বাসাবোর এই দোকানটায় খুব ভালো সাজগোজের জিনিস পাওয়া যায়। আবির বাইরে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভাবছে ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না। আসলে এই দোকানটায় মেয়েদের খুব ভীড়। পুরুষ নেই বললেই চলে। কিন্তু ওকে তো ভেতরে ঢুকতেই হবে। কে জানে সবাই ওকে দেখে হাসি-তামাশা করবে কিনা। সে যা ইচ্ছা করুক। এইসব বিষয়ে গোয়েন্দাদের বেশি মাথা ঘামাতে নেই। কাজের জন্য যদি একটু কারো হাসির খোরাক হতে হয়, হলোই বা ! তাতে কি এলো গেলো। অনেক ভেবে শেষ পর্যন্ত ভেতরে ঢুকলো আবির। একটা দিকে দেখলো ভীড় নেই বললেই চলে। ও সেদিকটায় গেলো আর দেখলো ওর যা যা প্রয়োজন সবই এখানে আছে। তাড়াতাড়ি ও সেগুলো কিনে নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে গেলো।
শুভ বাড়িতেই আছে। এই সময় ওর তেমন কাজ নেই। যদিও সামনে তার ল ফাইনাল পরীক্ষা। পড়তে বসা দরকার। কিন্তু পড়ায় যে একদমই মন নেই। এই হয় আসলে। নতুন কেস আসলে ওর পড়া হয় না। দিনরাত শুধু কেসটা নিয়েই ভাবতে থাকে।
আবির সেই যে গেছে এখনো ফিরছে না। এদিকে শুভ বাড়িতে বসে টেনশন করছে। কে জানে কোথায় গেলো সে। "একটা জিনিস তো আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না, হাসপাতাল যদিও জড়িত থাকে এই কেসে কিন্তু যারা মারা গেছে তাদের পরিবার কেনো কিছু জানায়নি থানায়? কিসের ভয়ে? নাকি কেউ ওদেরকে ইচ্ছে করেই ভয় দেখিয়ে থামিয়ে রেখেছে?
মনে মনে ভাবছে শুভ। আসলেই বিষয়টা বেশ জটিল। এর আগে কিছু জটিল কেস পেয়েছে ওরা। কিন্তু এতটা জটিল কোনো কেসই ছিলো না। ঘটনা কোন দিক দিয়ে কোথায় যে যাচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে না।
এইতো বেশ কয়েকদিন আগে রাতুল খানের বাড়িতে অদ্ভুত ধরণের হুমকি দিয়ে চিঠি আসতো। শেষে আবির ভাই-ই বের করলো যে, রাতুল খান নিজেই বাবার সম্পত্তির জন্য এমন জঘন্য কাজ করেছিলেন।
সে যাই হোক। এবারের কেসটা খুব ভয়ংকর আর জটিলতায় ভরপুর। নয় নয়টা সুইসাইডাল কেস হওয়া সত্তেও হাসপাতালের লোকজন, প্রশাসন এমনকি ভিক্টিমদের বাড়ির লোক অবধি ভাবলেশহীন! হাসপাতালের একটা বড় অংশ যে এই কাজের সাথে জড়িত তাতো বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু কেন? কি উদ্দেশ্যে এই জঘন্য কাজ গুলো করছে তারা? "নাহ্, আর ভাবা যাচ্ছে না। যাই ভাবছি মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে।
আবির ভাই যে কীভাবে একসাথে এতো কিছু সামলায় কে জানে। কিন্তু সে তো গেছে অনেকক্ষণ। এখনো কেনো ....
"ক্রিং ক্রিং .....ক্রিং ক্রিং ......" হঠাৎই ফোন বেজে উঠলো শুভর।
"হ্যালো!
....
জ্বি বলছি। বলুন
......
আপনি কে কথা বলছেন?
.....
ঠিক আছে। কাল সকাল ১০ টায় চলে আসুন।
.......
আচ্ছা।"
ফোনটা রেখে বারান্দায় এলো শুভ। কাল সকালে একজন আসবে বললো। খুব নাকি জরুরি কাজ তার। আবার নতুন কেস নাকি কে জানে! না, আবির ভাই আগে আসুক। দেখি কী বলে সে।
এমন সময় দরজায় বেল বাজলো। শুভ গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো একজন লম্বা চওড়া লোক কিন্তু মাথায় মেয়েদের মতো লম্বা চুল। আগে কখনো দেখেছে বলে তো মনে পড়ছে না।
- কে আপনি?
- তুইও আমাকে চিনতে পারলি না? তাহলে বাইরের মানুষও চিনতে পারে নি নিশ্চয়ই।
- আবির ভাই! তুমি? মাই গড! আসলেও চিনতে পারিনি। কি বেশ ধরেছো সত্যি!
- আরে দরজা আগলে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? সর, ভেতরে ঢুকতে দে।
- হ্যাঁ, হ্যাঁ। চলো।
রাতে খাবার টেবিলে বসে শুভ আবিরকে জিজ্ঞেস করে,"কোথায় গেছিলে বলো তো? সেই যে কখন গেলে এলে এই একটু আগে। কী কী করলে সারাদিন? কিছু ক্লু পেলে?
- আরে, আস্তে আস্তে প্রশ্ন কর। এতো প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটার উত্তর দেবো?
- আচ্ছা, আস্তে ধীরেই বলো।
- গিয়েছিলাম তো অনেক জায়গায়। তাই দেরি হয়েছে।
- কোথায় গিয়েছিলে?
- প্রথমে গেলাম হাসপাতালে। দেখলাম যে আজকে কেমন পরিবেশ। দেখলাম আজকেও বেশ কয়েকজন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। তারমানে যারা এই কর্মকান্ড চালাচ্ছে, তারা পরবর্তীতে এদের মধ্যে থেকে কাউকে তাদের টার্গেট বানাবে। আমাদের কাল অনেক কাজ আছে কিন্তু শুভ।
- আচ্ছা আবির ভাই, যারা ভর্তি হচ্ছে, তারা কি জেনে শুনেই এই কাজ করছে? মানে তারা কি জানে যে এই হাসপাতালে যে ভর্তি হয়, সেই কোনো না কোনো ভাবে সুইসাইড করে?
- দেখ, নিজে যেচে কেইবা আর মরতে চায় বল? কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা।
- কি ভাবছো?
- ভাবছি যে এই অসহায় মানুষদের জীবন নিয়ে কার কী লাভ? আর এরাই বা কেনো সুইসাইড করে? দেখ, হাসপাতালে সবাই তো আসে নিজেকে সুস্থ করে তুলতে। এখন সেইখানে এসেই কেউ নিজেকে কেনই বা শেষ করবে!
- আর কোথাও গেছিলে?
- হ্যাঁ, তুই বললি না যে ৯টা সুইসাইড হয়েছে? ৯ টা না। ১৩টা সুইসাইডাল কেস হয়েছে।
- হোয়াট? ১৩টা?
- হ্যাঁ, ১৩টা।
- কিন্তু…
- কিন্তু কথা হচ্ছে যে কোনো ভিক্টিমের মানে যারা মারা গেছে আর কি, তাদের কোনো তথ্য হাসপাতালের লিস্টে নেই। আরো বড় কথা কি জানিস? এদের পরিবারেরও কোনো খোঁজ নেই। এদের বাড়ির লোক কারা, কোথায় থাকে কিছুই বের করতে পারলাম না এখন পর্যন্ত।
- অদ্ভুত তো!
- থানায়ও গিয়েছিলাম বুঝলি। থানার অফিসারের কথাও সুবিধার মনে হলো না। উনাকে আমি যখন জানালাম যে ১৩টা সুইসাইডাল কেস হয়ে গেছে এর মধ্যে, উনি চমকে না গিয়ে ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বহীনভাবে দেখলেন। আর সেই ঠাট্টাই করে গেলেন।
- আমার কি মনে হয় জানো আবির ভাই? এই অফিসারও মনে হয় এই কাজের সাথে যুক্ত আছে। নাহলে বলো না, ১৩টা খুনের কথা শুনেও উনি এমন কীভাবে করতে পারেন?
খাবার থেকে মুখ তুলে আবির তাকালো শুভর দিকে। কি বললি? খুন?
- আমার কাছে এখন তাই মনে হচ্ছে। নাহলে হাসপাতালে যারা যাচ্ছে তারা কেনোই বা সুইসাইড করবে বলো?
- হুম, সেটা তো ভাবছিই। আচ্ছা খেয়ে নে।
খাওয়া শেষে শুভ’র হঠাৎই বিকালের ফোন কলের কথা মনে পড়লো। উফফ, আবির ভাইকে তো বলাই হয়নি ফোনের কথাটা। যাই বলে আসি।আবির ভাইয়ের ঘরে ঢুকে দেখি খাতায় কি যেনো আঁকাআঁকি করছেন। গভীর কিছু চিন্তা করলে এমনটাই করে সে। এই সময় কেউ তাকে ডাকে না। ডাকলেও সে সাড়া দেয় না। তাই শুভ না ডেকেই বের হয়ে এলো। বিছানায় এসে শুতেই ঘুমে গা এলিয়ে দিলো বিছানায় ।
পরেরদিন সকালে ১০ টায় বেল বাজলো ওদের বাড়িতে। শুভ এখনো ওঠেনি ঘুম থেকে। আবির অনেক আগেই উঠে গেছে। এই সময় সাধারণত বুয়াই আসে। কিন্তু আজ তো বুয়াকে আসতে মানা করে দিয়েছি। তাহলে এই সময় কে?
বেল বেজেই যাচ্ছে। শুভ কি উঠেনি ঘুম থেকে? আচ্ছা আমিই যাই।
" যাই .......। "
দরজা খুলতেই ..............
চলবে...............
চতুর্থ পর্ব কই?
Replyভালই। সামনের খন্ড দিন।
ReplyPeye jaben khub taratari ❤
ReplyPeye jaben Khub taratari
Replyগল্পের গতি কমে গেল কেন? এক জায়গায় না থেকে আরেক জায়গায় কেন?
Replyবুঝলাম না ঠিক ।
Reply