শেয়াল ও ইশ্বরের ঘুম.................তুহিন রহমান

এটা একটা স্বপ্নে পাওয়া গল্প..... 
প্রচন্ড জ্বরের ঘোরে এই গল্পটা আমার মাথায় চলে আসে গভীর রাতে,
জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে বারবারই গল্পটা  ঘোরে মাথার ভেতর,
তাই সকালে উঠেই লিখতে বসে গেলাম জ্বর উপেক্ষা করে।

ক্ষ কোটি বছর আগে মহাশূন্য ছাড়া আর কিছুই ছিলনা। ছিলনা পৃথিবী বা গ্যালাক্সি বা কোন গ্রহ নক্ষত্র। ছিল শুধু স্বর্গ নরক আর ইশ্বর। যেহেতু কোন গ্রহ নেই তাই কোন প্রানের অস্তিত্বও ছিলনা কোথাও। শত শত কোটি বছর ধরে স্বর্গ নরক নিয়ে কাজ করতে করতে ইশ্বরের ঘুম পায়। কিন্তু সে কি সম্ভব? এতো দায়িত্ব ফেলে কি ঘুম দেয়া যাবে? ইশ্বর বসে বসে ভাবতে লাগলেন কি করা যায়। এদিকে তার চোখ ঘুমে ঢুলঢুল করছে। কোন উপায় না দেশে তিনি এক বুদ্ধি বের করলেন। তার এক সমকক্ষ তৈরি করতে হবে যে তার ঘুমের সময় তার হয়ে দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু আরেকটা ইশ্বর বানালে সে যদি আবার ঘুমের মূহুর্তে সব দখল করে বসে? এই চিন্তাও তার মাথায় ঘুরতে লাগলো। শেষ মেষ ভেবে চিন্তে তিনি তার ক্ষমতা দিয়ে এক শিয়াল তৈরি করলেন। সেই শিয়ালকে নিজের সব ক্ষমতা দান করলেন। ঘুমের সময় এই শিয়াল তার হয়ে স্বর্গ নরক সব দেখা শোনা করবে। সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত দিলেন না ইশ্বর, শিয়ালটাকে অন্ধ করে দিলেন যেন কোন কুবুদ্ধি তার মাথায় না আসে। আর আসলেও অন্ধত্বের কারনে সে কিছুই করতে পারবেনা।

অন্ধ শিয়ালকে স্বর্গের বাগানে বেঁধে রেখে ইশ্বর চললেন ঘুমোতে। এদিকে অন্ধ শিয়াল কোটি কোটি বছর ধরে স্বর্গ নরক পাহারা দিতে লাগলো। বিরক্তি কি জিনিষ সেটা ইশ্বর তার ভেতর দেননি বলে সে নিশ্চিতে কাজ করতে থাকে। কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দেয়। স্বর্গের বাগান থেকে কিসের গন্ধ যেন তার নাকে আসতে থাকে। এমনই মোহনীয় গন্ধ যে সে খোঁজার চেষ্টা করে কিন্তু অন্ধত্বের কারনে বারবারই ব্যর্থ হয়। নাক তো আর চোখের কাজ করতে পারেনা। কোথায় এমন মোহনীয় গন্ধের উৎস আছে সেটা বের করতে পারেনা বেচারা ক্ষমতাবান শিয়াল। কয়েক কোটি বছর অপেক্ষা করার পর শিয়াল একটা সিদ্ধান্ত নেয়। সে তার ক্ষমতা খাটিয়ে গন্ধের উৎসকে তার সামনে আসার হুকুম করে। আর তখনই কি যেন তার নাকের সামনে দুড়ুম করে পড়ে। চমকে ওঠে শিয়াল। মোহনীয় গন্ধটা একেবারে নাকের সামনে চলে এসেছে এবার। মনে হচ্ছে সুস্বাদু কোন ফল টল হবে। শিয়াল নাক দিয়ে গন্ধের উৎসটাকে খোঁজার চেষ্টা করে। তার নাক পড়ে ডুমো ডুমো কিছুর ওপর। ধারালো কোন কিছু। ভেতর থেকে সুস্বাদু ফলের গন্ধ তাকে পাগল করে দেয়। কিন্তু ফলের ওপরের প্রান্ত ধারালো শক্ত শক্ত কিছুর তৈরী যেকারনে তার দাঁতও বসতে চাইছে না। কয়েকবার চেষ্টা করার পরও ফলটা ভাঙতে ব্যর্থ হয় শিয়াল। আর সেই কারনে প্রচন্ড রেগে যায় ইশ্বরের ক্ষমতায় তৈরী শিয়াল। রেগে গিয়ে সে ফলটাতে সজোরে লাথি মারে। আর বেচারা কাঁঠাল শিয়ালের এক লাথিতে স্বর্গের বাগান টপকে চলে যায় মহাশুন্যে। আর বিদীর্ন হয়ে তার কোষগুলো ছিটকে বেরিয়ে পড়ে, আর একটি আরেকটির কাছ থেকে সরে যেতে থাকে মহাশূন্যের অন্ধকারে। এভাবে কোটি কোটি বছর ধরে কাঁঠালের কোষগুলো মহাশূন্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। একসময় সেগুলো পচে যায় এবং সেখানে জন্ম নেয় সবুজ ছত্রাক। সেই সবুজ ছত্রাক থেকে জন্ম নেয় পোকা। সেই পোকার পর আসে নানা ধরনের প্রানী, টিকটিকি, গিরগিটি, সাপ, ব্যাঙ, কুমির, ডায়নোসর এবং সবশেষে মানুষ নামের ভয়ংকর এক দানব। এই দানব এসে পশুপাখি মেরে খেতে থাকে, একে অন্যের সাথে ঝগড়া বিবাদ খুনোখুনিতে লিপ্ত হয়, কেটে ফেলে গাছ গাছালি, পাহাড়। নিজেদের সেরা সৃষ্টি বলে প্রচার করতে থাকে। শক্তিশালী মানুষ দুর্বল প্রজাতীর মানুষদের ওপর নির্যাতন চালায়। দুর্বল প্রজাতীর মানুষরা দলে দলে ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে থাকে বাঁচার জন্য। কিন্তু ওদিকে ইশ্বর তো ঘুমিয়ে কাদা। তার নাক ডাকার শব্দে কাঁপছে স্বর্গ নরক। মানুষ তাকে ডাকতেই থাকে সুবিচার পাওয়ার জন্য, পশুকুলও মানুষের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রার্থনা করতে থাকে ইশ্বরের কাছে। কারো ডাকেরই জবাব দেননা ইশ্বর। কোটি কোটি বছর ধরে তিনি ঘুমোচ্ছেন আর ঘুমোচ্ছেন। আর তাই পৃথিবীতে এতো হিংসা বিদ্বেষ মারামারি সংঘাত হত্যা ধর্ষন আর অনাচার। বিচার করবেন যিনি তার ঘুম ভাঙার প্রত্যাশায় তাকিয়ে থাকে সৃষ্টিকূল। কিন্তু ইশ্বরের ঘুম তো ভাঙেনা। যেদিন তার ঘুম ভাঙবে সেদিন হয়ত আমরা তার নিকট থেকে সুবিচার পাবো।

গল্পটি একেবারে স্বরচিত। কোন বিদেশী গল্পের অনুবাদ বা ছায়া অবলম্বন নয়। 

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট
শায়লা বারী
November 2, 2020 at 1:06 PM

বাহ অভিনব একটা রূপকথা তো!

Reply
avatar
November 2, 2020 at 3:43 PM

ঈশ্বরের ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষায় আছি😁

Reply
avatar
Mns Nazmul Jubayer
November 2, 2020 at 3:53 PM

marvellous

Reply
avatar
Shahana Zabeen simi
November 2, 2020 at 3:57 PM

মজা পেলাম।

Reply
avatar
তুহিন রহমান
November 2, 2020 at 4:06 PM

আর কবে ভাঙবে? পরজন্মে হয়ত!

Reply
avatar
তুহিন রহমান
November 2, 2020 at 4:16 PM

তাহলে আরেকবার পড়ো।

Reply
avatar
Anonymous
November 2, 2020 at 4:19 PM

এটা আপনার নিজের লেখা তুহিন ভাই? আপনার তো এ্যাওয়ার্ড পাওয়া দরকার।

Reply
avatar
Nazmul Hasan
November 2, 2020 at 5:39 PM

ঠাকুর মার ঝুলি ফেইল

Reply
avatar
Anonymous
November 2, 2020 at 6:33 PM

আপনার কা‌ছে এমন লেখা আশা ক‌রি‌নি তু‌হিন ভাই। বি‌শেষ ক‌রে মা‌নিক চৌধুরীর ভেত‌রের প্র‌তিভা এতো বড় ভুল ক‌রে কীভা‌বে? অনে‌ককেই দেখলাম প্রশংসা কর‌তে। তাঁরা যে আপনার গ‌ল্পের ওপরটা প‌ড়েই প্রশংসা কর‌ছেন তা বুঝ‌তে বা‌কি নেই। আপ‌নি স্ব‌প্নেই দেখুন বা জাগর‌ণে, আপ‌নি গ‌ল্পের ছ‌লে সৃ‌ষ্টিকর্তার সমকক্ষ দাঁড় ক‌রি‌য়ে‌ছেন যা প‌রিষ্কারভা‌বে শিরকের পর্যা‌য়ে প‌ড়ে। শুধু তাই নয়, প্রকারান্ত‌রে সৃ‌ষ্টিকর্তার ক্ষমতা‌কে খা‌টো করার চেষ্টা ক‌রে‌ছেন। বাক স্বাধীনতা মা‌নে তো এমন নয় যে, যা খু‌শি তাই বল‌বো বা লিখ‌বো। কথা বলার সময় বা লিখার সময়ও লেখক‌কে অনেক বিষয় হি‌সে‌বে রাখ‌তে হয়। কোন্ কথায় ঈমান চ‌লে যে‌তে পা‌রে, সে ব্যাপা‌রে ম‌নে হয় সতর্ক থাকা দরকার। কারণ ঈমান শুধু অন্ত‌রে বিশ্বা‌সের নাম নয় বরং বিশ্বা‌সের সা‌থে সা‌থে মু‌খে স্বীকৃ‌তি ও ক‌র্মে প্র‌তিফল‌নের নাম। বিশ্বাস ক‌রি, এ গ‌ল্পের থিম আপনার কল্পনা থে‌কে আসে‌নি বরং শয়তান প্র‌তি‌নিয়ত মানুষ‌কে ঈমানহারা করার জন্য যে প্র‌ক্রিয়া চলমান রে‌খে‌ছে তারই প্রভা‌বে এ গ‌ল্পের প্লট তৈ‌রি। ভুলবশতও য‌দি কখ‌নো শির‌কের ম‌তো বড় পাপ হ‌য়ে যায় তাহ‌লে করণীয় কি, তা নিশ্চয়ই আপনার জানা আছে। য‌দি জানা না থা‌কে তাহ‌লে জে‌নে নি‌বেন অনুগ্রহ ক‌রে। আপনার কা‌ছে কালজয়ী সব লেখা চাই যা কাউ‌কে আঘাত কর‌বে না বরং তার ম‌ধ্যে শিক্ষণীয় প্রচুর উপাদান থাক‌বে। আমার কথায় কষ্ট পে‌লে ক্ষমা ক‌রে দি‌বেন। আল্লাহ আমা‌দের সকল‌কে ক্ষমা করুন ও হেদা‌য়েত দান করুন।

Reply
avatar
November 2, 2020 at 7:08 PM

এককথায় অসাধারণ।

Reply
avatar
November 2, 2020 at 7:50 PM

বর্তমানে আমরা প্রকৃতির সংরাগের খেলাঘরে চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে। ঈশ্বর,আল্লাহ্,যীশু হয়ত আছেন আমাদেরই মাঝে,"ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুর অন্তরে"আর আমাদের সুপ্ত চেতনা তাকে খুঁজে চলেছে প্রতিনিয়ত.....এখানে ঈশ্বর বোধ হয় সেই কালজয়ী শক্তি। যার ঘুম কখনো ভাঙে মদনভষ্ম হয়ে,কখনো উর্বশীর নৃত্য ছন্দে,আবার কখনো আমাদের ডাকে...সেই আহ্বান কখনো অভিমানের,কখনো ভরসার,কখনো ভক্তির...

Reply
avatar
November 2, 2020 at 7:59 PM

আপনার লেখা সবসময়ই অসাধারণ। এক নিঃশ্বাসে পড়ে নেয়া যায়। গল্পের বিষয় নিয়ে কিছু বলবো না। লেখকের স্বাধীনতা আছে,থাকবে। পাঠকেরও স্বাধীনতা আছে থাকবে।

Reply
avatar
November 2, 2020 at 9:41 PM

জনাব Annonymous,আপনি কি মনসুর আল হাল্লাজের কথা শুনেছেন, যিনি বলেছিলেন আয়নাল হক বা আমি খোদা। তিনি সৃষ্টিকর্তার সাথে এক হয়ে মিশে যাবার জন্য এ কথা বলেছিলেন। সেটা শিরক হয়নি। আর বর্তমান পৃথিবীতে কর্মহীন ধর্মহীন যুক্তিহীন মোল্লাদের জন্য এত বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে মুক্তমনারা যে মুক্তমনা খুঁজতে তাদেরকে বাথরুমের ভেতরেও উঁকি দিতে হয়।

Reply
avatar
Anonymous
November 2, 2020 at 10:02 PM

আল্লাহ আপনা‌কে হেদা‌য়েত দান কর‌ুন। অবশ্যই যার যার কর্মফল সেই-ই ভোগ কর‌বে। আমার কা‌ছে ম‌নে হ‌য়ে‌ছে, ভুলটা ধ‌রে দেয়া দরকার, দি‌য়ে‌ছি। মানা, না মানা আপনার ব্যাপার।

Reply
avatar
তুহিন রহমান
November 2, 2020 at 10:15 PM

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ সেমন্তী। ওদের কাছে রূপকথাও অধর্ম। তোমার কথাগুলোর টার্গেট অব্যর্থ। অত্যন্ত সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছ তাকে। annonymous হলেও তাকে কিছুটা চেনাচেনা মনে হচ্ছে।

Reply
avatar
তুহিন রহমান
November 2, 2020 at 10:20 PM

অবশ্যই ভাই। লেখক যদি সংকীর্ণমনা হয়, নিজেকে পাতালপুরীর অন্ধকারে ডুবিয়ে রেখে লিখতে চায় তাহলে কি লেখক হল? আপনার লেখাও অনেক সুন্দর। সুন্দর কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।

Reply
avatar
মাহতাব উদ্দিন, মিন্টু রোড, রমনা ঢাকা
November 2, 2020 at 10:43 PM

ভাই তুহিন রহমান, আমি পুলিশ বিভাগে বর্তমানে ডিবিতে কর্মরত রয়েছি। আপনার লেখা যথেষ্ঠ শক্তিশালী এটা নিশ্চিত। খুবই ভালো লাগে আপনার লেখা। কারো কথায় ভয় পেয়ে লেখা যেন বন্ধ করবেন না। অনেকে হুমকিও দিতে পারে। আমাদের জন্য অপরাধীকে ট্রেস করা এক মুহুর্তের ব্যাপার। এখানেও দেখলাম আপনার অসাধারণ সুন্দর রূপকথার বীপরিতে সে তার সংকীর্ণমনা বক্তব্য পেশ করেছে। এটা কোন ব্যাপার নয়। সহযোগিতা লাগলে জানাবেন।

Reply
avatar
রুমি নরসিংদি বাগান বাড়ী
November 3, 2020 at 8:57 AM

মাহতাব ভাই আপনার লেখা পড়ে আনন্দিত হলাম। খানকির পোলা annonymous তোর লেখা পড়ে মনে হয় তুই পৃথিবীতে ইশ্বরের এজেন্সি নিয়ে বসে ব্যবসা করছিস। তোর মত খানকির পোলাদের কারনে আজ লেখকরা লিখতে ভয় পায়। ব্লগাররা দেশ ছেড়ে চলে যায়। কই ইশ্বর তো কিছু বলেন না, তোরা চিল্লাস ক্যান? ও চোরের মায়ের বড় গলা। খানকির পোলা annonymous তোর মায়েরে আমি চুদি।

Reply
avatar
পুরান ঢাকাইয়া পোলা আশিক
November 3, 2020 at 7:50 PM

শালা annonymous নিজের নাম দিয়ে লেখ। তোর পরিচয় জানি তারপর তোকে তামিল দেই। পুরো দেশটা এই ধরনের মানুষে সয়লাব হয়ে গেছে। কুত্তায় পায়খানা করলেও এদের ইমান যায়। এই শালাদের সব কয়টাকে ধরে সৌদি আরব পাঠান দরকার। এরা বাংলায় কেন? এই শালাদের কারনে বাংলাদেশে করোনা ছড়াইছে।

Reply
avatar
আল আমিন মাজদারী
November 3, 2020 at 10:37 PM

ভাই মুখ খারাপ না করে ওই লোকটাকে খুঁজে বের করুন। এই ধরনের লোকগুলো সাহিত্য তো বোঝেই না বরং কমেন্ট করে মন মেজাজ নষ্ট করে দেয়। তার তো থাকা উচিত ছিল মসজিদে বসে তফসির করা। তা না করে এইখানে সে কি করে? পর্ন সাইটে সে কি করে? গোপনে পর্ন মুভি দেখে আর প্রকাশ্যে ইমানদার সাজে। এই বর্তমান পৃথিবীর মুসলমান সমাজব্যবস্থা।

Reply
avatar