এ সময়টাতে রিক্সা পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। সকাল নটা থেকে দশটা সাড়ে দশটা এগারোটা পর্যন্ত রাস্তায় সব ধরনের কর্মজীবিরা নেমে আসে ফলে রিকশা কিংবা সিএনজি পাওয়া খুবই দুষ্কর। দেরি হলে ক্লাশ মিস হয়ে যাবে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়লো অনুরাধা ব্যানার্জী।ঠিক দশটা চল্লিশে ক্লাশ শুরু,উদ্বিগ্ন হয়ে এদিক ওদিক দেখলো একটা রিকশাও খালি নেই এদিকে দশটা পনের বাজে হঠাৎ মাথায় ঢুকলো পাঠাওয়ের মোটরসাইকেলের কথা কদিন আগে ওর ক্লাশফ্রেন্ড মলির কাছে শুনেছিল সে মাঝে মাঝে পাঠাও এর মোটর বাইকে ভার্সিটিতে আসে।সেদিনই অনুরাধা পাঠাও এ্যাপটি ডাউনলোড করে নেয়,ভাবলো এসময় কি আর বাইক ফ্রী থাকবে তাছাড়া ভাড়া বাইকে চড়তে ওর সঙ্কোচ বোধ হয় ভয়ও লাগে কি জানি কে কি মনে করে কিংবা কোন বিপদে পড়ে যায় কিনা।আজ সে উপায়ান্ত না দেখে কল করলো এবং প্রায় সাথে সাথে কল পেল ওপাস থেকে বললো আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আসছি।ঠিক সাত মিনিটের মধ্যেই মোটরবাইক চলে এলো বললো হেলমেটটা পরে নিন স্পষ্ট আকর্ষনীয় স্বর শুনে মন্ত্রমুগ্ধের মত দুপা একদিকে দিয়ে বাইকারের পেছনে বসলো,বাইকার এবার সেই একই স্বরে বললো প্লিজ দু'দিকে পা দিয়ে বসেন পুলিশ ঝামেলা করে অনুরাধা ইতস্তত করছে দেখে বাইক চালক বললে ঠিকাছে একদিকেই পা দিয়ে বসেন অনুরাধা দু'পা একদিকে দিয়ে বসে পড়লো ঠিক ক্লাশের দশ মিনিট পূর্বেই ক্যাম্পাসে চলে এলো।নেমেই বললো কত দিতে হবে চালক মুচকি হেসে বলে কেন ম্যাডাম এ্যাপসেতো ভাড়া শো করছে দেখে নিন আর আমাকে একশো দশ টাকা দিন।অনুরাধা সরি আমি এখনো অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি তাই দেখা হয়নি।একটা দুশো টাকার নোট বের করে দিলো।চালক বহু কষ্টে মানিব্যাগ এবং এ পকেট ও পকেট হাতড়ে ভাংতি বের করে নব্বই টাকা ফেরত দিলো।অনুরাধা ভেবেছে পঞ্চাশ টাকা ফেরত দিলেই হবে কিন্তু পুরো নব্বই টাকা ফেরত দেওয়াতে অবাকই হয়ে বললো আমাকে পঞ্চাশ টাকা দিন বাকিটা রেখে দিন চালক আবারো মৃদু হেসে দৃঢ় কন্ঠে বলে ম্যাডাম উহু এটা আমি নেইনা আপনি টাকাটা রাখুন বলে নব্বই টাকাই ফেরত দিলো। অনুরাধা টাকাটা হাতে নিয়েই ছুটতে শুরু করলো আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি আছে অর্থাৎ বেশ দ্রুতই চলে এসেছে,ভাবছে রিক্সায় এলে তিন তিন বার রিক্সা বদল করতে হতো ভাড়া পড়তো একশো কুড়ি টাকা আর সিএনজিতে এলে পুরো দুশো টাকা তবেতো মোটার বাইকে আসা বেশ সাশ্রয়ী।
জুনায়েদ সাইড স্ট্যান্ড নামিয়ে বাইকটাকে কাত করে দাড় করিয়ে হেলমেটটা খুলে মেয়েটির গমন পথের দিকে এক পলক দেখেই তার গলা দিয়ে অপুর্ব শব্দ বের হয়ে এলো ঠিক তখনি আরেকটা কল এলো,বাইক নিয়ে সেদিকে চলে গেল জুনায়েদ।
কিরে রাধা কার বাইকে এলি শুরু হয়ে গেল নাকি?ছেলেটা বেশ হ্যান্ডসাম কেমনে কি খুলে বল দেখি। ধ্যাত কি শুরু করলি ওতো পাঠাওয়ের বাইক চালক দ্রুত আসার জন্য ভাড়ার বাইকে চলে এলাম।ও আচ্ছা বলে রিমি বললো চল ক্লাশে ঐ যে স্যার আসছে।
ক্লাশ শেষে মলির সাথে দেখা মলি সবসময় ক্লাশের সামনের বেঞ্চে বসে ওর বাসা ভার্সিটি থেকে দু কিমি হবে তাছাড়া মলি নিজেদের গাড়িতেই আসা যাওয়া করে ফলে বেশ আগে আগেই ক্লাশে এসে সামনের বেঞ্চে বসতে পারে এমনিতেই মলি দারুণ স্মার্ট ও ভার্সাটাইল,ভার্সিটির যে-কোন কার্যক্রমে তাকে থাকতেই হবে।এদিকে অনুরাধার বাসা বেশ দূরে থাকায় ওর আসতে প্রায়ই দেরি হয়ে যায়
ফলে তাকে পেছনের বেঞ্চেই অধিকাংশ সময়ই বসতে হয়।আজ ক্লাশ শেষে অনুরাধা পেছন থেকে এসে মলিকে জড়িয়ে ধরতেই মলি তাকে প্রশ্ন করে কিরে রাধা কি শুনলাম? রাধা অবাক হয়ে মলিকে বলে কেন কি হয়েছে? খুলে বল। শুনছি তুই নাকি কারো প্রেমে পড়ে তার বাইকে ঘুরছিস? অনুরাধা হো হো করে হেসে উঠে বললো তুই যেমন মাঝে মাঝে প্রেমে পড়িস তেমনি। ও আচ্ছা তাহলে এই বিষয় এদিকে ক্লাশের সবার মুখে রটে গেছে তুই প্রেমিকের বাইকে ঘুরসিছ হা হা হা!
মলি অনুরাধার বেস্ট ফ্রেন্ড দূজনে দু'জনার মনের কোনের সব কথাই শেয়ার করে এরা দু'জন ছাড়াও রিমি ছন্দা আলিশা শোয়েব রুপম এরাও ওদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তবুও মলি আর অনুরাধার ঘনিষ্ঠতা সবারই জানা।ক্লাশ শেষে খানিকটা আড্ডা মেরে ওরা ফিরে গেল।
পরদিন একই অবস্থা রিক্সা সিএনজি কোনাটাই খালি পাওয়া যাচ্ছে না আজ মনে হয় আরো ভিড় বেশি, আজ অনুরাধা সাড়ে ন'টায় বের হয়েছে তাই ভাবলো রিক্সা নেবে কিন্তু একটা রিক্সাও খালি নেই একটু দূরে একটা খালি রিক্সা দেখে ডাক দিতেই আরেক ভদ্রলোক লাফ দিয়ে চড়ে বসলো কি আর করা আবার অপেক্ষা কিন্তু যেই প্রায় দশটা বাজে বাজে অবস্থা তখনি তার হুঁশ হলো ফলে আজো পাঠাওয়ের শরণাপন্ন হলো একটু পর কল দিলে দু'মিনিট আমি আসছি আপনি কি কৃষ্ণ চুড়া গাছের নিচে আছেন?জি আমি ওখানেই আছি। ঠিক দু মিনিটের ভেতর বাইক হাজির,ম্যাডাম হেলমেটটা পরে নিন।কোন কথা না বলেই হেলমেট মাথায় দিয়ে পেছনে বসে পড়লো অনুরাধা সময়ের বেশ আগেই পৌছে গেল ক্যাম্পাসে বাইক থেকে নেমেই মোবাইলে এ্যাপস দেখলো একশো তিন টাকা সে ব্যাগ থেকে একশো তিন টাকাই বের করে চালকের হাতে দিয়েই ছুটলো ক্লাশের দিকে বাইক চালক আজ আর না থেমেই ঘুরিয়ে চলে গেল।অনুরাধা যখন বাইকে উঠে তখনই বুঝেছিল এ লোকটাই গতকালের একই চালক।এভাবেই কয়েকদিন একই মোটর বাইকে যাবার পর অনুরাধার মনে হলো প্রতিদিন একই চালকের বাইকে চড়া ঠিক হচ্ছে না।পরেরদিন সকাল সকাল বের হয়ে একটা সিএনজি নিয়ে ভার্সিটিতে চলে এলো।
আজো কোন কল না পেয়ে জুনায়েদ ভাবলো মেয়েটির কি কোন অসুখ হলো! ভেতরে ভেতরে অস্থিরতা অনুভব করছে সে। এভাবেই তিনটে দিন কেটে গেল চতুর্থ দিনে জুনায়েদ মেয়েটির কল না পেয়ে নিজেই কল করলো মেয়েটি ইতস্তত করেও কলটি ধরলো।নাম্বারটা অনুরাধার মুখস্থই হয়ে গেছে ও বুঝতে পেরেও জিজ্ঞেস করলো কে বলছেন
-আমি পাঠাও এর বাইক চালক
-ও আচ্ছা আমিতো ভার্সিটিতে চলে এসেছি
-ও কাল কি যাবেন?
-কালকের বিষয় কালকে আচ্ছা প্রতিদিন আপনি একাই আসেন কেন শুনেছি অনেক বাইক রাস্তায় থাকে?
-না মানে আমিতো পাসেই থাকি তাই।
-ও আচ্ছা তবে আপনি কি আর কোন প্যাসেঞ্জার নেন না।
-নিই তবে তিন চারটা এর বেশি না।
ও আচ্ছা ঠিকাছে, বাই।
পরেরদিন রাস্তায় বেরুতে দেরি করে ফেললো অনুরাধা তাড়াতাড়ি যাবার জন্য পাঠাওয়ে কল করলো দ্রুতই চলে এলো জুনায়েদ বাইকের পেছনে বসে চলে এলো ভার্সিটিতে। অনুরাধা বাইক থেকে নেমে হাত ঘড়ি দেখলো এখনো পঁচিশ মিনিট বাকি প্রথম ক্লাশের।প্যান্টের পকেট থেকে লম্বা ছয় ইঞ্চি পার্সটা বের করে দুশো টাকার নোটটা বাইক চালক জুনায়েদের হাতে দিলো।জুনায়েদ ইতস্তত করে বললো
-আমার কাছে ভাংতি নেই ঠিকাছে আপনি একশো টাকা দেন।
-আমার কাছেতো একশো টাকার নোট নেই।
-ও ঠিকাছে তাহলে কাল দিবেন।
-আমি কারো কাছে ঋণী থাকতে চাই না।
-ও
-আপনি ভাংতি নিয়ে বের হন নাই?
-আসলে গতকাল বের হয়নি তাই,হাতে যা ছিল খরচ হয়ে গেছে।
-তো দুতিনটে ভাড়াতে আপনার সংসার চলে?
জুনায়েদ তবুও এ পকেট সে পকেট খুঁজতে লাগলো।
-আসলে আমার এত পয়সার দরকার নেই পড়াশোনা শেষে করেছি এখন কাগজপত্র জোগাড় হলেই দেশের বাইরে চলে যাবো। তাই ভাবলাম যে কদিন আছি পকেট খরচটা উঠিয়ে নিই বারবার বাবার কাছে টাকা চাইতে লজ্জা লাগে তাছাড়া বাইরে যেয়েতো অডজব করে চলতে হবে সেই কারণে লজ্জটাকে জলাঞ্জলি দিতে প্রাকটিস করছি।
অনুরাধা তন্ময় হয়ে যুবকটির কথা শুনছে আর মনে মনে প্রশাংসা করছে।অনুরাধা তাকে জিজ্ঞেস করলো
-কোন ভার্সিটিতে পড়েছেন?
-আপনার এই ভার্সিটিতেই।
-বলেন কি কোন সাবজেক্টে?
-মাইক্রোবায়োলজিতে।
-কবে শেষ করলেন?
-এইতো গত বছর।আপনি কোন সাবজেক্টে?
-বিবিএ,ম্যানেজমেন্টে এবার সেকেন্ড ইয়ারে।
-তাহলে যাই আপনি টাকাটা পুরোই রেখে দেন কাল চড়লে শোধ হয়ে যাবে।
-এটা কেমন দেখায় না?
-কি এমন দেখাবে যেহেতু কারো কাছেই নেই তাছাড়া আপনি আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র ভাই একটু সুযোগতো দিতেই হয় মুচকি হেসে আসি বলে হাটা দিলো।দুপা হেটেই ঘাড় কাত করে জিজ্ঞেস করলো আপনার নামটা বলবেন প্লিজ?
-জুনায়েদ।
অনুরাধা আর একমুহূর্ত না থেমে হনহন করে হাটতে লাগলো ওদিকে রিমি মলি ছন্দা অপেক্ষা করছে।
জুনায়েদ টাকাটা নাড়াচাড়া করতে করতে ভাবলো আজ হাজার খানেক টাকার খউব দরকার। টাকাটা পকেটে রেখে বাইক স্ট্রাট দিলো।
অনুরাধা জুনায়েদের সাথে ভাড়া নিয়ে কথা বলছিল যখন, তখন দূর থেকে শোয়েব ছন্দা রিমি অনুরাধার দিকে তাকিয়ে ছিল।অনুরাধা কাছে আসতেই ওকে ছেকে ধরলো কিরে বাইকওয়ালার সাথে এত কথা বলছিলি কি ব্যাপার।নারে উনার কাছেও ভাংতি নেই আমার কাছেও নেই তাই ব্যাগে খুজঁতে খুঁজতে দেরি হলো। ক্লাশ শেষে মলিকে বললো চলতো সাইন্স ফ্যাকাল্টিতে মলি বললো কেনরে যাবি ওখানে?একটু কাজ আছে বলেই হাঁটতে হাঁটতে মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টের অফিসে ঢুকে চেয়ারে বসে থাকা অফিসারকে জিজ্ঞেস করলো গত বছর পাস করে বের হয়েছে এমন স্টুডেন্টের খোঁজ কিভাবে পেতে পারি ম্যাডাম? মহিলাটি বললো এখানেই, কেন? বলেই গত বছরের রেজিস্ট্রার খাতা বের করে জিজ্ঞেস করলো নাম কি? অনুরাধা বললো জুনায়েদ। মলি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অনুরাধার দিকে চেয়ে রইলো।অফিসারটি খাতাটা বন্ধ করে বললো ও জুনায়েদ সেতো দারুণ মেধাবী ছেলে ফার্স্ট ক্লাশ সেকেন্ড হয়েছে অস্ট্রেলিয়ান স্কলারশিপও যোগাড় হয়ে গেছে তাঁর এ ডিপার্টমেন্টের সবারই প্রিয় সে, টিচারদের ফেবারিট স্টুডেন্ট আবার হেভি হ্যান্ডসামও বলে মুচকি হাসি দিয়ে অনুরাধার দিকে চেয়ে বললো বিয়েটিয়ের ব্যাপার নাকি? এরকম ছেলে কিন্তু লাখে একটা হয়। অনুরাধা হ্যা এরকমই বলে তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে মলির হাত ধরে টানতে টানতে বাইরে এলো মলিতো বিশ্ময়ে কিছুই জিজ্ঞেস করতে ভুলেই গেছে যেন।
পরদিন কল দিলেই জুনায়েদ চলে এলো বাইকে উঠতে উঠতেই অনুরাধা জিজ্ঞেস করলো অস্ট্রেলিয়ার কোন ভার্সিটিতে স্কলারশিপ পেয়েছেন?জুনায়েদ বাইক স্ট্রাট দিলেও হ্যান্ডব্রেক চেপে ধরে পেছন ফিরে অনুরাধার দিকে বিশ্ময়ে চেয়ে বললো আপনি জানলেন কিভাবে?
-হুম জানতে পারলাম।
-গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করেন নাকি?
-ধরুন তাই।
-ওরে বাবা তাইলে তো আমার সবই জেনে গেছেন?
-তা অনেক কিছুই জেনেছি বটে তবে এখন চলেনতো।জুনায়েদ বাইক ছেড়ে দিল পনের মিনিটের মধ্যেই ক্যাম্পাসে চলে এলো।আজ বেশ খানিকটা আগেই এসেছে অনুরাধা, এখনো প্রায় এক ঘন্টা বাকি ক্লাশের। এখনো বন্ধুরা কেউ আসেনি।বাইক থেকে নেমেই জুনায়েদকে জিজ্ঞেস করলো কই বললেন নাতো কোন ভার্সিটিতে পড়তে যাবেন?
-অস্ট্রেলিয়ার কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে।
-বাহ্ ওটাতো খুউবই ভালো ইউনিভার্সিটি তা কবে যাচ্ছেন?
-সব রেডি হলে সামনের মাসে বলে জুনায়েদ বাইক স্ট্রাট দিলো চলে যেতে যেতে অনুরাধা বললো বারে টাকাটা নিবেন না?
-গতকাল বেশি নিয়েছি আজ নিবো না।চলে যায় জুনায়েদ। অবাক হয়ে মোহগ্রস্তের মত তাকিয়ে থাকে।
এখন প্রায় প্রতিদিনই জুনায়েদের বাইকে ভার্সিটিতে যায় গল্প করে এভাবেই ওদের মধ্যে ধীরে ধীরে ভালবাসা জন্মায় তা প্রেমে গড়িয়ে যায় ভুলে যায় ওরা দু'জন দু ধর্মের মানুষ।ভুলে যায় ওদের পারিবারিক সংস্কৃতি। কিছুই ভাবেনা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি।ভালবাসায় মনের আরো কাছে চলে আসে দুজনে।ওরা সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ে করার এবং দু’তিনজন বন্ধুদেরকে নিয়ে কাজী অফিসেই বিয়েটা সেরে ফেলে তবে বিয়ের খবর কেউ ফাঁস করে না।ওরা সিদ্ধান্ত নেয় চেষ্টা করবে দুজনেই অস্ট্রেলিয়ায় যাবে একত্রে যদি অনুরাধা ভিসা না পায় তবে জুনায়েদ যাবার পর অনুরাধা দ্রুত যাবার চেষ্টা করবে। জুনায়েদের যাবার সময় হয়ে এলো দু সপ্তাহ পর ফ্লাইট। সব রেডি অনুরাধার মন ভীষণ ভীষণ খারাপ এর মধ্যেই বিভিন্ন দেশে করোনা দেখা দিয়েছে লকডাউন শুরু হয়েছে বাংলাদেশেও লকডাউন শুরু হলো জুনায়েদের যাওয়া হলো না।দুজনের দেখাও হয় না প্রতিদিন তবে মোবাইলে কথা চলে ঘন্টার পর ঘন্টা হঠাৎ একদিন জুনায়েদ কল করেও পায়না অনুরাধাকে জুনায়েদ বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় পরদিন ফোন করে কেউ ধরে না তবে কি অনুরাধার পরিবার জেনে গেছে বিয়ের কথা আর তাই তাকে মোবাইল থেকে দূরে রাখছে! তৃতীয় দিন ফোন করতেই রিসিভ হলো ওপাস থেকে কথা বলার আগেই জুনায়েদ অবিরাম বলতে লাগলো কেন ফোন ধরছো না,কেন দুদিন কথা বললে না তুমি জাননা তোমার কন্ঠ না শুনলে আমর মরে যেতে ইচ্ছে করে হঠাৎ মনে হলো ওদিক থেকে চাপা কান্নার শব্দ হ্যালো হ্যালো কি ব্যাপার কাঁদছো কেন অনু কি হয়েছে রাধা? ফুপানো শব্দে ওপাস থেকে বললো আমি রাধার মা বলেই আবার কান্না কয়েক সেকেন্ড পর আবার কান্না জড়িত কণ্ঠে বললো বাবা রাধাকে গতকাল ভোরে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে ওর অবস্থা ভালো না ও না বাঁচলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো!তুমি জুনায়েদ? জি বলে জুনায়েদ জিজ্ঞেস করে কোন হসপিটালে? রাধার মা হসপিটালের নাম বলতেই জুনায়েদ কল কেটে দিয়ে মোটর বাইক নিয়ে সোজা হসপিটালে।রিসিপশনে জিজ্ঞেস করলো অনুরাধা নামে একটা মেয়ে ভর্তি হয়েছে কোন ওয়ার্ডে।ছয় ফিট দূরত্বে কাচ দিয়ে ঘেরা নতুন রিসিপশনের ভেতর থেকে পুরো শরীর পিপিই দিয়ে ঢাকা লোকটি বললো ডান দিকে যেয়ে পেছনে করোনার জন্য আলাদা ওয়ার্ড খোলা হয়েছে তবে ওখানে কাওকে যেতে দেওয়া হয় না।জুনায়েদের কানে কোন কথা ঢুকলো না সে সোজা করোনা ওয়ার্ডে চলে এলো ওখানে দু'জন গার্ড দাড়িয়ে সে কাছে যেতেই ওরা হই হই করে উঠলো বললো দূরে যান দূরে যান যদিও ওর হাতে গ্লাভস মুখে ডাবল মাক্স তবু্ও। জুনায়েদ তার হাতের গ্লাভস খুলে গেটের দিকে যেতেই গার্ড দু'জন ইলেকট্রক শক খাবার মত ওর কাছ থেকে দূরে ছিটকে সরে গেলো ও ভেতরে ঢুকে খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও গেল অনুরাধাকে কাছে যেতেই একজন নার্স দৌড়ে এলো বললো এখানে ঢোকা নিষেধ ঢুকলেন কিভাবে নার্সের কথা না শুনে বসে পড়লো অনুরাধার বেডে।অক্সিজেন চলছে প্রায় নির্জীব শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে কারো বসার অনুভবে চোখ মেলে চাইলো অনুরাধা।ইতোমধ্যে একজন ডাক্তার ও দু'জন নার্স ওর দুদিকে পাঁচ ফিট দূরে ওকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে। জুনায়েদ অনুরাধার দিকে একটু ঝুকলো ইয়াং ডাক্তার কড়া ধমক দিয়ে বললো আপনি সরে যান এক্ষুনি নইলে পুলিশ ডাকবো সিনিয়র নার্স বললো সরে যান প্লিজ আপনারও নিশ্চিত করোনা হবে। হলে হোক বলে অনুরাধার করুণ মুখের দিকে আরেকটু ঝুকলো জুনায়েদ। অনুরাধার দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে দুহাত দিয়ে জুনায়েদকে জড়িয়ে ধরে কাঁপছে সে তার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে ।আর সহ্য করতে পারছে না জুনায়েদ ভাবছে অনুরাধার কষ্টটা ভাগ করে নেবে নিজে। সে এক হাতে একটানে নিজের মাক্স টেনে ছুড়ে ফেলে দেয় তা দেখে অনুরাধাও নিজের মুখে লাগানো অক্সিজেন মাক্সটি খুলে ফেলে,জুনায়েদ ঝটকরে অনুরাধার ঠোটে ঠোট লাগিয়ে গাঢ় চুম্বনে তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।ইতোমধ্যে তাদের চারিদিকে আরো দু'জন গার্ড এসে দাড়িয়েছে নবীন ডাক্তারটি গার্ডদ্বয়কে যুবকটিকে টেনে আনতে বলে গার্ডদ্বয় একটু এগুতেই সিনিয়ার নার্স হাতের ইসারায় ডাক্তারকে না করে মুখে বলে থাক এখন আর লাভ নেই যা হবার হয়ে গেছে ছেলেটি অলরেডি এফেক্টেড।জুনায়েদ চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিলো অনুরাধাকে তার চোখেও পানি গড়িয়ে পড়ছে অনুরাধাকে বলছে তোমাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকা নিষ্ফল মরলে দু'জনে এক সাথে মরবো বাঁচলে একসাথে।সিনিয়র নার্সের চোখেও জলের ধারা নেমে আসছে তাঁর মনে পড়লো হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত তাঁর স্বামী তাঁকে এভাবেই শেষ চুম্বন দিয়েছিলো।
এরপর যুবক যুবতীটির কি হয়েছিল কেউ খোঁজ করেনি কেউ তাঁদের খবর রাখেনি এই প্যান্ডামিকের সময় প্রতিদিন অসংখ্য লোকের মৃত্যু হচ্ছে কে কার খবর রাখে হয়তো তাঁরা দু'জন মৃত লাশের গননায় পড়েছে কিংবা সুস্থতার তালিকায়ও পড়তে পারে লেখক সে খোঁজ নিতে পারেনি।