘না এটা আমার নকল পা নয়।’ বললো সে,‘আসল পা।আমার শরীরের একটা অঙ্গ কোন কারনে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে মুহুর্তের মধ্যে তা আবার গজিয়ে যায়।অনেকটা টিকটিকির লেজের মতো।’

তিন
হাঁ হয়ে থাকা তিন জোড়া চোখের সামনে দিয়ে সে উঠে গেল।কাঠের বিছানার নিচ থেকে একটা ভোজালী মতো ধারালো জিনিষ বের করলো।‘এটা আমার রাখার দরকার নেই আত্মরক্ষার জন্য তবে এটা দিয়ে আমি গাছের ডাল কাটি আর মগডাল থেকে ফল টল পেড়ে খাই।আমার কথা বিশ্বাস করবেনা তাই আমি এটা তোমাদের দেখাচ্ছি।’ বলে ভোজালিটা দিয়ে অচিনদেব তার বাম হাতের কব্জিতে পোঁচ দেয়।মুহুর্তের মধ্যে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছোটে।হায় হায় করে ওঠে হীরা ভাই।সুশীল আর্তনাদ করে অন্যদিকে তাকিয়েছে।জাহিদকে দেখে মনে হচ্ছে ও বমি করে দেবে এখনই।অচিনদেব ছুরি চালাতেই থাকে।ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। টপ করে কব্জিটা কেটে পড়ে যায় সুশীলের পায়ের কাছে।জাহিদ চিৎকার করে ওঠে।তার শরীর কাঁপছে তেজপাতার মতো।দেখে মনে হবে ও ইচ্ছে করে নাড়াচ্ছে।আসলে ও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন হারিয়েছে নিজের ওপর থেকে।সকলের বিশ্মিত দৃষ্টির সামনে অচিনদেবের হাত থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেল দশ সেকেন্ডের মধ্যে।তারপর তারা যা দেখলো তা পৃথিবীর কোন মানুষ ইহলোকে দেখেছে বলে মনে হয়না।তারা দেখলো অচিনদেবের বাহুর কাটা জায়গাটা থেকে আবার একটা কব্জি গজাতে শুরু করেছে।ত্রিশ সেকেন্ডের ভেতর আরেকটা কব্জি ঠেলে বেরিয়ে এল ওর।দেখে বোঝা যাবেনা একটু আগে ভোজালি দিয়ে ওখানটাতে পোঁচ দিয়েছিল অচিনদেব।সে হাসলো,‘আমার শরীরের কোন অঙ্গে কোন সমস্যা দেখা দিলে আমি সেটা কেটে ফেলে দেই।আবার নতুন একটা পাই।’
তিনজনই বাকরুদ্ধ, বিশ্মিত আর আতংকিত।তাদের দৃষ্টি দেখে বোঝা যায় তাদের ভেতর কি বিস্ফোরন ঘটেছে।‘তুমি মানুষ নও।’অনেকটা নিশ্চিত হবার সুরে বললো হীরা ভাই।‘গতবারে এসব তুমি আমাকে দেখাওনি।তুমি হয় জিন না হয় দানব।’
হাঃ হাঃ করে হাসলো অচিনদেব।‘না দাদা আমি জিন নই বা দানবও নই।আমি তোমাদের মতো একজন রক্ত মাংসের মানুষ।’
‘অসম্ভব!মানুষ হলে এসব কি ঘটছে?মানুষ হলে তুমি কি এগারোশো বছর বাঁচতে?মানুষ হলে তোমার হাত কেটে গেলে কি আবার সেটা গজিয়ে যেত?কিভাবে সম্ভব?তুমি অনেক কিছুই আমার কাছে বলেছিলে যা আমি লিখেছি কিন্তু তুমি এটা বলোনি কিভাবে এসব সম্ভব হয়েছে।এখন আমি বিশ্বাস করছি আসলেই তুমি এগারোশো বছর বেঁচে আছো। তোমার কোন অলৌকিক ক্ষমতা আছে যার কারনে এতোসব ঘটছে।সেটা আমাদের বলো।’ হীরা ভাই বললো।
দাঁত দিয়ে ঠোঁটটা কামড়ে ধরলো অচিনদেব।‘তুমি কি সত্যিই শুনতে চাও?’
তিনজনই একসাথে মাথা নাড়লো।
‘ঠিকআছে। তাহলে শোনো।আমার জন্মের সালটা আমার মনে নেই এখন আর।তবে যখন আমার বয়স প্রায় ত্রিশ বছর তখন আমি কোলকাতা থেকে এই অঞ্চলে আসি জাস্ট ঘোরার জন্য।আমি ছিলাম খুবই ভ্রমন পিপাসু আর একরোখা।যা আমি চাই তা যেকোন উপায়ে আমি পেতে চাই।এখনও তার একচুল পরিবর্তন হয়নি।এখনও আমি এমনি।সে যাই হোক, মা বাবা আমার কাজে কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।তাদের চেহারা এতোদিনে আমার আর মনে নেই।আমি ছিলাম তাদের একমাত্র সন্তান।আমি যা আবদার করতাম তা দেবার জন্য তাদের যুদ্ধের শেষ ছিলনা।ত্রিশ বছর বয়স থেকেই আমি ভারতবর্ষের নানা অঞ্চল ঘুরতে থাকি।অনেকটা তোমার মতোই ছিল আমার নেশা।সেই নেশার মতো ঘোরার আকর্ষন থেকেই আমি এই অঞ্চলে এসেছিলাম সেই আটশো তিয়াত্তর শতকে।আমি ছিলাম অনেকটা উগ্র স্বভাবের।কখনও ধর্ম বিশ্বাস ছিলনা আমার মধ্যে।আমার মা বাবা ছিলেন উল্টো। তারা ছিলেন প্রচন্ড ধর্মবিশ্বাসী। এমন কোন পুজো নেই যে তারা পালন করতেন না।এসব পুজো টুজোকে আমার একেবারেই বিশ্বাস হতোনা।একটা মাটির দেবতা কি এমন ক্ষমতা রাখে।এইযে তোমরা নামাজ পড়ো রোজা রাখো এসব কার জন্য করো?একজন স্রষ্ঠার উদ্দেশ্যে করো,তাইতো?আমার বিশ্বাস ছিল যে, স্রষ্ঠা বলে কিছু নেই।ইশ্বর বলে কিছু নেই।যা হয়েছে তা এমনি এমনি হয়েছে।হয়তো একটা শক্তি আছে যা সফটওয়্যারের মতো,সেটা নির্দিষ্ট নিয়মে সবকিছু পরিচালিত করে।আমি যখন আসি এখানে তখন এই অঞ্চল আরো অনেক অনুন্নত ছিল।ভারতের এসব অঞ্চলে কিছু সংখ্যক আদিবাসী ছাড়া প্রচুর পর্তুগীজ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মানুষ বাস করতো।এরা চেষ্টা করেছিল এই অঞ্চলে বড়ো বড়ো কিছু শিল্প কলকারখানা স্থাপন করে এসব অঞ্চলকে আধুনিক করে ফেলতে।কি কারনে যেন তারা সফল হতে পারেনি।সম্ভবতঃ তাদের দেশের সরকার টাকা পয়সা দিয়ে তাদেরকে সহায়তা করতে চায়নি।কিছুদিন পরই এই অঞ্চলে অজানা এক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে আর দলে দলে মানুষ পরপারে যেতে থাকে। এসব রোগগুলো ছড়িয়েছিল সেই সব বিদেশী লোকগুলোই। এর ফলে শুধু তারা নয়, দেশী মানুষগুলোও সংক্রমিত হতে থাকে।দেখতে দেখতে গ্রামকে গ্রাম জনশুন্য হতে থাকে।দলে দলে মানুষ পালাতে থাকে অন্য কোন নিরাপদ জায়গার খোঁজে।আমি তো তখন এসব ব্যপারে একেবারে উদাসিন।মৃত্যুর কোন ভয় কখনও আমার মধ্যে ঘাঁটি গাড়েনি।চিন্তা করলাম এখানে না থেকে তাদের গ্রামে গিয়ে ব্যপারটা দেখতে হবে যে কি কারনে তারা সবাই মারা যাচ্ছে।একদিন পাঁচ মাইল দুরের সেমবাই গ্রামে গেলাম।পর্তুগীজ গ্রাম ছিল এটা।এখন মাত্র দু’তিন জন মানুষ অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছে।যাদের গায়ের রঙ ছিল সাদা তাদের গায়ের রঙ হয়ে গেছে লাল।লাল চামড়ায় গোল গোল দাগ ফুটে আছে।চামড়াগুলো কুঁচকে গেছে যেন প্রত্যেকটা মানুষের বয়স একশো বছর ছাড়িয়ে গেছে।চেহারা দেখে মনে হচ্ছে যেন মিশরের মমি।আমাকে দেখে একজন কি যেন বলার চেষ্টা করলো।আমি বুঝলাম, সে আমাকে চলে যেতে বলছে।আমি তার আরও কাছে গেলাম, হিন্দীতে বললাম,‘আমি জানতে চাই আপনার কি হয়েছে।এটা কি ধরনের রোগ?’
লোকটার কথা বলার ক্ষমতা নেই একেবারে, চিঁচি করছে গলা।কথা বলতে পারবেনা।ওঠার ক্ষমতা নেই, খাওয়ার ক্ষমতা নেই, পান করার ক্ষমতা নেই।এটা কি রোগ।সারা ঘর খুঁজে এক কলস পানি পেলাম, সেখান থেকে একটা পাত্রে কিছুটা পানি নিয়ে তার মুখে দিলাম।তার পানি পান করার শক্তিও নেই।পানিটা গলার ভেতর যেতেই বিষম কাশি কাশতে লাগলো লোকটা।চোখমুখ লাল হয়ে শক্ত হয়ে থাকলো।পেছন থেকে পায়ের শব্দ পেলাম।ঘুরতেই দেখলাম চমৎকার চেহারার এক লোক হাসিমুখে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।কি অদ্ভুত সুন্দর তার মুখমন্ডল আর আবয়ব যেন কোন সিনেমার নায়ক।পোশাকটাও তেমনি।‘আমাদের কিছু করার নেই ওদের জন্য।সরাসরি ডোরিনিয়ার অভিশাপ, এভাবেই ওরা মারা যাবে।মারা যাবার আগ পর্যন্ত কোন কিছু খেতে পারবেনা এবং পান করতেও পারবেনা।আর এর ফলে ওরা পরজন্মে শান্তি পাবে।’ সে বললো।‘চলে আসুন, ওদেরকে একটু শান্তিতে মরতে দিন।’
আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে লোকটার পেছন পেছন বেরিয়ে এলাম কুটির থেকে।গ্রামের উঠোনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়লো লোকটা।ঘুরলো।নিজের বুকে আঙুল দিয়ে বললো,‘আমি গৌর।তোমার নাম কি?’
‘আমি অচিনদেব,’ আমি বললাম।‘পাঁচমাইল দুরে থাকি।আপনি বললেন ডোরিনিয়ার অভিশাপ।এটা কি?’
গৌর হাসলো,‘ডোরিনিয়ার নাম শোনেননি আপনি?’
‘নাতো!আমি হিন্দু, মোটামুটি সব দেবতা দেবীর নাম জানি।এই নামে কোন দেবতা বা দেবী নেই আমাদের।’
‘আমি হিন্দু ছিলাম তবে এখন নেই।আমাকে সিলেক্ট করা হয়েছে একজন বার্তাবাহক হিসাবে।আমি এখন সরাসরি ডোরিনিয়ার বার্তাবাহক,তোমরা যাকে অবতার বলো।মুসলমানরা যাকে বলে নবী।’
আমি সোজা হয়ে গেলাম।বলছে কি লোকটা!দেখে তো পাগল টাগল বলে মনে হচ্ছেনা।রীতিমতো সুপুরুষ এবং সৌম্য ভদ্রলোক।তার চোখমুখ থেকে যেন কোন এক আলোকচ্ছটা বেরুচ্ছে।এই ধরনের লোকরা সাধারনত মিথ্যেবাদী টাইপের হয়না।তার হাঁটাচলা, দাঁড়ানো বা কথা বলার স্টাইল খুবই উন্নত এবং রুচিশীল।তাছাড়া তার শরীর থেকে খুব সুন্দর একটা গন্ধ বেরুচ্ছে, মনে হচ্ছে খুব চেনা আবার পরক্ষনে মনে হচ্ছে অচেনা।গন্ধটা কখনও তীব্র হয়ে উঠছে আবার কখনও মিলিয়ে যাচ্ছে বাতাসে।তার চোখের রঙটাও যেন আলাদা, সেই রঙের ভেতর কেমন এক আবেশ।ভ্রুটা বাঁকানো ধনুকের মতো, চোখের পাতাগুলো বড়ো বড়ো।কি এক নির্লিপ্ততা তার তাকানোর ভঙ্গিতে অথচ গভীর সেই দৃষ্টি আমাকে ভেদ করে চলে গেছে যেন বহুদুরে।মনের ভেতর থেকে কে যেন বললো এই লোকটা কোন সাধারন লোক নয়।এর কাছ থেকে তুমি অনেক কিছু পেতে পার।
‘হ্যাঁ, আমি একজন বার্তাবাহক বা ম্যাসেঞ্জার।ডোরিনিয়ার পক্ষ থেকে বার্তা নিয়ে পৃথিবীর মানুষের কাছে পৌছে দেয়াই আমার কাজ।’ গৌর সরাসরি তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ওর চোখের পাতা পর্যন্ত কাঁপছেনা।‘ডোরিনিয়া আমার দেবী।আমি তার উপাস্য এবং বার্তাবাহক।চির শান্তির দেবী ডোরিনিয়া।তার রাজ্যে, তার ধর্মে কোন অশান্তি নেই।অতি শান্তির ধর্ম ডোরিনিয়ান। যে এই ধর্ম গ্রহন করবে সে পাবে পরম শান্তি এবং তুমি হয়ত বিশ্বাস করতে পারবেনা তার জন্য পরকালেও অপার শান্তি নিশ্চিত হয়ে যাবে।এই যে মানুষগুলো দেখছো সবাই তার উপাস্য ছিল একসময়।কিন্তু কালক্রমে এরা কিছু নিষিদ্ধ কাজ করেছে যার জন্য তাদের এই অবস্থা।’
আমি গৌরের সম্মোহনী শক্তির কাছে যেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি যে আমাকে পুরোপুরি তার কথা শুনতে হবে।গৌর বলে চললো,‘তোমার মনে অনেক জিজ্ঞাসা জড়ো হয়েছে আমি দেখতে পাচ্ছি।আমাকে বলতে হবেনা আমি এক এক করে পুরো ঘটনাটা বলে যাই তারপর তোমার প্রশ্নের উত্তর দেবো।যদি তোমার শোনার শক্তি থাকে তবে আমি একটানা তিন চারদিন বা টানা এক সপ্তাহ কথা বলে যাবো।ডোরিনিয়া সৌন্দর্যের দেবী।পৃথিবীর সমস্ত নারীকে একস্থানে জড়ো করলে আর বীপরিতে যদি ডোরিনিয়া থাকে তবে সৌন্দর্যে সমস্ত নারী ম্লান হয়ে যাবে।তার সৌন্দর্যে গাছে ফুল ফোটে।তার শরীরের সুবাসে বসন্তকাল আসে পৃথিবীতে।তার শরীরের গঠন এতো নিখুঁত যে পৃথিবীর সবচেয়ে নিখুঁত নারীর চেয়ে এককোটি তেইশ লক্ষ গুন নিখুঁত সে।এই সৌন্দর্যের কারন আছে, ডোরিনিয়া ঈশ্বরের নিজের সৌন্দর্যে সৃষ্টি।যার রূপ বর্ননাতীত। ঈশ্বর নিজে যেমন সৌন্দর্যের আধার, তিনি তার সৌন্দর্যের অর্ধেক দান করেছেন ডোরিনিয়াকে।তাকে সুন্দরী বললে পাপ হবে, কারন সে সুন্দরী নয়, সে সসীম মনুষ্যকল্পনার বাইরের সৌন্দর্য যা ভাবা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।আমরা তা নিয়ে ভাবতে চাইনা।আমি তার উপাসনা করি এবং সে নিজে আমাকে তার বার্তাবাহক মনোনীত করেছে।আমি সারাজীবন তার বার্তাবাহক হিসাবে কাজ করে যাবো যা করে আসছি গত তিন হাজার বছর ধরে।’
আমি একটা ধাক্কা খেলাম।বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম।চেষ্টা করলাম মুখ খোলার।কিন্তু দেখলাম আমার ঠোঁটদুটো একে অন্যের সাথে জোড়া লেগে গেছে।ভয় পেয়ে গেলাম এই ভেবে যে আমার বোধহয় ওদের মতো রোগ দেখা দিয়েছে।গৌর আমার মনের কথা বুঝতে পেরে হাসলো,‘ভয় পাবার কোন কারন নেই।সাময়িকভাবে আপনার কথা বলার শক্তি কেড়ে নিয়েছি আমি।কারন আমি চাইনা আপনি আমার কথার মাঝে কথা বলে বাধা সৃষ্টি করেন।আমার কথা শেষ হবার পর আপনি কথা বলতে পারবেন আগের মতো।আপনি শুনে অবাক হচ্ছেন যে আমি কিভাবে তিন হাজার বছর বেঁচে আছি।এক সময় আমি আপনার মতো মানুষ ছিলাম।আপনার মতো সাধারন স্বপ্ন ছিল আমারও।আজ নেই।আজ সেই স্বপ্নময়তাই বাস্তব।ডোরিনিয়া আমাকে অমরত্ব দান করেছে।আমাকে তার পায়ের কাছে স্থান দিয়েছে।আমার কাজ শুধু পৃথিবীর মানুষের কাছে তার বার্তা পৌছানো।আমাদের ধর্মের অনুসারী অনেক কমে গেছে।আগে অনেক মানুষ তার উপাসনা করতো কিন্তু পৃথিবীতে নানা ধর্মের আবির্ভাবের ফলে এই ধর্ম আজ বিলীন হয়ে যেতে বসেছে।তাই আমাকে ম্যাসেঞ্জার বানানো হয়েছে যাতে আমি পৃথিবীর মানুষের কাছে তার বার্তা পৌছে দিতে পারি।পৃথিবীতে এই হানাহানি, যুদ্ধ, অন্যায়, লোভ লালসার মূল কারন হলো মানুষের মধ্যে সৌন্দর্যের অভাব।মানুষ যদি সৌন্দর্য চিনতো সুগন্ধ চিনতো তাদের ভেতর পাপ করার প্রবনতা কমে যেত।আমি তাদের সঠিক বার্তা দিয়ে যাই। কেউ শোনে আবার কেউ শোনেনা।কিন্তু আমি আমার কাজ করে যাই।তিন হাজার বছর ধরে এই কাজই করে যাচ্ছি আমি।দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা ছাড়াও আমাকে আরও অনেক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যা পৃথিবীর কেউ বিশ্বাস করবেনা।আমার ঘুমের দরকার নেই, খাবারও তেমন প্রয়োজন নেই, পিপাসাও তেমন পায়না।আমার বিয়ে করার প্রয়োজন নেই অথচ আমি যদি চাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারীকেও এনে আমার সামনে দাঁড় করাতে পারি, তাকে দিয়ে যে কোন কাজ করাতে পারি।কিন্তু যে শারিরিক তৃপ্তির জন্য আমি তাকে আনবো তা দেবী আমাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই দান করেন তাই নারীর শারিরিক সাহচর্যের দরকার হয়না।এটা আপনার কল্পনার বাইরে।আর দেবীর দেয়া এই শারিরিক তৃপ্তির কাছে পৃথিবীর সব তৃপ্তি ম্লান, অসহায়।তাই বলে ভাববেন না যে দেবী সরাসরি আমার বিছানায় আসেন। এটা ভাবাও পাপ।আমার প্রয়োজনের মুহুর্তে আমি সেই আনন্দ স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুভব করতে পারি যতোক্ষন চাই।আমি না ঘুমিয়ে ঘুমন্ত, না খেয়েও খুধা নিবারিত, না পান করেও আকন্ঠ তৃপ্ত, কোন নারীসঙ্গ ছাড়াও নিবৃত্ত।এটা বোঝার মতো শক্তি এই মুহুর্তে আপনার নেই।এর বিনিময়ে আমি দেবীর বার্তাবাহক হয়ে কাজ করে যাই। যেখানে দেখি পাপ, পংকিলতা সেখানে ছুটে যাই, মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করি কোনটা ঠিক কোনটা ভুল।এসব কথা বললে মানুষ আমাকে মারতে আসে।যারা পংকিলতায় ঢুবে আছে তারা কি সহজে আমার কথা বিশ্বাস করবে?অনেকেই হত্যা করার জন্য চেষ্টা করেছে আমাকে।তারা দা তলোয়ার দিয়ে কুপিয়েছে আমাকে, পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে আমাকে, বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা করেছে, ঘোড়া ছুটিয়ে দিয়েছে আমার ওপর দিয়ে।কোন লাভ হয়নি,পরে আমার অপরিসীম ক্ষমতা দেখে তারা হার মেনে নিয়েছে।গ্রহন করেছে দেবীর বশ্যতা।দেবী যাকে বর দিয়েছেন তাকে কি হত্যা করা যায়?আমি অমর।পৃথিবীর সব কিছু ধ্বংশ হয়ে যাবে কিন্তু আমি থাকবো।হ্যাঁ, এবার আসল কথায় আসি।আমাদের ধর্মে পাপ কি।আমাদের ধর্মে কোন পাপ নেই।হত্যা ছাড়া যা কিছুই করেন তা সহজেই আমরা মেনে নেই।আর দেবীর উপাসনা করতে হবে সপ্তাহে একবার।তাহলে আপনার মনে কোন পাপ জন্ম নেবে না।কিন্তু সমস্যা এক জায়গাতেই।সেটা হলো ঈশ্বরের উপাসনা করা যতোটা সহজ দেবীর উপাসনা তত সহজ নয়।বিশেষ করে যদি সে হয় সৌন্দর্যের দেবী।আপনি পুরুষ তাই আপনার ইচ্ছে হবেই তাকে দেখার।একদিন না একদিন তাকে আপনি দেখতে চাইবেন।আর এই চাওয়াটা আসে আপনার মনের গোপন পংকিলতা থেকে। একসময় আপনারও ইচ্ছে হবে এই অপরিমেয় সৌন্দর্যের অধিকারিনীকে দেখার।আর তখনই পাপের আধার পূর্ন হয়ে যায়।কামনার দৃষ্টিতে আপনি যখন একজন উপাসক হয়ে দেবীকে খুঁজবেন তখন সেটা হবে বর্ননাতীত পাপ।এই লোকগুলো সেই পাপ করেছিল।এদেরকে দান করা হয়েছিল অমরত্ব আর অসীম আনন্দের জীবন, কিন্তু তা তারা পরিহার করে দেবীর রূপের সাগরে ঢুব দিতে চেয়েছিল।এর প্রতিদানে এরা এখন সবাই মারা যাচ্ছে।আর এটা তাদের পাপের ফল, এখানে আমি আপনি সবাই অসহায়।দেবীর কোন রাগ বা প্রতিহিংসা নেই।তিনি অসীম ধৈর্যশীলা।তিনি চেষ্টা করেছেন এদেরকে ফিরিয়ে আনতে।আমাকে পাঠিয়েছেন এদের কাছে।আমি গত একশো বছর ধরে চেষ্টা করেছি কিন্তু কাজ হয়নি।এরা দেবীর রূপ দেখার চেষ্টা করেছে একশো বছর ধরে প্রতিদানে তাদের এই অবস্থা।ডোরিনিয়ার রূপ ঈশ্বর ছাড়া কেউ দেখতে পায়না বা দেখতে পারেনা।তার রূপ সহ্য করার ক্ষমতা মানুষের ইন্দ্রিয়ের নেই।তাই সে চেষ্টা না করাই ভাল।’
বোবার মতো তাকিয়েই আছি আমি গৌরের দিকে।খেয়ালই নেই কখন রাত হয়ে গেছে।কিন্তু কি আশ্চর্য্য, এই অন্ধকারের ভেতর তাকে দেখতে পাচ্ছি আমি একেবারে পরিস্কারভাবে যেন সুর্যের আলোর নিচে দাঁড়িয়ে আছে লোকটা।আমার ঠোঁটদুটো তখনও আঠা দিয়ে বন্ধ করা।চেষ্টা করলাম, নাহ পারা যাচ্ছেনা।কথা বলার কোন শক্তি নেই আমার তখনও।গৌর বললো,‘এখন কাজের কথায় আসি।পৃথিবীতে যতো ঘটনা ঘটে তা স্বয়ং ডোরিনিয়া জানেন।তিনিই ভাগ্য নিয়ন্ত্রক, তিনিই বিধাতা।তিনি মানুষকে পছন্দ করেন, তিনি নির্ধারন করেন কে কোন ভুমিকায় অবতীর্ন হবে। তিনিই আপনাকে পছন্দ করেছেন একজন বার্তাবাহক হিসাবে, অনেকটা আমারই মতো।তাই তার ইচ্ছাতেই আপনি এই অঞ্চলে এসেছেন, তার ইচ্ছাতেই আমি এখানে এসেছি আপনাকে সব খুলে বলার জন্য।আপনি যদি চান তবে আপনি আমার মতো হতে পারবেন।আমার মতো হাজার হাজার বছর বেঁচে থাকবেন পৃথিবীতে।পাবেন আমারই মতো ক্ষমতা।আপনি কি তা পেতে চাননা?’ 
ঠোঁট নাড়লাম।হ্যাঁ মুখ নাড়তে পারছি আমি!কথা বলতে পারছি!আমার ভেতর প্রবল এক আনন্দ, যেন লটারীর টিকিট পেয়েছি আমি।আমি তো নাস্তিক, আমার ধর্মে কোন বিশ্বাস নেই।কিন্তু এই বিষয়টা অন্যরকম।এই ধর্মটা আলাদা।এখানে সপ্তাহে একদিন ডোরিনিয়াকে ডাকতে হবে।বিনিময়ে আমি পাবো অসীম ক্ষমতা, অমরত্ব!কোন কিছু চিন্তা না করেই বললাম,‘রাজী না হবার কোন কারনই নেই।’
‘এটা আপনার সৌভাগ্য যে আপনাকে ওদের মতো শুধু উপাসক হতে হয়নি।আপনাকে সে একজন ম্যাসেঞ্জার হিসাবে পছন্দ করেছে, উপাসকদের অনেক ওপরের আসন হলো বার্তাবাহক।আপনি সরাসরি ডোরিনিয়ার কাছ থেকে নির্দেশ পাবেন।কি করতে হবে, কখন করতে হবে সব সেই আপনাকে বলে দেবে।কিভাবে সে বলবে সেটা আপনি নিজেই দেখতে পাবেন।শুধু আপনাকে আমার সামনে হ্যাঁ বলতে হবে।একটা শব্দই বলবেন “হ্যাঁ”।
‘হ্যাঁ।’ জোরে বললাম আমি।মনে হলো বেশী জোরেই বলে ফেলেছি।আমার আর তর সইছিলো না।
গৌর হাসলো।খুব সুন্দর হাসি।‘তবে হ্যাঁ, ঠিক আজ থেকেই আপনি সব শক্তি পাবেননা, যেদিন আপনার চল্লিশ বছর পূর্ন হবে ঠিক সেদিনই আপনি পাবেন এই ক্ষমতা।আমার আর কোন ভুমিকা নেই আপনার আর দেবীর মাঝখানে।আজ থেকে আমি মুক্ত।গত বারো বছর ধরে দেবীর নির্দেশ পেয়েছি আপনার ব্যপারে।বারো বছর ধরেই অপেক্ষায় আছি আপনি কখন এখানে আসবেন।আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি।এবার আমি চলে যাবো।আরেকটা কথা, এই এলাকা অনেক শ্বাপদ সংকুল। তবে কোন ভয় পাবেন না।কেউ কিছুই করতে পারবেনা আপনার।আজ থেকে আপনার সকল ভাল মন্দ সব ডোরিনিয়ার হাতে।তিনি ছাড়া আপনার ক্ষতি করতে কেউ পারবেনা।আমি চললাম।হয়ত: আবার কোন একদিন পথ পরিক্রমায় আপনার সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে। আসি।’
গৌর চলে গেল অন্ধকারের ভেতর।ঘুটঘুটে আঁধারের ভেতর একা আমি দাঁড়িয়ে রইলাম।আমার কাছে কোন আলো নেই, তখনও টর্চ জিনিষটা আবিস্কার হয়নি।মানুষ মশাল জ্বেলে পথ চলতো। তবে বিষম বিশ্ময়ের সাথে দেখলাম যে আমি অন্ধকারে পথ চলতে পারছি! চোখের সামনেটা পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।একটু পরেই পুরোপুরি দেখতে পেলাম সবকিছু।মনে হচ্ছে একেবারে দিনের আলোয় দাঁড়িয়ে আছি আমি।বুঝতে পারলাম মহাক্ষমতাবান ডোরিনিয়ার একজন বার্তাবাহক হিসাবে শপথ নিয়ে ফেলেছি আমি।আমার এখন অসীম ক্ষমতা।’

(চলবে........)

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট
প্রিয়ন্তি রহমান, টাঙ্গাইল
November 8, 2020 at 4:20 PM

মনে হচ্ছে সিনেমা দেখছি এতটাই জীবন্ত গল্প। তারপরের গল্পে যান প্লিজ। ডোরেনিয়া ডোরেনিয়া! অন্যরকম প্লট। i love dorenia

Reply
avatar
মনোজ কুমার সন্ত
November 8, 2020 at 5:17 PM

স্যার, পরের পর্বের লেখাটা একটু তাড়াতাড়ি দিন। এমন একটা লেখা যে তর সইছেনা। একটানে পুরোটা শেস করতে চাই। দয়া করে বাকিটা এক পর্বে দেবেন।

Reply
avatar
Nazmul Hasan
November 8, 2020 at 5:18 PM

ডোরেনিয়া কি সত্যিই কোন দেবী নাকি এটি কেবল ফিকশন? জানাবার অনুরোধ রইল। বাকি পর্ব তাড়াতাড়ি দেবেন।

Reply
avatar
নাহিদা মুনা
November 8, 2020 at 10:03 PM

অসম্ভব রকম অপার্থিব একটা গল্প। দ্বিতীয় খন্ড পড়ে বলছি। এর চেয়ে সুন্দর গল্প আর কি হবে?

Reply
avatar
Anonymous
November 8, 2020 at 10:05 PM

আমি স্তব্দ। পরের খন্ড কই?

Reply
avatar
আয়মান নুর
November 8, 2020 at 10:08 PM

মডেল অত্যন্ত রূপবতী ও সেক্সী।

Reply
avatar
মেহজাবীন
November 9, 2020 at 11:03 AM

ওরে বাবা কি গল্প! পরের খন্ড চাই তাড়াতাড়ি

Reply
avatar
তুহিন রহমান
November 9, 2020 at 11:05 AM

ধন্যবাদ। পরের পর্ব পড়ুন।

Reply
avatar
November 9, 2020 at 3:30 PM

2to khonder lekhai khub valo..bes anyorokom lekhoni..valo laglo.

Reply
avatar