বাজারের লিস্টি..............রাকিব সামছ শুভ্র

মি আছি দারুন জ্বালায়। আমার বউ ভীষন ভুলো মনা। এই মাত্র বলে একটা একটু পরেই জিজ্ঞেস করলে বলে আরেকটা। এই ভুলে যাওয়া নিয়ে যে কি দিগদারিতে আছি, তা আর বলতে!

এইতো সেদিন বাহিরে যাচ্ছিলাম। একটা লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দিলো, সব্জি, সদাই, মাছ, মাংস মিলিয়ে গোটা বিশেক আইটেম। আমাকে বলবে না, বাজার করে আনতে! ও ভুলেই গেছে আর আমিও লিস্ট নিয়ে পাড়ার লাইফ ফার্মেসির ছেলেটাকে দিয়ে বললাম ওষুধ গুলো মিলিয়ে প্যাক করে রাখতে আমি অফিস থেকে যাবার সময় নিয়ে যাবো। ছেলেটা কত লক্ষ্মী! লিস্ট নিলো কিন্তু বলতে ভুলেই গেলো, স্যার আজতো শুক্রবার অফিস বন্ধ...
আমি কষ্ট করে বাস ধরে অফিসের সামনে এসে দেখি কলাপসিবল গেটে তালা। মেজাজ কেমন খারাপ হয় বলেন! প্রায় দশটা বাজছে এখনো পিয়নটা অফিসে আসেনি? ফোন দিচ্ছি কিন্তু ধরছেই না। আমি আবার বাসা থেকে বেরহবার সময় আমার অফিসের ব্যাগটা আনিনি আজ। ওটাতে তালার চাবি ছিলো। কি আর করা, ঘন্টা খানেক দাঁড়িয়ে থেকে মেজাজ খারাপ করে ফিরছি। সবগুলাকে কালই চাকুরি নট করে দেবো। ব্যাটারা লাটসাহেব হয়েছে এগারোটা বাজে অথচ অফিসে আসে না।

একটা রিক্সা নিলাম, অনেকটা সময় ফ্রি আছি, যাই কিছুমিছু বাজার করে নিয়ে গিয়ে বউকে চমকে দেবো। লিস্ট ছাড়াই আজ কেনাকাটা করবো। রাস্তায় যেতে যেতে হার্ডওয়্যার এর দোকান দেখে মনে পরলো ওষুধ গুলাতো নেয়া হয় নি। দোকানে ঢুকে আমার প্যাকেট চাইতে কি আশ্চর্য! দোকানী ছেলেটা হা করে তাকিয়ে আছে। দিলাম একটা রাম ধমক। এই ছোকরা সকালে যে লিস্ট দিয়ে গেলাম, তো আমার জিনিস কই? দোকানী আমতাআমতা করছিলো। বকাঝকা করে বের হবার আগে বলে আসলাম, এতো ভুলো মনা সেলসম্যান রাখলে ওদের ব্যবসা লাটে উঠবে। দোকানী বেচারা ধমক খেয়ে চুপসে গেছে, কিছুই বললো না। 

বাহিরে বের হয়ে দেখি আমি যে সিএঞ্জিতে এসেছিলাম! আমার দেরী দেখে ভাড়া না নিয়েই চলে গেছে। কি দিনকাল পরেছে? একটু অপেক্ষা করবে না প্যাসেঞ্জারের জন্য! মনে হয় বেশী ভাড়ার ট্রিপ পেয়েছে আর আগের জনের কথা ভুলে গেছে। আমি হাটতে শুরু করেছি এমন সময় এক রিক্সাওয়ালা পেছন থেকে ডাক দিচ্ছে স্যার স্যার বলে। কি তাজ্জব এখন কি রিকশাওয়ালারাও ভিক্ষাকে সাইড বিজনেস করে নিয়েছে নাকি। হাত বাড়িয়ে আছে! যাক কি আর করা গরীব মানুষ তাই বিশ টাকা দিয়ে দিলাম। কি আশ্চর্য ব্যাপার! সে দেখি উল্টা আমায় পাঁচ টাকা ফেরত দিলো! এখন কি ভিক্ষারও রেট ফিক্সড করে দিয়েছে নাকি? পনেরো টাকা!
আমি বাসার নীচে এসে দারোয়ানকে বললাম, বাজারের জিনিসগুলা উপরে উঠিয়ে দিয়ে আসতে। দারোয়ান কথা শুনেও রা করেনা। এই বেদ্দপ কথা কানে যায় না? সে হা করে তাকিয়ে আছে। 
স্যার আপনি যান আমি দিয়ে আসবো নে। 
লিফটে উঠে আরেক সমস্যা.. বাটনের পাশে লিখে রাখবে না? কোন ফ্লোরে কে থাকে? নাহ এদের আর শেখানো গেলো না। সবগুলো ফাঁকিবাজ। 

চারতলায় উঠে কলিংবেল টিপলাম। বাসার সামনের জুতার রেকটা কবে আবার চেঞ্জ করলো? বউ যে কখন কি কেনে আর কি ফেলে দেয় ওই জানে। নতুন জুতার রেকটা ফেলে দিছে কি অদ্ভুত?
দরজা খুলে দিলেন রহমান ভাবী। আরে ভাইসাব আসেন আসেন। কি আদিখ্যেতা! আমার বাসায় বেড়াতে এসে দরজা খুলে এমন ভাব যেনো আমি বেড়াতে এসেছি ওনার বাসায়! ঢুকে একি বউ দেখি এরই মধ্যে আমাদের সোফাটাও বদলিয়েছে। বুঝলাম না এসব কি সকালে দেখে যাই নি? ভাবী বললেন ভাইসাব বসেন চা দেই। রহমান ভাই এলেন হাত মিলালেন। আমি একটু কনফিউজড ওনারা সবাই আমার বাসায় কি করে? তাও আবার বেডরুম থেকে বের হলেন! মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি বিদায় নিয়ে পাঁচ তলায় এলাম। ভয়ে ভয়ে বেল টিপলাম। বউ দরজা খুলতেই হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। জুতার রেক, সোফা সব আগেরটাই আছে। 
বউ কিছু বলার আগেই দিলাম ঝাড়ি। তুমি বাসার ফ্লোর বদলেছো আমাকে জানাও নি কেন? আমিতো আমাদের বাসা ভেবে দোতলার রহমান ভাইয়ের বাসায় চলে গেছিলাম। কি একটা বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা হচ্ছিলো বলোতো।
বউকে বললাম, আচ্ছা তোমার হলোটা কি? সেই সকাল থেকে বলছি বাজারে যাবো! এখন পর্যন্ত বাজারের লিস্টিটাই দিলে না। তোমার তো আবার ভুলোমন। এখন বলবে এটা আনো পরে বলবে এটা আনলে কেন? আনতে বলেছি ওটা।
লিস্টিটা দাও... বউ দেখি বাজারের লিস্ট না এনে মনের ভুলে পাকেরঘর থেকে খুন্তি নিয়ে আমার দিকে আসছে। বলেন তো এই ভুলো মনা বউকে আমি কিভাবে সামলাই?

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট
Shawkat hossain
November 6, 2020 at 10:35 AM

ভাই এরকম আমার বেলাতেও হয়। এটা মনে হয় universal matter ��

Reply
avatar
হাসিনা খাতুন, বাসাবো, ঢাকা
November 8, 2020 at 4:23 PM

দারুন ভাই দারুন

Reply
avatar
December 9, 2020 at 12:35 PM

ঘটনা পরবর্তী অবস্থা ভয়াবহ হয়। অফুরান ধন্যবাদ ভাই

Reply
avatar
December 9, 2020 at 12:35 PM

কৃতজ্ঞতা জানবেন। সাথেই থাকবেন।

Reply
avatar
December 9, 2020 at 12:37 PM

ঘটনা পরবর্তী অবস্থা ভয়াবহ হয়। অফুরান ধন্যবাদ ভাই

Reply
avatar