আকাশ চৌধুরী। টগবগে গ্রাম্য যুবক। সবে কিছুদিন হলো এইচএসসি পাশ করে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়েছে। ক্লাসের সকলের সাথেই তার সুন্দর বন্ধুত্ব। তার স্কুল জীবনের বন্ধু জাফরও একই বিভাগে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু সে অন্তর্মুখী স্বভাবের। কাছের বন্ধু-বান্ধব ছাড়া বেশি মানুষের সাথে সে মিশতে পারে না। কোথা থেকে যেনো একটা আড়ষ্টতা ভাব এসে তার গলা চেপে ধরে। চাইলেও স্বাভাবিক হতে পারে না।
যখন দেখে আকাশ সকলের সাথে খুব সুন্দরভাবে বন্ধুত্ব করছে তখন সে খুব কষ্ট পায়। মাঝে মাঝে বন্ধুকে হিংসেও করতে থাকে। বিশেষ করে যখন আকাশকে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে দেখে।
তাদেরই এক ক্লাসমেট, অধরা। ঢাকার অভিজাত এলাকায় বসবাস। দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনই আকর্ষণীয়া। টাকাওয়ালা বাবার আদরের দুলালী। বখে এখনও যায়নি তবে উচ্চমাত্রার পাঙ্কু। পাজেরোতে চড়ে ক্যাম্পাসে আসে। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে খুব সদ্ভাব, আচরণে মনেই হবে না যে, তার বাবা দেশের প্রতিষ্ঠিত অন্যতম একটা গ্রুপ অব কোম্পানীর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর।
ক্যাম্পাস অনেকদিন থেকেই শান্ত আছে। ক্লাসগুলোও চলছে একদম ঘড়ির কাঁটা ধরে। পড়াশুনা এগুচ্ছে, ওদের সকলের বন্ধুত্বও গাঢ় হচ্ছে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে।
আকাশ ক্লাস শেষে লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়াশুনা করে। তার লক্ষ্য একটাই, তাকে সত্যিকারের মানুষ হতে হবে। মা'র দেখা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারলেই না নিজেকে যোগ্য সন্তান বলে মনে হবে। বাবা'র কথা তেমন একটা মনে পড়ে না। যখনই বাবাকে নিয়ে কিছু ভাবতে যায় কেবল অস্পষ্ট কিছু স্মৃতি আর মা'র কাছে শোনা গল্পগুলো যেনো জীবন্ত প্রতিক হয়ে চোখে ভাসে।
তার মতো তার বাবাও ছিলেন এক সন্তান। আকাশের বয়স যখন তিন বছর তখন চারদিকে শুরু হলো গন্ডগোল! মা'র কাছে আকাশ এমনই শুনেছিল। এখনও কিছুটা মনে করতে পারে গ্রামে অনেককেই বলতে শুনেছে দেশে নাকি গন্ডগোল হয়েছিল। বড় হয়ে আকাশ এখন মেলাতে পারে না মানুষ কেনো এত বড় একটা ঘটনাকে গন্ডগোল নামের ছোট্ট একটা শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। একটা শোষিত ও বঞ্চিত জাতির মুক্তির চেষ্টাকে কখনো গন্ডগোল নামের শব্দের মধ্যে আটকে রাখা রীতিমত শহীদদের আত্মার সাথে চরম বেঈমানী মনে হয়।
আকাশ এ সবের অনেক কিছুই মেনে নিতে পারে না। ছোটবেলা থেকেই সে মা'র কাছে শিখেছে ধর্ম ছাড়া কর্ম হয় না। সেও যথাসাধ্য চেষ্টা করে শরীয়তের বিধিবিধান মেনে চলতে। সারাদিন ক্লাস, লাইব্রেরী ওয়ার্ক, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কিছু সময় খোশগল্প অথচ এর মাঝেও পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতে আদায়ে তার কোনো গাফিলতি হয় না। এজন্য তাকে অনেকেই পছন্দ করে ও ভালোবাসে।
একদিন সে লাইব্রেরীতে বসে কিছু জরুরী পড়া নোট করছিল। হঠাৎ করে কেনো জানি, বাবার স্মৃতি এসে উঁকি দিতে শুরু করল। মা'র কাছে শুনা গল্প কিছুটা আবছা স্মৃতি।
২৫ মার্চের কালোরাতের পরদিন ২৬ তারিখেই তার বাবা আব্দুর রহমান সাহেবকে গ্রেফতার করে পাকবাহিনী। তিনি সরকারী চাকুরী করতেন। গতরাতের ভয়াবহ ঘটনাকে তিনি মেনে পারছিলেন না। সকালে অফিসে সহকর্মীদের সাথে সেসব আলোচনা করছেন। চারদিকে থমথমে অবস্থা। কখন কি হয় বলা যায় না, সকলেই আতঙ্কিত।
তাঁরই এক সহকর্মী বকুল মোল্লা, যিনি তাঁকে হিংসা করতেন, সময় সুযোগ পেলেই তাঁর নামে কল্পিত রটনা রটাতেন, তিনি গতরাতের ঘটনাকে সমর্থন করে দু'চারটা কথা বললেন। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে না পারলেও আব্দুর রহমান সাহেব তা সহ্য করতে পারলেন না। তিনি বললেন, নিরীহ, নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলা শুধু পশুরাই করতে পারে। যদি কোনো মানুষ করে, তাহলে তাকে কাপুরুষ বললে প্রকৃত কাপুরুষরা লজ্জা পায়। কেননা এটা তাদের চেয়েও নিকৃষ্ট কাজ। এরপর কিছু বাদানুবাদ, অবশেষে অন্য সহকর্মীদের মধ্যস্থতায় তখনকার মতো সমাধান।
পরে তিনি জেনেছিলেন, বকুল মোল্লা ঐদিনই পাকবাহিনীর এক হাবিলদারের কাছে সংবাদটা পৌঁছে দিয়েছিলেন আর তার প্রেক্ষিতে সন্ধ্যায় তাকে বাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় হানাদার বাহিনী।
গ্রেফতারের তিন দিন পর। গভীর রাত........(চলবে)
নেক্সট
Replyআসছে, সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
Replyবুঝলাম না কোথায় কি
Replyএটা ধারাবাহিক লেখা। এজন্যে বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। সাথেই থাকুন, সব জানতে পারবেন।
Replyধারাবাহিক লেখা। সঙ্গেই থাকুন, সব জানতে পারবেন।
ReplyNext
Replyকালকে যাবে আশা করি।
Reply